আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম ইতেকাফ
যেকোনো ওয়াকফকৃত মসজিদে ইতেকাফ করা যাবে; তা জামে মসজিদ হোক অথবা পাঞ্জেগানা মসজিদ।
কোনো অস্থায়ী নামাজ ঘরে ইতেকাফ করা যাবে না। বিভিন্ন বহুতল ভবন, অসিফ-আদলত, কল-কারখানায় নামাজের জন্য যে রুম, জায়গা ও কর্ণার নির্ধারিত থাকে- সেখানে ইতেকাফ করা যাবে না। কেননা, এগুলো মসজিদের জন্য ওয়াকফ করা নয়। বরং অস্থায়ীভাবে নির্ধারিত।
ইতেকাফের সময়
সুন্নত ইতেকাফের সময় হলো- রমজান মাসের শেষ দশক। অতএব, কেউ যদি সুন্নত ইতেকাফের নিয়ত করে তবে তাকে ২০ রমজানের সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে এবং ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হতে হবে।
ইতেকাফ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
ইতেকাফ শুদ্ধ হওয়ার ৬টি শর্ত রয়েছে। যথা- ১. মুসলমান হওয়া, ২. গোসল ফরজ হওয়ার মতো নাপাক না থাকা, ৩. মাসিক স্রাব ও সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব না থাকা, ৪. পাগল না হওয়া, ৫. নিয়ত করা ও ৬. ওয়াকফ মসজিদ হওয়া।
ইতেকাফের নিয়ত
নিয়ত হলো- মনের পাকাপাকি সিদ্ধান্তের নাম। মুখে উচ্চারণের নাম নিয়ত নয়। সুন্নত ইতেকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশের পূর্বে মনে মনে এ খেয়াল করে নিতে হবে। রমজানের শেষ দশক সম্পূর্ণটুকু সুন্নত ইতেকাফ করার জন্য মসজিদে প্রবেশ করছি।
ইতেকাফের মোস্তাহাব
১. পূর্ণ রাত জেগে ইবাদত, জিকির ও দোয়া করা, ২. কোরআন তেলাওয়াত করা, ৩. দরুদ শরীফ পাঠ করা, ৪. দ্বীনী জ্ঞান চর্চা করা, ৫. আলেম হয়ে থাকলে ওয়াজ-নসিহত করা ও ৬. জামে মসজিদে ইতেকাফ করা।
ইতেকাফে যা করা জায়েজ
১. পানাহার করা, ২. ঘুমানো, ৩. একান্ত প্রয়োজনীয় দুনিয়াবি কথা বলা, ৪. পণ্য মসজিদে উপস্থিত না করে প্রয়োজনীয় জিনিষ কেনাকাটা করা।
ইতেকাফের মাকরুহ
১. অহেতুক কথাবার্তা বলা, গল্পগুজব করা, ২. সম্পূর্ণ সময় নিরব থাকা আর এবং নিরবতাকে ইবাদত মনে করা, ৩. কোনো সামগ্রী মসজিদে এনে বেচাকেনা করা ও ৪. যে কাজের পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হবে তা করা।
ইতেকাফ ভঙ্গকারী কাজসমূহ
১. শরিয়ত অনুমোদিত ওজর ব্যতীত অন্যকোনো কারণে বা অকারণে মসজিদের বাইরে যাওয়া, ২. অনিচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে মসজিদের বাইরে যাওয়া, ২. সহবাস করা, ৩. শরিয়ত অনুমোদিত ওজরে বাইরে যেয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় বাইরে থাকা।
তবে নিজের জরুরি চিকিৎসার জন্য, কোনো রোগী দেখার জন্য, কোনো বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করার জন্য, জানাজার জন্য বা আত্মরক্ষার জন্য বের হলেও ইতেকাফ ভেঙে যাবে।
ইতেকাফের স্থান থেকে বের হওয়ার শরিয়ত অনুমোদিত ওজর
১. মলমূত্র ত্যাগের জন্য, ২. ফরজ গোসলের জন্য, ৩. পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতেকাফ করলে জুমার নামাজের জন্য, ৪. আজান দেওয়ার জন্য ও ৫. খাবার পৌঁছে দেওয়ার কেউ না থাকলে খাবার নিয়ে আসার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবে।
এ সব প্রয়োজনে বাইরে গেলে ইতেকাফ ভাঙবে না। কিন্তু প্রয়োজনের বেশি সময় বাইরে থাকলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।
অভ্যাসবশত দৈনিকের গোসলে জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবে না। তবে একান্তই যদি বেশি সমস্যা হয় তাহলে মলমূত্র ত্যাগ করে আসার সময় সুন্দরভাবে অজু করতে যে সময় লাগে ঠিক ওই সময়ের মধ্যে যদি তাড়াহুড়ো করে গোসল করা সম্ভব হয় তবে অজু না করে সময়ের এ শর্ত মেনে গোসল করা যেতে পারে। বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বটে। যা অত্যন্ত সতর্কতার দাবি রাখে।
আবার এর জন্য সহযোগীও দরকার যে আগে থেকেই পানির ব্যবস্থা করে রাখবে, গোসলের পরে কাপড় ধোঁয়ে দিবে। অজুখানায় শাওয়ার থাকলে বিষয়টি কিছুটা সহজ হয়।
ইতেকাফ ভেঙে গেলে করণীয়
কোনো সমস্যার কারণে হোক অথবা নিছক অসতর্কতার কারণেই হোক, সুন্নত ইতেকাফ ভেঙে গেলে কাজা আদায়ের নিয়তে একদিন ইতেকাফ করতে হবে। আর তা রমজানের ভেতরেও করা যাবে পরেও করা যাবে।
কাজা ইতেকাফের নিয়তে যেকোনো দিন সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে পরের দিন সূর্যাস্তের পর বের হতে হবে। আর রমজানের পর কাজা ইতেকাফ করলে মসজিদে প্রবেশের পরবর্তী দিন রোজাও রাখতে হবে।