তোমাদের জন্য প্রার্থনা ও ভালোবাসা

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

এইসব অমলিন মুখ এখন বিশ্ব শান্তির প্রতীক। বিশ্বের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের মুখ ভাসছে এইসব বিদেহী মানুষের মুখচ্ছবিতে। সন্ত্রাস, ঘৃণা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক আইকন এখন এইসব মুখগুলো।

মুখগুলো বয়সী প্রবীণের। নিষ্পাপ শিশুর। লাজুক তরুণীর। নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে প্রার্থনারত মানুষর মধ্যে যে ৫০ জন ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণ দিয়েছেন, মুখগুলো শুধু তাদেরই নয়, মুখগুলো হিংসার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রতিটি মানবিক মানুষের।

বিজ্ঞাপন

বিনা উসকানি ও প্ররোচনায় শান্তিপূর্ণভাবে প্রার্থনারত যে মানুষগুলোকে হত্যা করেছে বর্ণবাদ, ঘৃণা ও হিংসার অপশক্তি, সে মানুষগুলো তাদের জীবন দিয়ে এনেছেন শান্তির সুবাতাস। তাদের মৃত্যুর মাত্র ছয় দিনের মাথায় নিউজিল্যান্ড সে দেশে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করেছে। বিশ্বের আরও বহু দেশ অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করার কথা ভাবছে। এইসব মানুষ নিজের জীবন দিয়ে অনাগতকালের বহু মানুষের সম্ভাব্য মৃত্যু ঠেকিয়ে দিয়েছেন। সন্ত্রাস ও অস্ত্রের বিরুদ্ধে জ্বলন্ত-নিরব প্রতিবাদ এই মুখগুলো।

এই মুখগুলো বদলে দিয়েছে আধুনিক দুনিয়ার চিন্তা ও চেতনা। সন্ত্রাসের কথিত অভিযোগ করে মুসলিমদের অভিযুক্ত করার অন্যায় প্রবণতাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন তারা নিজের জীবন দিয়ে। ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, সে বাণী আজ পৃথিবীর কেন্দ্র ও প্রান্তে-প্রান্তে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে এইসব মানুষের আত্মদানের আবহে।

বিজ্ঞাপন

নিউজিল্যান্ড ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মানুষ দলে দলে এসে সমবেত হয়েছেন এদের সমর্থনে। মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে গেছেন। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরিয়ে দিয়েছেন মৃত্যদের স্মৃতিচিহ্ন। তাদের মতো হেজাব পড়েছেন। প্রার্থনা করছেন। আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিচ্ছেন। সেজদায় লুটিয়ে পড়ছেন ভূমিতলে।

কেবল সরকার প্রধান বা কর্তাব্যক্তিরাই নন, সাধারণ মানুষের অন্তর কেঁদে উঠেছে এইসব নিহত মানুষের জন্য। এদের অম্লান মুখচ্ছবির দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিক্ত হচ্ছে সারা দুনিয়া। মৃত্যরাও কখনও কখনও জীবিতের চেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাব বিস্তারী হতে পারেন, প্রমাণ দিলেই নিউজিল্যান্ডের এইসব নিহত মুখগুলো।

তাদের মৃত্যুর পর আজ প্রথম শুক্রবার (২২ মার্চ) এসেছে ভীষন অন্য রকম ভাবে। মুসলমানদের পবিত্র দিন এই শুক্রবারটি পৃথিবীর ইতিহাসে শুধু মুসলমানদেরই নয়। এই শুক্রবার সকল শান্তিকামী মানুষের। এই শুক্রবারে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়ার সবগুলো মাধ্যমে ভাসছে আজানের ধ্বনি, পবিত্র কোরআনের সুরেলা সুর। সকলের পথ যেন এই শুক্রবারে এসে মিলেছে সেই মসজিদে, যেখানে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল শান্তিতে প্রার্থনারত এইসব মুখের মানুষগুলোকে।

এই শুক্রবারে বিশ্বের সকল প্রার্থনাগাহ আপ্লূত হবে এইসব মানুষের জন্য প্রার্থনার বাণীতে। এই শুক্রবারে প্রতিটি হৃদয় ভেসে যাবে এইসব মানুষের জন্য অপরিসীম ভালোবাসায়। শান্তির জন্য নিবেদিত ধর্ম ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী উচ্চারিত হবে পৃথিবীর সর্বত্র। ঘৃণা ও হিংসার বিরুদ্ধে উচ্চকিত হবে শান্তির ধ্বনি।

সন্ত্রাস, ঘৃণা, জঙ্গিবাদের জন্য একতরফা ও অন্যায় ভাবে যে মুসলিমদের অভিযুক্ত করা হতো, তারা জীবন দিয়ে প্রমাণ করলেন শান্তি ও কল্যাণের আদর্শ। প্রতিষ্ঠা করলেন এই সত্য যে, তারাই শান্তির বার্তাবহ, কল্যাণের অনুগামী। ক্ষমা করে দিয়ে জানালেন মানবিকতার বার্তা। পৃথিবীকে দেখালেন অনুপম ত্যাগের আদর্শ। এইসব মুখচ্ছবি হতাশ, সংক্ষুব্ধ, আত্মঘাতী পৃথিবীর সামনে রাখলেন প্রাণময়তার দৃষ্টান্ত। জীবনের মতো মরণেও তারা তৃপ্তি আর হাসিতে জানিয়ে দিলেন কল্যাণকর পৃথিবীর আহ্বান।

এই শুক্রবারে, প্রতিটি দিনে, সন্ত্রাস ও ঘৃণার কাছে শান্তি ও কল্যাণের বাণী উচ্চকিত করে জীবনদানকারী এইসব শুদ্ধতম মানুষের জন্য আমাদের প্রার্থনা। এইসব নিষ্কলুষ মানুষের জন্য আমাদের হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা। তোমাদের জীবন দান আগামীর দিনগুলোকে সুন্দর ও শান্তির পৃথিবী গড়ার আলোকবর্তিকা হয়ে জ্বলজ্বল করবে কাল-মহাকালে, প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে, ইতিহাসের পাতায় পাতায়।   

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম