প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেখানে শেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সেখানে শুরু

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

১৯১৮ সালের আজকের দিনে (১১ নভেম্বর) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতি টানে যুদ্ধে অংশ নেওয়া দেশগুলো। ভয়াবহ তাণ্ডবলীলার পর যেন আর যুদ্ধ চালিয়ে নিতে পারছিল না দেশগুলো। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আভাস দিয়েই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ করে।

১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক মাস আগে বসনিয়ার রাজধানী সারাযেভোতে অষ্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চ ডিউক ফার্ডিনান্ডকে হত্যার দায়ে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অষ্ট্রিয়া।

বিজ্ঞাপন

শুধুমাত্র এ হত্যা নয়, সে সময়ের ‘শিল্প বিপ্লব’ নিয়ে নিজেদের দাম্ভিকতা প্রকাশ করতে গিয়ে বিশ্বের বন্ধু দেশগুলো যুদ্ধে অংশ নেয়। এতে ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নেয় এ যুদ্ধ। দুই পক্ষে ভাগ হয় গোটা বিশ্ব।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Nov/11/1541934104867.JPG

বিজ্ঞাপন

ইতিহাস মতে, ‘সেন্ট্রাল পাওয়ার’ নামে জার্মানি, অষ্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ও বুলগেরিয়া জোটের বিপরীতে ‘ট্রিপল এন্টেন’ নামে সার্বিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইতালি, রুমানিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে অংশ নেয়। গোটা বিশ্বের প্রায় সাত কোটি সৈন্য অংশ নেয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে।

ক্রমেই এক দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আরেক দেশে যুদ্ধ বাধে। ধ্বংস, হত্যা চলে মানবতা ও জীবনের মায়াকে যুদ্ধের কারাগারে বন্দী রেখে। প্রেম, পরিবার, জীবন তুচ্ছতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।

নির্মম এ হত্যাযজ্ঞ চলে চার বছরের বেশি সময় ধরে। এক কোটিরও বেশি সেনা নিহত হয় সেই যুদ্ধে। ৮০ লাখের বেশি সাধারণ জনতার প্রাণহানি ঘটে। হাত পা হারানো ও অসুখে আক্রান্তের সংখ্যাও অগণিত। অবশেষে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর এসে যুদ্ধের সমাপনী বার্তা দেয় তৎকালীন বিশ্ব নেতারা।

কিন্তু যুদ্ধ শেষ মানেই সব শেষ নয়। নতুনভাবে কূটনীতি চালাতে হবে কে যুদ্ধে জয়ী? যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার বহন করবে কে? এসব নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে ইউরোপের দেশগুলোতে। আর যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সব ধরণের আক্রমণের তিরে বিদ্ধ হতে থাকে ইতিহাস অনুযায়ী বিশ্বযুদ্ধের ভিলেন খ্যাত দেশ জার্মানি। জার্মানরা যদি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক হয় তাহলে ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশ নিয়ে গঠিত জোট নায়ক।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Nov/11/1541934120806.JPG

যুদ্ধ শেষে ১৯১৯ সালে ভার্সাই চুক্তি নামে এক শান্তি চুক্তিতে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় জার্মানদের ওপর। এ শান্তি চুক্তিই ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সকল অশান্তির কারণ। চুক্তিতে দেশটিতে সেনা পালনে নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক, সামরিক তৎপরতা সবকিছুতেই নিষেধাজ্ঞা দেয় ব্রিটেন ফ্রান্স জোট ‘ট্রিপল এন্টেন’।

এমনকি জার্মানদের আওতায় থাকা কিছু অঞ্চলও পার্শ্ববর্তী দেশের দখলে দিয়ে দেওয়া হয়। চুক্তিটিতে সাময়িকভাবে সম্মতি দিলেও জার্মানরা নিষেধাজ্ঞাগুলোর পথে হাঁটতে পারেনি। বিপরীতে এ চুক্তির মাধ্যমে আস্তে আস্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মঞ্চ তৈরি হতে দেখেছে সারাবিশ্ব।

এ চুক্তির মাধ্যমে দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো জার্মানদের ফুঁসিয়ে তোলে। জাতীয়তাবাদ থেকে জার্মানদের প্রতিশোধ চেতনা প্রবলভাবে জাগ্রত হয়ে উঠে। একই সাথে হিটলারের উত্থান হয় ও জার্মানরা আরেকটি যুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে।

আর ইতিহাসবিদরাও মনে করেন ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোড়াপত্তন হয়। অথচ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যদি জার্মানদের উপর নির্মম নিষেধাজ্ঞা না দেওয়া হত তাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হত না। এ জন্যই ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন, যেখানেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ, সেখানেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু।