বত্রিশ লাখ জনসংখ্যার রংপুরে মসজিদ ৫ হাজার ১০৬টি
ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির উর্বরভূমি রংপুরে মসজিদের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। এসব মসজিদের মধ্যে ছোট বড় কাঁচা, আধা-পাকা দালানের মসজিদ রয়েছে। শত শত বছরের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্মৃতি ঘেরা বেশ কয়েকটি মসজিদও রয়েছে এই জেলায়।
তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) তথ্য মতে, বর্তমানে রংপুর জেলার আটটি উপজেলা, তিনটি পৌরসভা ও একটি সিটি কর্পোরেশন এলাকা মিলে মোট ৫ হাজার ১০৬টি মসজিদ রয়েছে। এরমধ্যে শুধু জামে মসজিদ ৪ হাজার ৮৫৩টি ও পাঞ্জেগানা (ওয়াক্তি) মসজিদ ২৫৩টি রয়েছে।
ওয়াক্তি মসজিদ ছাড়া বেশির মসজিদে সারা বছরই আজানের সঙ্গে নামাজ আদায় করা হলেও পবিত্র মাহে রমজান এলেই মসজিদে মসজিদে বাড়তে থাকে মুসল্লিদের সমাগম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. মহিউদ্দীন চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রংপুর দুইশ সাতচল্লিশ বছরের পুরোনো জেলা। ঐতিহাসিক এই জেলা শহরের সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ডে ৬৯০টি মসজিদ রয়েছে। রংপুর সদর উপজেলাতে রয়েছে ২২১টি মসজিদ। বদরগঞ্জ উপজেলাতে ৫৪৯টি, তারাগঞ্জে ৩৫৭টি, পীরগঞ্জে ৮১৬টি মসজিদ। এছাড়া মিঠাপুকুর উপজেলায় ১১৬৭টি, কাউনিয়ায় ৩৭১টি, পীরগাছায় ৭০১টি এবং গঙ্গাচড়াতে ২৩৪টি মসজিদ রয়েছে। এসব অধিকাংশ মসজিদেই জুমার নামাজ হয়। তবে রংপুরের আট উপজেলার মধ্যে সর্বাধিক মসজিদ রয়েছে মিঠাপুকুরে।’
বত্রিশ লাখ জনসংখ্যার এই জেলায় ইফার পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিচালনায় ১ হাজার ৪৩১টি মসজিদে রয়েছে শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। এসব মসজিদের দ্বীনি শিক্ষার সঙ্গে শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত ও ইসলামি মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়াও স্থানীয়দের পরিচালনা ও মসজিদ কমিটির তত্ত্বাবধানে কিছু কিছু মসজিদে মক্তব রয়েছে।
এ ছাড়া মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে গ্রাম ও শহরের কিছু মসজিদ এখন শীতাতপ (এসি) নিয়ন্ত্রিত হলেও বেশিরভাগ মসজিদে নেই আধুনিক ব্যবস্থা। তবে ওয়াক্তি মসজিদ ছাড়া প্রতিটি জামে মসজিদে রয়েছে একজন খতিব বা পেশ ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও খাদেম।
২ হাজার ৩শ’ ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় রংপুর কারামতিয়া জৌনপুরী (রহ.)-এর মাজার ও মসজিদ, বদরগঞ্জের লালদিঘী নয় গম্বুজ মসজিদ, মাহিগঞ্জের কাজিটারী মসজিদ, মিঠাপুকুরের ফুলচৌকি মোঘল মসজিদ, মিঠাপুকুর লাল মসজিদ, শুকুরেরহাটের তনকা মসজিদ, পীরগাছার চন্ডিপুর মসজিদ, গঙ্গাচড়ার কলি ও দলি আমিন জামে মসজিদ, হারাগাছ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ বেশকিছু বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক নির্দশন মসজিদের মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে রংপুর জেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় নয়টি মসজিদের মধ্যে ৪টির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে ইসলামি চিন্তক ও গবেষক চঞ্চল মাহমুদ এর মতে রংপুরে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে মসজিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এই জেলায় যেসব ঐতিহাসিক মসজিদ রয়েছে, তার বেশিরভাগই মোঘল ও ব্রিটিশ শাসনে তৈরি। দেশের প্রথম ও প্রাচীন মসজিদটিও রংপুর অঞ্চলে রয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণের ৫০ বছর পর ৬২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে যে ইসলাম প্রচারের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সেটিও রংপুর অঞ্চল থেকে শুরু হয়।’