ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ লেবানন

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বৈরুতের রফিক হারিরি মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

বৈরুতের রফিক হারিরি মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

কয়েক বছর আগে খ্রিস্টান ধর্ম অবমাননার দায়ে তিন মুসলিম তরুণকে পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা আলে ইমরান মুখস্থ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন লেবাননের আদালত।

ওই তিন তরুণ হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের মা হজরত মরিয়ম আলাইহিস সালামের অবমাননা করেছিল। সূরা আলে ইমরানে হজরত মরিয়ম (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.)-এর সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। তাই ওই আয়াতগুলো তাদের মুখস্থ করার নির্দেশ দেওয়া হয় তাদের।

বিজ্ঞাপন

রায় প্রকাশের পর অনেকেই বলেছেন, এই রায় ন্যায়বিচারের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত এবং ইসলাম ও খিস্টান ধর্মের মধ্যে যে সম্প্রীতির শিক্ষা রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে।

লেবাননকে বলা হয় ‘মধ্যপ্রাচ্যের ইউরোপ।’ সেখানকার প্রকৃতি সৌন্দর্যের এক আধার। আবার লেবাননের তরুণ-তরুণীরাও অসম্ভব সৌন্দর্যপ্রেমী। সুন্দরকে তারা নানাভাবে লালন করেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞানসম্মতভাবে তারা মানুষের সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে চান। অনেক লেবানিজ মজা করে বলেন, ‘লেবাননের তরুণীরা সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার আগেও মেকআপ নেন।’ মূলত তারা সুন্দরের পূজারি এটাই বোঝানো হয়েছে।

লেবাননের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো- বৈরুতের রফিক হারিরি মসজিদ। এই মসজিদ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অপূর্ব নিদর্শনও। মসজিদের অদূরে রয়েছে খ্রিস্টানদের গির্জা। দুই ধর্মের অনুসারীরা পাশাপাশি তাদের ধর্ম পালন করছেন।

১৯৪৩ সালে লেবানন স্বাধীনতা লাভ করে অন্য রকম এক রাজনৈতিক পদ্ধতিতে, যাকে ‘কনফেসনালিজম’বলা হয়। ধর্মীয় জনসংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের এমন রীতি লেবানন ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

লেবাননে সুন্নি মুসলমানের অনুপাত ২৮ শতাংশ, শিয়া ২৮ শতাংশ, ম্যারোনেইট খ্রিস্টান ২২ শতাংশ, গ্রিক অর্থোডক্স ৮ শতাংশ, দ্রুজ ৫ শতাংশ ও গ্রিক ক্যাথলিক রয়েছে ৪ শতাংশ।

আগে খ্রিস্টানদের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়েও বেশি ছিল। কিন্তু তারা বিভিন্ন দেশে চলে যাওয়ায় তাদের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে কমে গেছে। লেবাননে দেখা যায়, ধর্মীয় সংস্কৃতির চমৎকার সমঝোতার অনুপম চর্চা। এমন উদাহরণ পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।

কারণ সরকারের সর্বোচ্চ পদগুলো আনুপাতিক হারে ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতাদের জন্য নির্ধারিত। কেননা লেবানন ধর্ম ও গোষ্ঠীগতভাবে বিভক্ত একটি রাষ্ট্র। এখানে খ্রিস্টান, সুন্নি ও শিয়া মুসলমানরা একত্রে বাস করে। গোষ্ঠীগুলো লেবাননের ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার ব্যাপারে চুক্তি করে নিয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী লেবাননের রাষ্ট্রপতি হবেন একজন ম্যারোনীয় খ্রিস্টান, প্রধানমন্ত্রী হবেন সুন্নি মুসলমান ও স্পিকার হবেন শিয়া। সংসদের আসনগুলোও অর্ধেক খ্রিস্টান ও অর্ধেক মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত।

লেবাননের বিচারিক ব্যবস্থায়ও বৈচিত্র্যের ছাপ দেখা যায়। এ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে উসমানি আইন, নেপোলিয়ান কোড, গির্জার আইন ও বেসামরিক আইনের সমন্বয়ে। লেবাননের আদালত তিন স্তরের। প্রথমত, প্রারম্ভিক পর্যায়, দ্বিতীয় আপিলের, তৃতীয় পর্যায় হলো- চূড়ান্ত ফয়সালা। সাংবিধানিক আদালত আইন ও নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়গুলো দেখে। এ ছাড়া সেখানে ধর্মীয় আদালত আছে। সেখানে সব ধর্মের লোকেরা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় আইন অনুযায়ী বিয়ে ও উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে বিচার পেতে পারে।