অতিরিক্ত ওমরা যাত্রী প্রেরণ: ক্ষুব্ধ মন্ত্রণালয়
পবিত্র ওমরাপালন শেষে দেশে না ফেরার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর এ সমস্যা অব্যাহত থাকলেও সমাধান মিলছে না। চলতি বছর ওমরা পালন করতে গিয়ে ফেরেননি অনেকেই। এজন্য হজ ও ওমরা এজেন্সিগুলোকেই দুষছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, এক শ্রেণির মুনাফালোভী ওমরা এজেন্সির এ ধরণের হীন কার্যকলাপের জন্য বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং ওমরা ব্যবস্থাপনা দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব কারণে, নীতি ভঙ্গ করে বাড়তি ওমরা যাত্রী প্রেরণ করায় এজেন্সিগুলোর ওপর ক্ষুব্ধ খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয়।
জাতীয় হজ ও ওমরা নীতি-হিজরি/২০১৮ খ্রি. নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৫শ’র বেশি ওমরা যাত্রী পাঠানো ও তাদের কেউ কেউ দেশে ফিরে না আসার অভিযোগে ৬৩টি ওমরা এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রোববারের (৩০ সেপ্টেম্বর) মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় হজ ও ওমরা নীতি-১৪৩৯ হিজরি/২০১৮ খ্রি. এর অনুচ্ছেদ নং- ২১.২.৩ ও ২১.২.৪ এর নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ওমরার নির্ধারিত কোটা ৫শ’র অধিক যাত্রী পাঠানো এবং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ১ হতে ৪৮ জন পর্যন্ত ওমরা যাত্রী বাংলাদেশে ফেরত না আসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হজ এজেন্সিগুলোর এমন অনিয়মে বেশ ক্ষুব্ধ ধর্ম মন্ত্রণালয়। বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও সংশোধন না হওয়ায় বিষয়টি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বছর যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, তাদের কোনো রকম ছাড় দিতে রাজি নয় মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ওমরা নীতি অনুযায়ী একটি এজেন্সি সর্বোচ্চ ৫শ’ জনকে ওমরা পাঠাতে পারবেন। কিন্তু এগুলো অনেকেই মানছেন না। অনেকেই পরিমাণের চেয়ে বেশি মানুষ ওমরায় পাঠাচ্ছে। হজের নিবন্ধন অনলাইনে করতে হলেও ওমরার ব্যাপারে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ২০১২ সালে পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণটা ছিল। হজপালনের জন্য হজ অফিস থেকে ডিও লেটার দিতে হয় দূতাবাসে। সেটি পাসপোর্টের সঙ্গে যায় এবং যাদের পাসপোর্টে ডিও দেওয়া হয় সেগুলোতেই ভিসা ইস্যু হয়। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে ওমরা পালনের ক্ষেত্রে এটি তুলে দেওয়া হয়। ফলে আমাদের কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, আমরা অনিয়মকারীদের শোকজ করেছি। কারণ হজে গিয়ে একজনও যদি ফিরে না আসে সে দায়িত্ব তো আমাদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সৌদির কিছু এজেন্সি যুক্ত হয়ে এ কাজগুলো করে। এটি প্রতিরোধে অনলাইনে নিবন্ধনের বিষয়টি করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করছি। তবে এ বছর কেউ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদেরে বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি বুধবার (২৬ সেপ্টেম্ব) সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ওমরায় যাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৩টি এজেন্সিকে শোকজ করা হয়েছে। তাদের অবশ্যই জবাব দিতে হবে। যারা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দশম জাতীয় সংসদের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩৮তম বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির সভাপতি নিজেই এ বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করেন। এ সময় ৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করার বিষয়টি কমিটিকে অবহিত করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর সংসদের প্রশ্নোত্তর পবে ‘অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে হজ ও ওমরা এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হবে’ বলে জানান ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের, এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে ধর্মমন্ত্রী সংসদকে জানান, ধর্ম মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, হজ অফিস এবং হাবের কঠোর তদারকির পরও চলতি বছরে হজ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত যেসব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং পাওয়া যাবে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাতীয় হজ ও ওমরা নীতিমালার ৩২(২) অনুচ্ছেদে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এসব শাস্তির মধ্যে হজ ও ওমরা এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত, অর্থদণ্ড ও জরিমানা এবং তিরস্কার ও সতর্ক করা। একই সঙ্গে পর পর তিন বছর কোনো এজেন্সির বিরুদ্ধে তিরস্কার ও সতর্ক করে নোর্টিশ দেওয়া হলে সংশ্লিস্ট হজ ও ওমরা এজেন্সির বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোর্টিশ ছাড়াই লাইসেন্স বাতিল করা হবে।