হজ কবুল হওয়ার জন্য ঝগড়া না করা শর্ত



ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৪ জুলাই বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়েছে হজ ফ্লাইট। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হজযাত্রীরাও হজপালনের নিমিত্তে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে পৌঁছেছেন। মক্কা, স্বপ্নের নগরী। সুতরাং মক্কায় নামার পর খুব আদবের সঙ্গে চলুন। এটি ইসলামের শহর, নিরাপদ শহর, বালাদে আমিন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে কাটিয়েছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ৫৩টি বছর।

আপনি যেখানে পা রাখছেন হতে পারে এখানেই বা আশপাশে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলাফেরা করেছেন। মক্কায় আপনাকে হোটেলে বা বাড়িতে থাকতে দেওয়া হবে। বর্তমানে প্রত্যেকের জন্য আলাদা সিটের ব্যবস্থা থাকে। তাই সিট নিয়ে টেনশন করার কিছুই নেই। অমুকের সিট ভালো হয়েছে আমারটা ভালো হলো না কেন? এ নিয়ে শয়তান মনে ঝগড়া তৈরি করাবে। মনে রাখবেন, হজের সফরে ঝগড়া করা যাবে না। হজ কবুল হওয়ার জন্য ঝগড়া না করা শর্ত।

হোটেলে সিট বুঝে নিয়ে দীর্ঘ ক্লান্তি দূর করার জন্য একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। কাফেলার পক্ষ থেকে যখন উমরার তাওয়াফ করার কথা বলা হবে তখনই প্রস্তুত থাকবেন। প্রথম হজ-উমরা হলে অভিজ্ঞ আলেম বা কাফেলা প্রধানের নেতৃত্বে তাওয়াফ করতে যাওয়া ভালো।

উমরা আদায়
কিরান হজ হোক বা তামাত্তু হজ আদায় করার ইচ্ছা থাকুক প্রথমেই মক্কা পৌঁছে উমরা আদায় করতে হয়। উমরার ক্ষেত্রে চারটি জিনিস পালনীয়। ইহরাম বাঁধা, তাওয়াফ করা, সায়ি করা এবং মাথা মুণ্ডানো বা হলক করা। এ কয়েকটি কাজ শেষ হলেই উমরা পালন হয়ে যায়। উমরা শেষ হলে তামাত্তু হজ পালনকারীরা হালাল হয়ে যায়। অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ ছিল তা আর হারাম বা নিষিদ্ধ থাকবে না। তাই স্বাভাবিক জীবন শুরু হয়। সাধারণ জামা-কাপড় পরে নামাজ ও নফল তাওয়াফ ছাড়া হজের পূর্বে আর কোনো বিশেষ কাজ থাকে না।

কাবার দরজায়
কাবাঘর তাওয়াফ করার পূর্বে গোসল করে নেওয়া ভালো। কাবাঘরের চারপাশের বিল্ডিংগুলোই মাসজিদে হারাম। এ মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় বাবুস সালাম দিয়ে প্রবেশ করা ভালো। এছাড়া অন্যান্য গেট দিয়েও প্রবেশ করা যায়। বাবুস সালাম বর্তমানে ১৭ নম্বর গেট যা আবু কুবাইস পাহাড়ের কাছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়ীর কাছে। কাবা ঘর দেখার সময় দোয়া করবেন। এ সময় দোয়া কবুল হয়।

মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় দুই রাকাত দুখুলুল মসজিদ নামাজ পড়ে নেওয়া যায়। যদি জামাতে নামাজ হতে থাকে তাহলে আগে জামাতে নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

তাওয়াফ
আল্লাহর ঘর কাবার চারদিকে নির্ধারিত নিয়মে সাত বার চক্কর দেওয়া বা ঘুরাকে তাওয়াফ বলে। উমরা আদায়ের ক্ষেত্রে তাওয়াফ ফরজ। যে শুধু হজ আদায় করে অর্থাৎ ইফরাদ হজ করে তার জন্যও আগমনী তাওয়াফ করা সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে।

হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয়। তাওয়াফের জন্য মনে মনে নিয়ত করলেই হবে। হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হয়। ভিড়ের কারণে চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের সোজা সবুজ বাতি বা সবুজ দাগে দাঁড়িয়ে কাবার দিকে দুই হাত উঁচু করে তারপর দুই হাতে চুমু দিতে হয়। তখন নিজের মতো করে মনে মনে দোয়া করে নেবেন।

হাজরে আসওয়াদ চুমু দিয়ে বা হাতে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। ৭ বার ঘুরার পর হাজরে আসওয়াদে এসেই তাওয়াফ শেষ হবে। তাওয়াফ করার সময় কাবা ঘরের সঙ্গে সংযুক্ত হাতিমে কাবাকেও তাওয়াফের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। হাজরে আসওয়াদের কোণার পর হাতিমের কোণা পড়বে। তারপর পড়বে রুকনে ইয়ামানির দিক। প্রতি চক্করে এ রুকনে ইয়ামানি দুই হাতে বা শুধু ডান হাতে ছুঁয়ে দেওয়া সুন্নত। বেশি ভিড় হলে তা প্রতিবারে ছোঁয়ার চেষ্টা না করা। তা না ছুঁয়ে দিলেও তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: হজের প্রস্তুতিতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি

রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝামাঝি স্থানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান নার’ এ দোয়া করেছেন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। -আবু দাউদ

ইবনে মাজায় বর্ণিত হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রুকনে ইয়ামানিতে সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়োজিত। যে ব্যক্তি রুকনে ইয়ামানিতে পৌঁছে এ দোয়া করে- আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরা, রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান নার’ তখন সকল ফেরেশতা আমিন বলে। -ইবনে মাজাহ

হাজরে আসওয়াদ থেকে চক্কর শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে পৌঁছালে এক চক্কর তাওয়াফ হলো। এভাবে সাত চক্কর তাওয়াফ করলে একটি পরিপূর্ণ তাওয়াফ হয়।

প্রতি তাওয়াফে আলাদা কোনো দোয়া নেই। তাওয়াফ করার সময় এমন কোনো দোয়া বর্ণিত নেই যা পড়া ফরজ বা ওয়াজিব। তাওয়াফের সময় কোনো দোয়া না পড়লেও তাওয়াফ হয়ে যায়। তাওয়াফের সময় কোনো দোয়া করা নিষেধ নেই। কোনো বই দেখে বা শুনে দোয়া পড়লে তা জায়েজ। বিভিন্ন গ্রন্থে প্রতি চক্করে আলাদা আলাদা দোয়া লেখা আছে। এভাবে প্রতি চক্করের জন্য আলাদা আলাদা দোয়া পড়ার রেওয়াজ না করাই উচিত। এতে করে তাওয়াফের একাগ্রতা নষ্ট হয়।

তাওয়াফের সময় আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে চক্কর দিচ্ছি এ খেয়াল রাখবেন। মনে মনে আল্লাহর কাছে যা চাওয়ার চাইতে পারবেন। তাওয়াফের সময় কাবার দিকে বুক ও পিঠ করা অনুচিত।

যেসব তাওয়াফের পর সায়ি করতে হয় সে সব তাওয়াফের প্রথম ৩ চক্করে রামল করতে হয়। আর পুরো ৭ চক্করে ইজতেবা করতে হয়।

রমল হলো- হেলেদুলে বীরের মতো চলা। ইজতেবা হলো- ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের ওপর ফেলে রাখা।

তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। তাওয়াফের নামাজ পড়ার জন্য কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করার জন্য। হজের মৌসুমে মাকামে ইবরাহিমে তাওয়াফ শেষের নামাজ পড়া অনেক কঠিন। তারপরও কিছু বান্দা কষ্ট স্বীকার করে- এখানেই নামাজ পড়ে থাকে। তবে মাকামে ইবরাহিমের সোজা পিছনে মাতাফের শেষপ্রান্তে অধিকাংশ লোক নামাজ আদায় করে থাকেন। এতে নামাজে মনোযোগ আনা সহজ হয়। তাওয়াফের নামাজ শেষে দোয়া করা জায়েজ। এ সময়ও দোয়া কবুল হয়।

জমজমের পানি
তাওয়াফের ক্লান্তি দূর করার জন্য অসাধারণ পানীয় হলো- জমজমের পানি। মসজিদে হারামের অসংখ্য স্থানে জমজমের পানি রাখা আছে। যারা ঠাণ্ডা পানি পান করতে চান তারা কোল্ড বা বারিদ ড্রামের পানি পান করতে পারেন। ঠাণ্ডা ছাড়া নরমাল পানিও আছে। ইচ্ছা করলে দু’টো মিলিয়েও পান করতে পারেন।

জমজমের পানি পান করলে ক্ষুধা দূর হয়। এতে খাদ্যগুণও আছে। জমজমের পানিতে রোগমুক্তিও আছে। এ বরকতি পানি হজের সফরে নিয়মিত পান করতে পারেন।

সায়ি
তাওয়াফ শেষ করার পর ফরজ তাওয়াফ হলে সায়ি করতে হয়। উমরা ও হজের জন্য সায়ি করা ওয়াজিব। সায়ি হলো- সাফা ও মারওয়া নামক দু’পাহাড়ের মাঝে হাঁটা ও দৌঁড়ানো। তাওয়াফ, নামাজ ও পানি পান শেষে এবার সায়ির পালা। সায়ি করার পূর্বে কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে হয়। চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে ইশারা করবেন। অন্তত দু’হাত উঁচু করে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাতে চুমু দিবেন। তারপর বলবেন- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।

আরও পড়ুন: হজের ইহরাম: দুই খণ্ড সাদা কাপড় যখন হজযাত্রীর সঙ্গী

অত:পর হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসারে বাবুস সাফা দিয়ে সাফা পাহাড়ে উঠবেন। অন্য স্থান দিয়েও সাফা পাহাড়ে উঠলেও চলবে। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে কাবাঘর দেখা যায়। সেটি হাজরে আসওয়াদের কোণা। সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে কাবার দিকে মুখ করে দু’হাত তুলে হাজরে আসওয়াদকে ইশারা করাকে ইসতেলাম বলে। ইসতেলামের মাধ্যমে শুরু হবে সায়ি। সাফা থেকে মারওয়া পৌঁছালে একবার সায়ি হলো। মারওয়া থেকে সাফা পৌঁছালে দুইবার হলো। এভাবে ৭ বার দৌঁড়ানো শেষ হবে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছানোর পর। দুই পাহাড়ের মাঝে এ সাতবার হাঁটা ও দৌঁড়ানোর মাধ্যমে সম্পন্ন হবে সায়ি।

সায়ি করার সময় অল্প একটু জায়গায় বর্তমানে সবুজ লাইট দেওয়া আছে। এ নীচু জায়গায় দৌঁড়াতে হয়। অন্যান্য জায়গায় হেঁটে চললেই হয়। নারীরা সবুজ বাতির জায়গায় দৌঁড়াবে না বরং স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাবে। এ সময় নারী পুরুষ সবাই এ দোয়া করবে- রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আয়ায্যুল আকরাম।

সায়ি করার সময় অজু থাকা মুস্তাহাব। কোনো কারণে অজু ছাড়া সায়ি করলে এতে কোনো দম দিতে হবে না। অজু ছাড়াও সায়ি আদায় হয়ে যায়।

সায়ির পর আবার তাওয়াফ করার স্থানের পাশে এসে দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। অন্য জায়গাতেও এ নামাজ পড়া যায়। মারওয়া পাহাড়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ার কোনো বিধান নেই। সেখানে নামাজ পড়া মাকরূহ।

সায়ি করার সময় দোয়া কবুল হয়। এ সময় নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। যেকোনো দোয়া করা যেতে পারে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময় বলেছিলেন, হে আল্লাহ! তুমি তো বলেছো, আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেবো। (দোয়া করো, আমি কবুল করবো) তুমি তো ওয়াদা খেলাফ করো না। আমি তোমার কাছে চাচ্ছি, তুমি যেমনিভাবে আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছো তা কখনো ছিনিয়ে নিয়ো না। আমাকে মুসলমান অবস্থায় মৃত্যু দিও। -আহকামে হজ: পৃ. ৫৮

এছাড়া অন্য যেকোনো দোয়া করা যেতে পারে।

সায়ি করা অবস্থায় জামাত শুরু হয়ে গেলে সেখানেই জামাতে দাঁড়িয়ে যাবেন। নামাজ শেষে সেখান থেকেই সায়ি পূর্ণ করবেন।

মাসয়ালা: সায়ি সব সময় তাওয়াফের পরে করতে হয়। তাওয়াফ ছাড়া সায়ি হয় না।

মাসয়ালা: তাওয়াফ পবিত্র অবস্থায় করার পর কোনো নারী সায়ি করার সময় অপবিত্র হয়ে পড়লেও সায়ি শেষ করতে পারবে। অপবিত্র অবস্থায় সায়ি করা জায়েজ হবে।

মাসয়ালা: হুইল চেয়ারে বসে বিনাওজরে সায়ি করা নাজায়েজ। ওজর থাকলে হুইল চেয়ারে করে সায়ি করতে পারবে। সবুজ বাতির জায়গায় চেয়ারের গতি বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে ভিড় থাকলে অন্যকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

মাথার চুল কাটা
হজ তিন ধরণের হয়। ১. যারা শুধু হজ করে, তা ইফরাদ হজ। ২. যারা হজ ও উমরা একসঙ্গে করে, কিরান হজ। এ দু’শ্রেণির ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হজ না করে ইহরাম শেষ করতে পারবে না। অন্যান্য যারা আছেন যেমন শুধু উমরাকারী কিংবা তামাত্তু হজকারী তারা সায়ি করার পর মাথার চুল ন্যাড়া করে ফেলবে কিংবা এক আঙুল পরিমাণ চুল কাটিয়ে নেবে।

নিজে নিজে কাটা যাবে না। যিনি ইহরাম অবস্থায় আছেন তিনিও চুল কাটতে পারবেন না। যিনি ইহরাম শেষ করেছেন তার মাধ্যমে অথবা স্থানীয় কারো মাধ্যমে মাথা মুণ্ডাবেন।

বর্তমানে প্রচুর সেলুন পাওয়া যায়, তাদের দ্বারা তা করাতে পারেন। কাফেলার কেউ ইহরাম শেষ করে থাকলে তার দ্বারাও মাথার চুল চেছে ফেলা যায়।

উমরার সমাপ্তি
ইহরাম, তাওয়াফ, সায়ি ও মাথা মুণ্ডানোর মাধ্যমে উমরা পালন হয়ে গেল। এবার ইহরামের কাপড় খুলে ফেলুন। এখন থেকে ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ ছিল, তা আর নিষিদ্ধ থাকবে না। গোসল করে সেলাই করা সাধারণ কাপড় পরিধান করুন। তখন খুশবু ব্যবহার করা জায়েজ। স্ত্রীর সঙ্গেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যাবে তখন থেকে।

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

   

লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়রের রেকর্ড



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাদিক খান হচ্ছেন লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মেয়র পদে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। লন্ডনের মেয়র হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন থেকেই পদটি ধরে রেখেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম এই রাজনীতিক।

সাদিক খানের জন্ম লন্ডনে, ১৯৭০ সালের ৮ অক্টোবর। এর দুই বছর আগে ১৯৬৮ সালে তার মা-বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমান। বাবা আমানউল্লাহ ছিলেন বাসচালক। মা শেহরুন করতেন দরজির কাজ। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাদিক পঞ্চম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তার দাদা-দাদি ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সাদিক খানের পড়ালেখা ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে। বিষয় ছিল আইন। পড়াশোনা শেষে মানবাধিকার-বিষয়ক আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কম বয়সেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টির রাজনীতিতে।

১৯৯৪ সালে লেবার পার্টির হয়ে লন্ডনের ওয়ান্ডসওর্থ বারার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন সাদিক খান। তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ লন্ডনের টুটিং আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে গর্ডন ব্রাউন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাদিক খান। ২০১০ সালে লেবার পার্টি বিরোধী দলে গেলে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভায় বিচার বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী, লর্ড চ্যান্সেলর (ছায়া অর্থমন্ত্রী) ও লন্ডন-বিষয়ক ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন সাদিক খান। সে বছরের ৯ মে কনজারভেটিভ পার্টির জেক গোল্ডস্মিথকে হারিয়ে প্রথমবার লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০২১ সালে কনজারভেটিভ পার্টির সোন বেইলিকে পরাজিত করে মেয়র পদ ধরে রাখেন সাদিক।

এবার তৃতীয় দফায় সাদিক খানের জয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে সাদিক খানের দুই সন্তান রয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে তার। সাদিক খানের পছন্দের খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও বক্সিং। ২০১৪ সালে লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে জনপ্রিয় সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নেন সাদিক খান।

;

রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর অপেক্ষায় সৌদি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ৯ মে বাংলাদেশ থেকে শুরু হচ্ছে চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট। হজযাত্রীদের নিয়ে ওইদিন প্রথম ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবে। এর পরের দিন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাওয়া শুরু করবেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ১৪ জুন থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই মক্কায় ভিড় জমানো শুরু করবেন হজযাত্রীরা। এই সময়ে কোনো উমরাযাত্রী গ্রহণ করবে না দেশটি।

এ বছর মক্কায় রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর সমাগম হতে পারে, এমন ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌদি আরব।

সুন্দর ও আরামদায়কভাবে যেন হাজিরা হজ সম্পন্ন করতে পারেন সে বিষয়টি মাথায় রেখে সৌদির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।

হজ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো ধারণা করছে, এবারের রমজান মাসে রেকর্ড সংখ্যক ৩ কোটি মানুষ উমরা পালন করার পর- হজেও মুসল্লিদের ঢল নামবে।

সদ্য বিদায় নেওয়া রমজান মাসে মদিনার মসজিদে নববিতে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করেছেন। রমজানে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর দিয়ে ৯০ লাখ মানুষ মদিনায় আসেন। হজের আগে ও পরে অনেক মানুষ মদিনায় যান।

গত বছর হজপালন করেছিলেন ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন পুরুষ ও নারী। যার মধ্যে বিদেশির সংখ্যা ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ ও সৌদি আরবের হাজির সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ জন। করোনা মহামারির কারণে এর আগের তিন বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়।

হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এবার হজে ২৫ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে। তাদের প্রত্যাশা এবার গতবারের তুলনায় আরও বেশি মানুষ হজ করতে আসবেন। তাই হজের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু হয়েছে।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজপালন করতে যাবেন ৮৩ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৪ হাজার ৩০৭ জন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন।

;

মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত এক মসজিদের কথা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের বাঁশখালী মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ ইসলামের এক অনুপম ও প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের প্রাচীন মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। এর মিনার গম্বুজ মেহরাব সবই নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন মোগল স্থাপত্য শৈলীর উপমা হয়ে আছে।

বাঁশখালী সরল ইউনিয়নে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে তার একমাত্র মেয়ে মালেকা বানু চৌধুরীর স্মৃতিস্বরূপ এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্রাট শাজহান যেমন তার প্রিয়তমা সহধর্মিণীকে ভালোবেসে আগ্রার তাজমহল গড়েছিলেন। আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী তার একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন।

জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের তৎকালীন জমিদার জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে মালেকা বানু চৌধুরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে আসলে মালেকার স্মৃতি ধরে রাখতেই তৎকালীন জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে শাসক লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস শাসন আমল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ ও তৎসম ভূমি জমিদারিতে নিবন্ধনভুক্ত হয়।

সংস্কারের আগে ও পরে, ছবি : সংগৃহীত

আমীর মোহাম্মদ চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে বর্তমানে দিদারুল কবির চৌধুরী বলেন, মসজিদটি সর্বপ্রথম ১৭৩০ সালে স্থাপিত হয়। পরে জমিদারি বন্দোবস্ত হয় ১৭৯৩ সালে।

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও এর শ্রীবৃদ্ধিকরণে বাংলা ২০১০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটিতে টালি সংযোজন সংস্কার করে একটি ফলক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সর্বশেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর ছেলেরা মূল মসজিদের পুনঃসংস্কার করে একতলা বিশিষ্ট এর বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর বংশধরগণ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে আসছেন।

মালেকা বানু চৌধুরীর ভাই দেওয়ান আলী চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ বংশধর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল কবির চৌধুরীর বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালেকা বানু চৌধুরীর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালের প্রভাবশালী জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যাসন্তান ছিলেন মালেকা বানু চৌধুরী। তার বাবার জীবদ্দশায় মালেকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রভাবশালী জমিদার পুত্র জবরদস্ত খা ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে। তাদের এই বিবাহের পূর্বে মিলন-বিরহের ঘনঘটাপূর্ণ কাহিনী যাই থাকুক না কেন বর্তমানে কয়েকশত বছর ধরে মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদটি প্রাচীন অনুপম নিদর্শন হিসেবে ইসলামের দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে।

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালীগামী যেকোনো বাসে করে বাঁশখালী উপজেলার মিয়ার বাজার স্টেশনে নেমে প্রধানসড়কস্থ পশ্চিম দিকে হারুনবাজার সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোটেক্সি, মাইক্রোবাসে সরাসরি সরল বাজার যেতে হবে। সরল বাজার থেকে সামান্য দূরে পশ্চিম দিকে একই গাড়ী নিয়ে মালেকা বানুর স্মৃতিবিজড়িত দীঘি ও মসজিদ স্পটে যাওয়া যাবে।

;

হাদিসের ঘটনা

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নবীদের মধ্যে কোনো একজন জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘যে নতুন বিয়ে করেছে এবং তার সঙ্গে বাসর করার বাসনা রাখা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত তা করেনি, তেমন লোক যেন আমার সঙ্গে না যায়। এমন লোকও যেন না যায়, যে ঘর তুলেছে, কিন্তু এখনো ছাদ ঢালেনি। তেমন লোকও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল বা মাদি উট কিনে সেগুলোর বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

এরপর ওই নবী জিহাদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাজের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন) পৌঁছালেন। তারপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তার) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ সূর্যকে আটকে দেওয়া হলো। এমনকি আল্লাহতায়ালা (ওই জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।

এরপর তিনি গণিমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এলো, কিন্তু সে তা খেল না (ভস্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গণিমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য থেকে একজন আমার হাতে বায়াত করুক।’

তারপর (বায়াত করতে করতে) একজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে বায়াত করুক।’ দুই বা তিনজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ তারা গাভির মাথার মতো একটি সোনার মাথা নিয়ে এলো। তিনি তা গণিমতের সঙ্গে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।

নবী কারিম (সা.) বলেন, আমাদের আগে গণিমতের মাল কারও জন্য হালাল ছিল না। পরে আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দেন। -সহিহ বোখারি

;