সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার স্থান নেই ইসলামে

  • ইসলাম ডেস্ক
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি চার্চ, ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি চার্চ, ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। গোটা শ্রীলঙ্কা এখন শোকে স্তব্ধ। শোকের ছায়া বিস্তৃত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা বিশ্বে। দক্ষিণ এশিয়ায় এক দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে প্রাণহানিকর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা।

হামলাকারী যারাই হোক, তারা যে মানবতাবিরোধী, সভ্যতাবিরোধী এবং ধর্মবিরোধী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মানবতার সকল মাপকাঠি, সভ্যতার ঐতিহ্য-সংস্কৃতি এবং সকল ধর্মের মূল্যবোধ মানুষ হত্যার বিরোধী। সুতরাং যারা এই সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তারা মনুষ্য পদবাচ্য হওয়ার সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। তাদের নির্মূলকরণ ছাড়া বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন

ইসলামকে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ-সঙ্ঘাত সৃষ্টি ও অব্যাহত রাখাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিচক্রের মূল লক্ষ্য।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আল কায়েদা ও আইএস প্রভৃতি সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলাম ও মুসলমানদের যত ক্ষতি করেছে, সাম্প্রতিককালে আর কেউ তা করতে পারেনি। তাদের সন্ত্রাসী হামলায় যত মানুষ হতাহত হয়েছে, পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, তাদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যায় বেশি।

বিজ্ঞাপন

ইসলাম অর্থই শান্তি। বিশ্বে শান্তি, শৃঙ্খলা, সৌহার্দ্য, সুষ্ঠু সহাবস্থান নিশ্চিত করা ইসলামের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য এবং মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার কোনো স্থান নেই। বিশৃঙ্খলার কোনো প্রশ্রয় নেই। ইসলাম বিনা কারণে মানুষ হত্যা নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘এই কারণেই বনি ইসরাইলিদের এই বিধান দিলাম, নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করার কারণ ব্যতীত যদি কেউ কাউকে হত্যা করে তবে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল। যদি কেউ একটি প্রাণ রক্ষা করে তবে সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। অতঃপর যদিও তাদের কাছে আমার রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছিল, এরপরও তাদের মধ্যে অনেকেই সীমালঙ্ঘনকারী থেকে গেছে।’ -সূরা মায়েদা: ৩২

এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, হত্যাকাণ্ড সীমালঙ্ঘন করার মতো গুরুতর অপরাধ, যার শাস্তি জাহান্নাম; যা মুসলমানরা কোনোভাবেই করতে পারে না। স্বেচ্ছায় কোনো ঈমানদারকে হত্যা করার বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো ঈমানদারকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম, যে চিরকাল সেখানেই থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য কঠিন শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। -সূরা নিসা: ৯৩

সূরা নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং একে অন্যকে হত্যা করো না।

পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, (ঈমানদার বান্দা তারাই) যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না এবং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না। -সূরা ফুরকান: ৬৮

মহান আল্লাহ ফেতনা-ফাসাদ হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, ...বস্তুত ফেতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। -সূরা বাকারা: ১৯১

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা। -তিরমিজি

হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কবিরা গোনাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ হলো আল্লাহতায়ালার সঙ্গে শিরক করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা কথা বলা। -সহিহ বোখারি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষের প্রথম বিচার করা হবে রক্তপাত সম্পর্কে। বিদায় হজের ভাষণে রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, হে মানুষ! ঈমানদাররা পরস্পরের ভাই। সাবধান, তোমরা একজন আরেকজনের হত্যা করার মতো কুফরি কাজে লিপ্ত হয়ো না।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোক আমরা সন্দেহাতীতভাবে বলতে পারি, ইসলাম এসেছে শান্তির জন্য, শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য নয়। যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাস করে, মানুষ হত্যা করে, বিশৃঙ্খলা-হানাহানি সৃষ্টি করে তারা মুসলমান হওয়ার অযোগ্য। তারা ঘাতক-সন্ত্রাসী, তাদের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। তাদের সম্পর্কে তাই সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। তাদের প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার দায়িত্বও মুসলমানরা এড়িয়ে যেতে পারে না।