মৌলভীবাজারে একই স্থানে ইজতেমা ও তাফসির মাহফিল নিয়ে উত্তেজনা
মৌলভীবাজারে মাওলানা সাদের অনুসারীদের আঞ্চলিক ইজতেমার আয়োজনকে ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জানা গেছে, আগামী ৭, ৮, ৯ ও ১০ নভেম্বর মাওলানা সাদের অনুসারীরা মৌলভীবাজারের জগন্নাথপুর (আবাসন) এলাকায় আঞ্চলিক ইজতেমার আয়োজন করতে যাচ্ছেন। তাদের ইজতেমার আয়োজনের খবরে স্থানীয় আলেম-উলামারা ওই স্থানে তাফসির মাহফিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। পাল্টাপাল্টি এমন আয়োজনে উত্তেজনা বিরাজ করছে মৌলভীবাজারজুড়ে।
ইজতেমার আয়োজকদের দাবী, তারা ইজতেমার আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনিক অনুমোদনসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রস্তুতির কাজ করছেন।
পক্ষান্তরে ইজতেমার স্থানে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের ডাক দিয়েছেন জেলার ২৫০টি কওমি মাদরাসার মুহতামিম ও স্থানীয় আলেমরা। তারা জেলা ইজতেমা বন্ধের দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। সেই সঙ্গে ২৫০টি কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও আলেমরা ইজতেমা আয়োজনের মাঠের একই স্থানে একই তারিখে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের ডাক দিয়েছেন। তবে ওই স্থানে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজনের জন্য আলেমরা এখনও প্রশাসনের অনুমতি নেননি।
আলেমদের দাবী, মাওলানা সাদ সাহেবের বিষয়ে আলেমদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। তাই তার অনুসারীদের ইজতেমা আয়োজনে জেলার ওলামা-মাশায়েখদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আলেমরা ইজতেমা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে রোববার (২৮ অক্টোর) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আলেমরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গিয়াস উদ্দিন বলেন, তাবলিগ জামাতের মূলনীতি থেকে সরে কিছু ভাই এই ইজতেমার আয়োজন করতে যাচ্ছেন। অথচ সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কাকরাইলের মুরুব্বিরা জানিয়েছেন, দেশের কোথাও আঞ্চলিক ইজতেমা হবে না। কাকরাইলের সিদ্ধান্ত হলো- এ বছর ৬৪টি জেলার ইজতেমা টঙ্গিস্থ বিশ্ব ইজতেমার মাঠে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে দুই পর্বে। এবারের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ হলো- প্রথম পর্ব- ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মৌলভীবাজার জেলার সাথীরা অংশগ্রহণ করবেন। সুতরাং পৃথকভাবে জেলা পর্যায়ে ইজতেমা করার কোনো সুযোগ নেই। তাই মৌলভীবাজারের আঞ্চলিক ইজতেমা বন্ধ করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আলেমরা আরও বলেন, বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বেশিরভাগ আলেমরা একমত হয়েছেন যে, তিনটি মৌলিক কারণে মাওলানা সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা যাবে না। সেগুলো হলো- ১. কোরআন ও হাসিদের মনগড়া ব্যাখ্যা, ২. তাবলিগের গুরত্ব বুঝাতে গিয়ে তাবলিগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাওফ ইত্যাদিকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও ৩. পূর্ববর্তী তিন আমির (হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ.-এর নীতি ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়া।
জেলা ইজতেমা হলে ধর্মীয় ব্যাপারে মাওলানা সাদ সাহেবের ভ্রান্ত বিশ্বাস এবং দৃষ্টিভঙ্গিও প্রচার হবে, যা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যায় না। তাই এই ইজতেমা বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জেলা ওলামা পরিষদের সহ-সভাপতি মাওলানা সামছুদ্দোহা, মাও. জামিল আহমদ, মুজাহিদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, মাও. রশিদ আহমদ, ফারুক আহমদ ও হাফেজ সুলাইমান আহমদসহ জেলার বিভিন্ন মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও আলেম-উলামা।