হাদিসে আছে, প্রতিটি আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিয়তবিহীন কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে না, তা দ্বারা দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। তাই প্রতিটি আমল শুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত নিয়ত। অন্য সব ইবাদতের মতো রোজার জন্যও নিয়ত করা ফরজ। রমজান মাসের প্রতিটি রোজা যেহেতু পৃথক পৃথক একেকটি আমল সেহেতু রমজানের প্রতিদিনের রোজার জন্যও পৃথক পৃথক নিয়ত শর্ত।
মনের স্থির সংকল্পকে নিয়ত বলে। নিয়ত করতে হয় মনে মনে। মনের সংকল্পবিহীন নিছক মুখে কিছু আবৃত্তি করার নাম নিয়ত নয়। তবে মনের সংকল্প স্থির হওয়ার পর তা মুখেও বলা যেতে পারে। রোজার নিয়ত নামে যে আরবি গদ সমাজে প্রচলিত আছে তা হাদিসে বর্ণিত হয়নি। এমনকি ফিকহের প্রাচীন প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীতেও এ বাক্যের কোনো অস্তিত্ব নেই। অতএব, উক্ত আরবি বাক্যগুলো বলার মধ্যে বাড়তি কোনো সওয়াব ও ফজিলত নেই।
বিজ্ঞাপন
রমজানের রোজার নিয়ত করার শুরুর সময় হলো আগের দিনের সূর্যাস্ত। অর্থাৎ রোববারের রোজার নিয়ত করা যাবে শনিবারের সূর্যাস্তের পর থেকে। শনিবারের সূর্যাস্তের পূর্বের নিয়ত রোববারের রোজার জন্য যথেষ্ট হবে না।
আর রমজানের রোজার শেষ সময় হলো দিনের মধ্যভাগ। অর্থাৎ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে সমান দু’ভাগ করলে প্রথম ভাগ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নিয়ত করার সুযোগ থাকে। সুবহে সাদেকের সময় যদি হয় ৩টা ৫০ মিনিট আর সূর্যাস্তের সময় যদি হয় ৬টা ৪০ মিনিট তাহলে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট হলো সে দিনের রোজার নিয়তের শেষ সময়। সুবহে সাদেক থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যদি রোজা ভাঙার কোনো কারণ পাওয়া না যায় তাহলে বেলা ১১টায় রোজার নিয়ত করলেও রোজা হবে। তবে সুবহে সাদেকের পূর্বেই নিয়ত করা উত্তম।
বিজ্ঞাপন
একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের এক লোককে বললেন, মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দাও, যে খাবার খেয়েছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে থাকে। আর এখনও যে কিছুই খায়নি, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, আজ আশুরা দিবস। -সহিহ বোখারি: ২০০৭
আগের দিনের সূর্যাস্তের পূর্বেই কেউ অজ্ঞান হয়ে গেল আর পরের দিনের মধ্যভাগের পর জ্ঞান ফিরে পেল তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে না। কেননা নিয়ত করার সময়ের মধ্যে সে নিয়ত করতে পারেনি।
কেউ সেহরি খেতে পারলা না। এমতাবস্থায় সকাল থেকে দোদুল্যমান থাকল, রোজা রাখবে কিনা। স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছিল না। এমতাবস্থায় যদি রোজা ভাঙার কোনো কারণ পাওয়া না যায় আর দিনের মধ্যভাগের আগেই রোজা রাখার স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে তাহলেও তার রোজা হবে।
রাতে নিয়ত করলে এভাবে মনে মনে সংকল্প করবে যে, আল্লাহর জন্য আজ রোজা রাখব। আর সুবহে সাদেকের পর দিনের মর্ধভাগের পূর্বে নিয়ত করলে মনে মনে এভাবে সংকল্প করবেন, আল্লাহর জন্য আজ রোজা রাখলাম। কোনো কোনো ইসলামি স্কলার মনে করেন, রোজার উদ্দেশ্যে সেহরি খাওয়াই নিয়তের জন্য যথেষ্ট।
হজ একটি ফরজ ইবাদত। এটা হালাল টাকায় পালন করা জরুরি। শুধু হজ নয়, কোনো ইবাদতই হারাম উপার্জন দিয়ে পালন করা যায় না।
অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ দ্বারা হজ করা অন্যের সম্পদ জবরদখল করে মালিক হওয়া কবিরা গুনাহ ও মারাত্মক অপরাধ। তাই ওই ব্যক্তি হজের লাভ ও উদ্দেশ্য থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ হাদিস শরিফে আছে, এক ব্যক্তি বহুদূর থেকে সফর করে বায়তুল্লাহ শরিফে পৌঁছে, যার চুলগুলো এলোমেলো এবং শরীর ময়লাযুক্ত, সে সেখানে- ‘হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! বলে চিৎকার করে দোয়া করে, অথচ তার অন্ন, বস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী—সবই হারাম, তাহলে কিভাবে তার দোয়া কবুল হবে? অতএব, হজে যাওয়ার আগে নিচের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত-
১. কারো কোনো হক বা পাওনা থাকলে তা আদায় করা। ২. কারো আমানত (গচ্ছিত সম্পদ) থাকলে তা পরিশোধ করা। ৩. কারো কোনো জিনিস অবৈধভাবে দখল করলে বা আটকে রাখলে তা ফেরত দেওয়া, অন্যথায় তা শুধু নামের হজ হবে। -ফতোয়ায়ে রহিমিয়া : ৩/১১৬
ঘুষখোরের হজ কোনো ব্যক্তির বেতন হালাল এবং সে ঘুষ গ্রহণ করে, তাহলে সে যদি বেতনের টাকায় হজ করে তার হজ বৈধ হবে। তবে হজ কবুল হওয়ার জন্য হারাম উপার্জন ঘুষ খাওয়া থেকে তওবা করতে হবে। কারণ হাদিসে আছে, যে শরীরের খাদ্য হারাম, জাহান্নামের আগুন তার বেশি উপযোগী। আর যদি ঘুষের অর্থ দিয়ে হজ করা হয়, তাহলে তা জায়েজ হবে না। কারণ ঘুষের টাকা মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া আবশ্যক।
আল্লাহতায়ালা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন দ্বিন ইসলামকে বিজয়ী ও পূর্ণতা দানের জন্য। যখন দ্বিন ইসলাম বিজয় ও পূর্ণতা লাভ করে তখন তিনি তার বিদায়ের কথা অনুভব করেন। তাই তিনি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে ইয়েমেনের গভর্নর নিযুক্ত করে প্রেরণকালে বলেছিলেন, ‘হে মুয়াজ! সম্ভবত এ বছরের পর আমার সঙ্গে তোমার আর সাক্ষাৎ হবে না। হয়তো তুমি আমার মসজিদ ও আমার কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে।’ নবী কারিম (সা.)-এর এ কথা শুনে হজরত মুয়াজ (রা.) প্রিয় নবীর বিদায়ের কথা ভেবে কাঁদতে লাগলেন।
পবিত্র হজ গমনের বাসনা নবী কারিম (সা.) দশম হিজরির শেষার্ধে যখন পৃথিবীতে তার অবস্থানের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার বিষয়টি অনুভব করলেন তখন তিনি সমগ্র বিশ্বের মানুষের সামনে শরিয়ত ও আখলাকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে পেশ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন। আল্লাহতায়ালাও চেয়েছিলেন তার হাবিবকে দীর্ঘ ২৩ বছরের দ্বিন প্রচারের দুঃখ-কষ্ট ও অত্যাচারের ফল দেখাবেন। অতঃপর আল্লাহতায়ালা তার রাসুল (সা.)-কে হজের অনুমতি প্রদান করেন।
নবী কারিম (সা.) অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে হজে গমনের ঘোষণা দেন। নবী কারিম (সা.)-এর ঘোষণা শুনে সাহাবায়ে কেরাম দলে দলে এসে সমবেত হতে থাকেন।
পবিত্র হজের উদ্দেশ্যে রওনা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দশম হিজরির ২৬ জিলকদ, শনিবার জোহরের পর হজের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রওনা হওয়ার প্রাক্কালে মাথায় তেল দেন, চুল আচড়ান, তহবন্দ পরেন, গায়ে চাদর জড়ান, কোরবানির পশু সজ্জিত করেন।
আসরের আগে জুলহুলাইফা নামক স্থানে পৌঁছেন, যেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। রাতযাপনের জন্য তাঁবু স্থাপন করেন। সকালে তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বলেন, রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন আগন্তুক এসে বলেছেন, হে নবী! এ পবিত্র প্রান্তরে নামাজ আদায় করুন এবং বলুন, হজের মধ্যে উমরাও রয়েছে। -সহিহ বোখারি : ২০৭
তারপর জোহর নামাজের আগে নবী কারিম (সা.) ইহরামের জন্য গোসল করেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) নিজ হাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র দেহে সুগন্ধি লাগান।
অতঃপর তহবন্দ ও চাদর পরিধান করে জোহরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর হজ ও উমরা একত্রে ইহরাম বেঁধে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলে বাইরে বের হন। অতঃপর উটে আরোহণ করেন। এক সপ্তাহ পর তিনি এক বিকেলে মক্কার কাছে ‘জি তুবা’ নামক স্থানে পৌঁছেন। তখন ছিল দশম হিজরির ৪ জিলহজ, রবিবার। সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ কোরবানির পশু সঙ্গে করে নিয়ে আসেন, কেউ কেউ নিয়ে আসেননি। যেসব সাহাবি কোরবানির পশু সঙ্গে করে নিয়ে আসেননি তিনি তাদের কাবাঘর তাওয়াফ, সাফা মারওয়া সাঈ শেষ করে হালাল হওয়ার নির্দেশ নেন। ৮ জিলহজ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মিনায় অবস্থান করেন এবং ৯ জিলহজ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে সুপরিচিত।
বিদায় হজের ভাষণ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে গড়া লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরাম তার সামনে উপস্থিত। সুদীর্ঘ ২৩ বছর কঠিন সংগ্রাম, অক্লান্ত পরিশ্রম, কঠোর ত্যাগ ও বর্ণনাতীত সাধনার শুভ ফল স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে তার হৃদয় আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠে। অতঃপর লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরামের সম্মুখে তিনি তার হৃদয়বিদারক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।
১. হে জনতা! আমার কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনো, আমি জানি না, এবারের পর তোমাদের সঙ্গে এ জায়গায় আর একত্র হতে পারব কি না।
২. হে মানবমণ্ডলী! স্মরণ রাখো, তোমাদের আল্লাহ এক, তার কোনো শরিক নেই। তোমাদের আদি পিতা একজন, অনারবদের ওপর আরবদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তদ্রূপ সাদার ওপর কালোর কোনো প্রাধান্য নেই। আল্লাহ ভীতিই শুধু শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার মানদণ্ড।
৩. তোমাদের পরস্পরের রক্ত ও ধন-সম্পদ আজকের দিন, এ মাস এবং এ শহরের মতো পবিত্র।
৪. শোনো, জাহেলিয়াতের সব কিছু আমার পদতলে পিষ্ট করা হয়েছে। জাহেলিয়াতের রক্তের দাবিও রহিত করা হলো।
৫. জাহেলি যুগের সুদ রহিত করা হলো। আমাদের মধ্যকার প্রথম যে সুদ আমি রহিত করছি তা হলো, হজরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সুদ। এখন থেকে সব ধরনের সুদ হারাম করা হলো।
৬. স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা আল্লাহর আমানতস্বরূপ তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কলেমার মাধ্যমে হালাল করা হয়েছে। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার রয়েছে যে তারা তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে স্থান দেবে না, যাদের তোমরা পছন্দ করো না। তারা এরূপ করলে প্রহার করতে পারো। তবে কঠোর প্রহার করবে না। তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তোমরা যথাযথ অন্ন-বস্ত্র প্রদান করবে।
৭. আমি তোমাদের কাছে এমন দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো আমার সুন্নাহ।
৮. হে জনতা! মনে রেখো, আমার পরে কোনো নবী নেই। তোমাদের পরে কোনো উম্মত নেই। ফলে তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজানের রোজা রাখবে, স্বেচ্ছায় ধন-সম্পদের জাকাত দেবে, আল্লাহর ঘরে হজ করবে, শাসকের আনুগত্য করবে। যদি তোমরা এসব পালন করো, তাহলে তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। -ইবনে মাজাহ
৯. হে মানবমণ্ডলী! পিতার অপরাধে পুত্র দায়ী হবে না এবং পুত্রের অপরাধে কোনো পিতাকে দায়ী করা হবে না।
১০. তোমাদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হবে। তোমরা তখন কী বলবে? সাহাবায়ে কেরাম প্রত্যুত্তরে বলেন, আমরা সাক্ষ্য দেব যে আপনি দ্বিনের দাওয়াত দিয়েছেন, আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। নবী কারিম (সা.) এ কথা শুনে শাহাদাত আঙুল আকাশের দিকে উত্তোলন করে লোকদের দিকে ঝুঁকিয়ে তিনবার বলেন, হে রব, আপনি সাক্ষী থাকুন। -সহিহ মুসলিম
১১. প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই। তোমরা তোমাদের দাস-দাসী সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। তোমরা যা খাবে তাদেরও তা খেতে দেবে। তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরও তা পরতে দেবে। তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবে। শাস্তি দেবে না।
১২. হে মানবজাতি! ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। কেননা অতীতের অনেক জাতি এ বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বংস হয়েছে। উপস্থিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব হবে আমার এ কথাগুলো অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
হজরত রাবিয়া ইবনে উমাইয়া ইবনে খালফ জনতার কাছে উচ্চকণ্ঠে এ বাণী পৌঁছে দেন। -ইবনে হিশাম
বিদায় হজে সাহাবির সংখ্যা বিদায় হজে নবী কারিম (সা.)-এর সঙ্গে গমনকারী সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা কত ছিল এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৪ হাজার, কারো মতে এক লাখ ৪৪ হাজার।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর দাপ্তরিক নাম দ্য রিপাবলিক অব পেরু, যা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত। দেশটির উত্তরে ইকুয়েডর ও কলম্বিয়া, পূর্বে ব্রাজিল, দক্ষিণ-পূর্বে বলিভিয়া, দক্ষিণে চিলি, দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত।
পেরু ভৌগোলিকভাবে দারুণ বৈচিত্র্যের অধিকারী এক দেশ। যেখানে আছে জনবিরল মরুভূমি, সবুজ মরূদ্যান, বরফাবৃত পর্বতমালা, উচ্চ মালভূমি, দুর্গম উপত্যকা ও ঘন ক্রান্তীয় অরণ্য।
সমুদ্রতীরবর্তী লিমা শহর পেরুর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও রাজধানী। পেরুর মূল আয়তন ১২ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ বর্গমাইল। মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২০ জন। এর ভেতর প্রায় ৯৫ শতাংশই খ্রিস্টান। পেরুতে মুসলমানের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম।
ঐতিহাসিকদের দাবি, পেরুতে খ্রিস্ট-পূর্ব সাড়ে ১২ হাজার বছর আগে মানববসতি গড়ে ওঠে। নিকট অতীতের ইনকা সাম্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি ছিল পেরু। ইনকা সাম্রাজ্যের সময় গড়ে ওঠা মাচুপিচু শহর দেশটির অন্যতম আইকনিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে ঔপনিবেশিক স্প্যানিশ বাহিনীর হাতে ইনকা সাম্রাজ্যের পতন হয় এবং ১৯ শতকের শুরুতে পেরু স্বাধীনতা লাভ করে।
পেরুতে ইসলাম আগমন কিভাবে হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের ভেতরে মতভিন্নতা আছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিক দাবি করেন, লাতিন আমেরিকায় এমন কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা দ্বারা প্রমাণিত হয়, কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করার প্রায় চার শ বছর আগে মুসলিমরা আমেরিকা মহাদেশ সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। আফ্রিকা ও স্পেনের মুসলিমরাই সর্বপ্রথম সেখানে পদার্পণ করেছিল, বিশেষ করে ১১০০ থেকে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমেরিকা মহাদেশে মুসলিম আগমনের একাধিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। সেখানে পশ্চিমা বিশ্বে ভৌগোলিক আবিষ্কারের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে।
পেরুতে ইসলামি নিদর্শনগুলোর ভেতর অন্যতম রাজধানী লিমায় অবস্থিত আন্দুলুসীয় স্থাপত্য রীতিতে গড়ে ওঠা ভবনগুলো। লিমার কোনো কোনো সড়কে হাঁটলে আপনার মনে হতে পারে আপনি কর্ডোভা বা সেভিলে হাঁটছেন। এ ছাড়া মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির নানা উপাদান এখনো পেরুর সমাজব্যবস্থায় দৃশ্যমান। যেমন- স্থাপত্যরীতি, নির্মাণশৈলী, পোশাক ও খাদ্যরীতি ইত্যাদি।
মুসলিম স্পেনের পতনের পর বিপুলসংখ্যক মুসলিমকে লাতিন আমেরিকায় নির্বাসন দেওয়া হয় এবং সেখানে তাদের দাসের জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়। তাদের মাধ্যমেই আমেরিকা মহাদেশের বেশির ভাগ দেশে ইসলামের সূচনা হয়। যদিও মুসলিমদের ধর্ম পালনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
ঐতিহাসিকরা লেখেন, ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে পেরুর ঔপনিবেশিক স্প্যানিশ শাসক লোপে ডে লা পেনাকে ইসলামচর্চার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তাকে মুর (উত্তর আফ্রিকার মুসলিম জনগোষ্ঠী) আখ্যা দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন মূলত মেক্সিকোর গোয়াদালাজারা শহরের অধিবাসী। তাকে ইসলামচর্চা ও ইসলাম প্রচারের অপরাধে পেরুর কুজকো শহর থেকে আটক করা হয়। কারাবাসের পুরো সময় তার গলায় সানবেনিতো (অপরাধীদের জন্য অপমানজনক পোশাক) পরতে বাধ্য করা হয়। তার মতোই ইসলাম প্রচারের অপরাধে কারাভোগ করতে হয় স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত জুয়ান সোলানো এবং একজন আফ্রিকান নারীকে। লুইস সোলানোকে ইসলাম প্রচারের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়, কঠোর ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব ও জুলুম-নির্যাতনের কারণে পেরু থেকে ধীরে ধীরে ইসলাম ও মুসলমান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন পর ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে ঘরবাড়ি হারানো মুসলিমদের একটি দল ১৯৪৮ সালে পেরুতে আশ্রয় নিয়েছিল। ফলে দেশটিতে আবারও ইসলামের চর্চা শুরু হয়। পেরুর নাগরিক লুইস কাস্ট্রো ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ১৯৮০ সালে তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান, যা ছিল পেরুর ইতিহাসে একটি অনন্য ঘটনা।
১৯৯৩ সালে পেরুর মুসলিম সম্প্রদায় রাজধানীর ‘জেসাস মারিয়া’ জেলায় একটি মসজিদ নির্মাণ করে। তবে আর্থিক সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়। ভিলা এল সালভাদর জেলায় প্রতিষ্ঠিত অপর একটি মসজিদও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পেরুতে আটটি অনুমোদিত মসজিদ আছে এবং বেশ কিছু নামাজকক্ষ আছে।
বাবে ইসলাম দেশটির সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ। পেরুর মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সংকট ইসলামি শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণের অভাব। স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষ আলেমের অভাব পেরুতে ইসলাম প্রসারে একটি প্রতিবন্ধক বলে মনে করা হয়। তবে শত বাধার মধ্যেও পেরুতে ইসলাম একটি বিকাশমান ধর্ম। ধীরে ধীরে এখানে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে।
২০২৫ সালে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার। শেষ দিন পেরোলেও খালি রয়েছে ৪৩ হাজার ৬৭১ কোটা। ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে প্রাথমিক নিবন্ধন সেরেছেন ৮৩ হাজার ৫৮৭ জন। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে নিবন্ধনের সময়সীমা তিন দফা বাড়ায় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তার পরও কোটা ফাঁকা রয়ে গেল। এবার নিয়ে টানা তিন বছর হজযাত্রীদের কোটা পূরণে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ। এর ফলে হজের সঙ্গে জড়িত ব্যবসাগুলো প্রভাবিত হবে বলে আশঙ্কা করেছেন হজ এজেন্সির মালিকরা।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে কোটার চেয়ে ৩ হাজার ৯৮০ জন এবং ২০২৪ সালে ৪১ হাজার ৯৪১ জন কম যাত্রী হজপালন করেন। তখনও হজের কোটা ছিল এবারের মতো এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।
হজ একটি পবিত্র ইবাদত। কয়েকটি শর্তে ফরজ ইবাদতের একটি। কিন্তু হজকে ঘিরে চলা নানা অনৈতিক ক্রিয়াকর্মের পবিত্রতায় ছেদ ফেলছে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পবিত্র ইবাদতটিকেও কোথায় এনে ঠেকানো হয়েছে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দিন দিন কঠিন করে তোলা হচ্ছে হজপালন। নানা নিয়মের বেড়াজালে হজ ব্যবস্থাপনা কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষ নফল উমরার দিকে বেশি ঝুঁকছে।
জানা যায়, খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৪ হাজার ২৩৭ জন প্রাক-নিবন্ধনকারী হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন করেননি। এই বিপুল সংখ্যক প্রাক-নিবন্ধনকারী চূড়ান্ত নিবন্ধন না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। অন্যান্য বছর হজ নিবন্ধনের সুযোগ পেতে প্রতিযোগিতা চলত।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার হজ প্যাকেজ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। প্যাকেজ মূল্যের তারতম্য আর সৌদি কর্তৃপক্ষের নিত্য-নতুন হজ ব্যবস্থাপনার বিধান আরোপ হজ ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলেছে। সেই সঙ্গে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর কমিটি না থাকায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেভাবে আলাপ-আলোচনা করে অনেক কিছুই সমাধান করতে পারেনি। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও এজেন্সিগুলোর দূরত্বের কারণে এবারও হজ কোটা পূরণ হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, এমন অব্যবস্থাপনা ও পরিস্থিতি একদম ঠাণ্ডা মাথায় তৈরি করা হয়েছে। তার ওপর হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মূল নেতৃত্বে থাকা শীর্ষ কর্তাদের হজ-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন অন্যরা। নানান সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এই তারা কারা? তার উত্তর খোঁজা খুবই জরুরি। ইবাদতকে ব্যবসায় নিয়ে ঠেকাতে কামিয়াব এ মহলটি বরাবরই কোনো না কোনোভাবে লাভবান।
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মুফতি অহিদুল আলম বলেন, হজ একটি বড় রকমের ইবাদত বলে এর দিকে ব্যবসায়িক নজর থাকবে না- এমন নীতিকথার সুযোগ নেই। নীতি-নৈতিকতা, ভয়, ভক্তি এখানে খাটে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তো হজ নিয়ে এতো ব্যবসা হয় না, সে কথা বলার জায়গাও নেই। বরং ‘কেউ না গেলে নাই’- এমন সাফ কথার বাজার আছে। হজপ্রার্থীরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের খরচের তফাৎ জানেন না, এমনও নয়। নিজ গরজেই তারা তা সংগ্রহ করেন। কিন্তু, তাতে কিছু যায়-আসে না। জনসংখ্যা বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার হজযাত্রীদের খরচ অনেক কম। মালয়েশিয়ার খরচ খুব বেশি না। প্রতিবেশী ভারতে হজে ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হলেও খরচ আমাদের মতো নয়। এসব নিয়ে প্রতি বছরই কথা হয়। বচসা জমে। কারো পছন্দ না হলে বা সামর্থ্যে না কুলালে না যাবেন- এ সাফ কথায় বাদবাকি যুক্তি আর টেকে না।
মূলত হজ নিয়ে খরচের বড় অংশ ব্যয় হয় সৌদি আরবের বাড়ি ও উড়োজাহাজ ভাড়ায়। আর সৌদি সরকারের বিভিন্ন সেবার জন্যও ভালো একটি অংশ দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজ ভাড়া কমাতে পারে সরকার। হজ প্যাকেজের খরচের অনেকগুলোর ধাপের মধ্যে উড়োজাহাজ ভাড়া একটি। এখানেই পাখির চোখ সবার, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো শুধু প্লেন ভাড়াকেই টার্গেট করে বলতে থাকে, প্লেন ভাড়া কমানো হোক, প্লেন ভাড়া কমানো হোক। কারণ প্লেন ভাড়া কমালে এজেন্সি মালিকদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু হজ প্যাকেজের বাকি ধাপের মধ্যে বাড়িভাড়া কমানো হলে এজেন্সি মালিকদের ব্যবসায় কম লাভ হবে। অনেক এজেন্সি হজের সময় মক্কা-মদিনায় আবাসন ব্যবসা করে, তাদের লাভের অংশ কমে যাবে।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে দফায় দফায় নিবন্ধন পেছানোর রহস্য আরও নানা দিকে ছড়ানো। এর ফিরিস্তিও বেশ লম্বা, কারণ এ ইবাদতটির সঙ্গে বেশ অর্থনৈতিক সংযোগ বিদ্যমান। এ সুযোগে বণিকরা হজকে করে ফেলেছে বিজনেস আইটেম। ব্যবসা হাতানোর প্রবণতায় অনেকে ঝুঁকেছেন এ ব্যবসায়, যাদের অনেকে আবার ম্যান পাওয়ার ব্যবসায় সম্পৃক্ত। হজ তাদের কাছে একটি মৌসুমী ব্যবসা। তাদের অফিস থাকে। নতুন করে অফিস নিতে হয় না। আদম ব্যবসায়ীদের মতো তাদেরও সংগঠন আছে। হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব নামের সংগঠনটি তা দেখভাল করে। নানা দ্বন্দ্বে যদিও এখন সংগঠনটির কোনো কমিটি নেই। তবে সেখানে নির্বাচনী হাওয়া বইছে, সে আরেক কাহিনি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে, ২০১৫ সালে হজের জন্য সর্বনিম্ন খরচ ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা। ২০১৬ সালে তিন লাখ চার হাজার টাকা। ২০১৭ সালে সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার টাকার। ২০১৮ সালে ছিল তিন লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা। করোনা মহামারির কারণে ২০২০, ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে সীমিত পরিসরে হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল চার লাখ ৫৬ হাজার।
২০২৩ সালে সরকারিভাবে হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয় ছয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা। আর ২০২৪ সালে প্যাকেজ ধরা হয় পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ২০২৫ সালে হজে যেতে সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। ঘোষিত সাশ্রয়ী প্যাকেজ অনুযায়ী খরচ ধরা হয়েছে চার লাখ ৭৯ হাজার ২৪২ টাকা। অন্য প্যাকেজে খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। তবে প্যাকেজে খাবারের ৪০ হাজার ও কোরবানির জন্য ৭৫০ সৌদি রিয়াল আলাদাভাবে নিতে বলা হয়েছে। গত বছর খাবার টাকা প্যাকেজে যুক্ত ছিল।
তবে এবারের প্যাকেজে ২০২৪ সালের চেয়ে প্লেনভাড়া অন্তত ২৭ হাজার টাকা কমানো হয়েছে। এসব হিসাব ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হলেও খরচের তারতম্য বিস্তর। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বিবেচনায় নিলে এটা স্পষ্ট যে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে হজের ব্যয় বেড়েছে। যেমন খাবারের ৪০ হাজার টাকা যোগ করলে প্যাকেজ-১-এর খরচ দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৮ হাজার ২৪২ টাকা। আর প্যাকেজ ২-এর জন্য খরচ ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮০ টাকা। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় হজের খরচ বেড়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
হজ নিয়ে বাণিজ্য হয়, আর এই অভিযোগ শুধু বেসরকারি এজেন্সির মালিকদের শুনতে হয়, এটা কেন? সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশন আছে। জেদ্দা কনসাল জেনারেল (হজ) আছেন, তারা চাইলেই সৌদি আরবে সরকারি নিবন্ধিত হাজিদের বাড়িভাড়া করতে পারেন। তার পরও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে লোকবলের বিশাল বহর নিয়ে সৌদি আরবে যান সরকারিভাবে বাড়ি ভাড়ার জন্য, এটা নিয়ে তো কেউ কথা বলে না? এভাবেই ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন এক এজেন্সির মালিক।
তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি এজেন্সিগুলোর একজন অন্তত পঞ্চাশ জনকে সেবা দেন। কিন্তু সরকারি ৫ হাজার হাজির জন্য যে লোক বহর যায়, তাদের সেবা কি হাজিরা পান? বিভিন্ন দলভুক্ত হয়ে যারা হাজিসেবার জন্য সৌদি আরব যান তাদের কারা সুবিধা করে দেয়, ঘুরেফিরে কিছু লোকের নামই কেমনে যুক্ত হয়, এগুলো খুঁজে দেখা দরকার।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর দেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সৌদি নেওয়া হয় হজে সহায়তাকারী হিসেবে। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এটা বন্ধ করে সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া যায়, কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় এগুলো দেখেও দেখে না। এটাও বাণিজ্যের অংশ। এগুলো নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার।