হজের ইহরাম: দুই খণ্ড সাদা কাপড় যখন হজযাত্রীর সঙ্গী



ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজের সফরের নির্দিষ্ট দিন নিশ্চিত হয়ে বাড়ী থেকে বের হতে হবে। রওয়ানা দেওয়ার আগে মা-বাবা ও মুইব্বদের বলে, তাদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বের হবেন। গণহারে সবাইকে বলার প্রয়োজন নেই।

অনেকে মসজিদে মসজিদে বলে বেড়ায়। এতে যদি লোক দেখানোর মানসিকতা না থাকে তাহলে তা জায়েজ। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশি বলে বেড়ানোর পক্ষে না। অনেকে হজে যাওয়ার পূর্বে গরু জবাই করে গ্রামের লোকদের খাওয়ায়, আত্মীয়-স্বজনদের জমায়েত করে বিদায় অনুষ্ঠান করে। এগুলোতে লোক দেখানোর মনোভাব চলে আসার সম্ভাবনা আছে বলে এগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া আমি ভালো মনে করি। তবে বিদায়ের মুহূর্তে কোনো আত্মীয় চলে এলে, এতে ক্ষতি নেই। বাড়ী থেকে বিদায় হয়ে ঢাকায় হাজী ক্যাম্পে বা কাফেলার পক্ষ থেকে যেখানে উপস্থিত হতে বলা হবে সেখানে অথবা বিমানবন্দরে পৌঁছে যেতে হবে।

হজ বা উমরার জন্য নিয়ত করা যাকে ইহরাম বলা হয়ে থাকে তা আপনাকে করে নিতে হবে নির্দিষ্ট মিকাতের পূর্বেই। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার ক্ষেত্রে উড়োজাহাজে থাকা অবস্থায় মিকাত পড়বে। জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছার প্রায় এক ঘন্টা পূর্বে এ মিকাত অতিক্রম করা হয়। এর পূর্বে ইহরাম বাঁধতে হবে। তবে বিমানে উঠার পূর্বে বাসায় বা বিমানবন্দরে ইহরাম বেঁধে নিলে ভালো। সে ক্ষেত্রে ধীরে সুস্থে সুন্দর পরিবেশে ইহরাম বাঁধা যায়।

ইহরামের গুরুত্ব
ইহরাম আরবি শব্দ; ইহরামের আভিধানিক অর্থ- হারাম বা নিষিদ্ধ করা। ইসলামি পরিভাষায় ইহরাম হলো- হজ বা উমরা সম্পাদনের নিয়ত করা। ইহরাম হজের তিন ফরজের প্রথম ফরজ এবং উমরা এর দুই ফরজের প্রথম ফরজ। ইহরাম অবস্থায় মানুষ এমন একটি অবস্থায় অবস্থান করেন- যা প্রকৃত মুমিনে কামিলের মাকাম। তা-ই স্রষ্টার কাম্য এবং অলি আল্লাহদের আরাধ্য। ইহরাম হলো- সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ। ইহরাম অবস্থায় নিজেকে যেভাবে হালাল বস্তু ও কর্ম থেকে বিরত ও নিবৃত রাখা হয়েছে; ইহরামের বাইরে হারাম বস্তু ও বিষয় থেকে নিজেকে সেভাবে মুক্ত ও পবিত্র রাখাই হলো- ইহরামের মূল শিক্ষা ও দর্শন।

ইহরাম বাঁধা
আপনি যদি কেরান হজ করেন তাহলে হজ ও উমরার জন্য ইহরাম বাঁধতে হবে। যদি ইফরাদ হজ করেন তাহলে শুধু হজের জন্য ইহরাম বাঁধতে হবে। যদি তামাত্তু হজ করেন তাহলে শুধু উমরার জন্য ইহরাম বাঁধতে হবে। সব ইহরাম বাঁধার নিয়ম একই শুধু নিয়ত যা মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করা হয় সে সময় নির্দিষ্ট করতে হবে আপনি মূলতঃ কী করতে চাচ্ছেন?

ইহরাম বাঁধার পূর্বে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে নিবেন। কারণ ইহরাম বাঁধার পর নখকাটা, চুলকাটা, অন্যান্য বিশেষ স্থান পরিস্কার করার অনুমতি নেই। তাই এ গুলো সেরে নিয়ে গোসল করে পুরুষরা সেলাইবিহীন লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করে নিবেন। দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেওয়া সুন্নত। নামাজ পড়া শেষ করে পুরুষরা মাথায় ও পায়ে কিছু থাকলে তা সরিয়ে নিবেন এবং ইহরাম বাঁধার নিয়ত করবেন। নিয়ত করা মনের সিদ্ধান্তের বিষয়। মুখে উচ্চারণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। মুখে উচ্চারণ করতে চাইলে নিষেধ নেই। যে কোনোভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারলেই হলো। নিয়ত এভাবে বলা যেতে পারে-

শুধু উমরার ক্ষেত্রে (তামাত্তুর ক্ষেত্রে)

اَللّهُمَّ اِنِّى اُرِيْدُ الْعُمْرَةَ َ فَيَسِّرْهَا لِىْ وَ تَقَبَّلْهَا مِنِّىْ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা ইয়াসসিরহা লী ওয়াতাকাব্বালহা মিন্নী।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি উমরার নিয়ত করছি। তা আমার জন্য সহজ করে দাও, আর তা কবুল করো।

শুধু হজের ক্ষেত্রে (ইফরাদ হজ বা তামাত্তুর ক্ষেত্রে)

اَللّهُمَّ اِنِّى اُرِيْدُ الْحَجَّ فَيَسِّرْهُ لِىْ وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّىْ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল হাজ্জা, ইয়াসসিরহু লী ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নী।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি হজের ইচ্ছা পোষণ করেছি। তা আমার জন্য সহজ করো এবং তা আমার পক্ষ থেকে কবুল করো।

হজ ও উমরা একসঙ্গে হলে (কিরান হজের ক্ষেত্রে)

اَللّهُمَّ اِنِّى اُرِيْدُ الْحَجَّ و الْعُمْرَةَ َ فَيَسِّرْهُمَا لِىْ وَ تَقَبَّلْهُمَا مِنِّىْ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল হাজ্জা ওয়াল উমরাতা, ইয়াসসিরহুমা লী ওয়া তাকাব্বালহুমা মিন্নী।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি হজ ও উমরা পালন করতে চাচ্ছি। উভয়টি আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবুল করে নাও।

আবার বলছি, নিয়ত মুখে বলার প্রয়োজন নেই। মনে মনে হজ ও উমরার সিদ্ধান্ত নিলেই নিয়ত হয়ে গেল। নিয়তের পরে তালবিয়া বলবেন। তালবিয়ার সুন্নত বাক্য হলো-

উচ্চারণ: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বিইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।’

অর্থ: হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির। হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, হাজির আমি। নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামতরাজি ও রাজত্ব তোমারই। তোমার সঙ্গে শরীক নেই কেউ।

/uploads/files/UqnpOMie5xYGzyIRj5z3VQsJBud2Duw7jlo2smV3.jpeg

মাসয়ালা: দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইহরামের নিয়ত করার পর পুরুষরা মাথায় টুপি, পাগড়ী বা অন্যকোনো কাপড় থাকলে তা সরিয়ে নিয়ে তালবিয়া পাঠ শুরু করবে। তালবিয়া পাঠের মাধ্যমেই ইহরাম শুরু হয়। তালবিয়া যখন বলা হবে তখন পরপর তিনবার বলা ভালো। এর চেয়ে বেশিও বলা যাবে। বরং অন্য নফল আমলের তুলনায় তালবিয়া বেশি বলা ভালো। বিশেষতঃ কোনো কাজ শুরু করা বা শেষ করার সময় তালবিয়া বলা মুস্তাহাব। যেমন, সকালে ঘুম থেকে উঠে, বাইরে যাওয়ার সময়, ঘরে প্রবেশ করার সময়, গাড়িতে উঠার সময়, কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে, কারও থেকে বিদায় নেওয়ার সময়, ওপরে উঠার সময়, নীচে নামার সময় মোটকথা উঠা-বসা অবস্থায় তালবিয়া পড়তে থাকা। তালবিয়া বলার পর দোয়া করতে চাইলে দোয়া করা যেতে পারে।

মাসয়ালা: ইহরাম শুরু করার পর থেকে তালবিয়া পড়া শুরু করতে হবে। এ তালবিয়া কাবা ঘরে পৌঁছে তাওয়াফ শুরু করা পর্যন্ত বার বার সুযোগ মতো পড়তে হবে। তাওয়াফ শুরুর পর আর তালবিয়া পড়তে হবে না।

মাসয়ালা: ৮ জিলহজ যখন আবার হজের ইহরাম বাঁধা হবে তখন আবার তালবিয়া পড়া শুরু হবে। মক্কায়, মিনায়, আরাফায়, মুজদালিফায় চলবে তালবিয়া পাঠ। ১০ জিলহজ মিনায় বড় শয়তানকে পাথর মারার পর তালবিয়া পাঠ শেষ হবে।

ইহরামের সময় সতর্কতা
ইহরাম মানে হারাম করে নেওয়া। অন্য সময়ে অনেক কিছু জায়েজ হলেও ইহরাম শুরু হওয়ার পর থেকে নিম্নোক্ত কাজ করা নাজায়েজ।

১. পুরুষদের জন্য শরীরের মাপে সেলাই করা বা বুনন করা কাপড় যেমন শার্ট, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, পায়জামা, শেরওয়ানি, কোট, সোয়েটার, মোজা, জাঙ্গিয়া ইত্যাদি পরিধান করা নিষেধ।

২. টাকা-পয়সার থলে বা বেল্ট পরিধান করা যাবে।
৩. কাপড়ে বা শরীরে কোনো প্রকার সুগন্ধি মাখতে পারবে না। সুগন্ধিযুক্ত সাবানও ব্যবহার করা যাবে না। ফল-ফুলের সুঘ্রাণ ইচ্ছা করে গ্রহণ করা মাকরূহ। তবে যে কোনো সুগন্ধি যদি অনিচ্ছা সত্ত্বে নাকে ঢুকে পড়ে তাতে সমস্যা নেই।

৪. শরীর থেকে কোনো লোম বা চুল উঠানো বা কাটা নিষেধ।
৫. নখ কাটা নিষেধ।
৬. পুরুষদের মাথা বা মুখ ঢাকা নিষেধ। মহিলাদের মুখের ওপর কাপড় রাখা নিষেধ।

৭. ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী মিলন বা আনুষাঙ্গিক কাজ করা সম্পূর্ণরূপে না জায়েজ। এমনকি নারীদের সামনে এ সংক্রান্ত কথা বলাও নাজায়েজ।

৮. স্থলভাগের কোনো প্রাণী হত্যা বা শিকার করা নিষেধ। এমনকি নিজে শিকার না করে অন্য কাউকে শিকার করতে ইশারা করাও নিষেধ।
৯. ঝগড়া-বিবাদ করা নিষেধ।
১০. গায়ে বা কাপড়ে লেগে থাকা উকুন সরানোও নিষেধ।
১১. টিড্ডি মারাও নাজায়েজ।

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

** নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?

** যেসব পদ্ধতিতে হজ আদায় করা যায়

** বদলি হজের লোক বাছাইয়ে সর্তক থাকুন

** পবিত্র হজ ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে

** জেনে নিন হজে উচ্চারিত কিছু আরবি পরিভাষার অর্থ

** ৫১ সদস্যের হজ প্রশাসনিক দল গঠন

** আল্লাহর ঘর কাবা শরীফের আদবসমূহ

** হজে কোনো কোরবানি নেই, আছে দমে শোকর

** হজ আদায়ে তিন কাজ, অনাদায়ে হজ হবে না

   

লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়রের রেকর্ড



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাদিক খান হচ্ছেন লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মেয়র পদে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। লন্ডনের মেয়র হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন থেকেই পদটি ধরে রেখেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম এই রাজনীতিক।

সাদিক খানের জন্ম লন্ডনে, ১৯৭০ সালের ৮ অক্টোবর। এর দুই বছর আগে ১৯৬৮ সালে তার মা-বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমান। বাবা আমানউল্লাহ ছিলেন বাসচালক। মা শেহরুন করতেন দরজির কাজ। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাদিক পঞ্চম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তার দাদা-দাদি ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সাদিক খানের পড়ালেখা ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে। বিষয় ছিল আইন। পড়াশোনা শেষে মানবাধিকার-বিষয়ক আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কম বয়সেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টির রাজনীতিতে।

১৯৯৪ সালে লেবার পার্টির হয়ে লন্ডনের ওয়ান্ডসওর্থ বারার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন সাদিক খান। তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ লন্ডনের টুটিং আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে গর্ডন ব্রাউন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাদিক খান। ২০১০ সালে লেবার পার্টি বিরোধী দলে গেলে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভায় বিচার বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী, লর্ড চ্যান্সেলর (ছায়া অর্থমন্ত্রী) ও লন্ডন-বিষয়ক ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন সাদিক খান। সে বছরের ৯ মে কনজারভেটিভ পার্টির জেক গোল্ডস্মিথকে হারিয়ে প্রথমবার লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০২১ সালে কনজারভেটিভ পার্টির সোন বেইলিকে পরাজিত করে মেয়র পদ ধরে রাখেন সাদিক।

এবার তৃতীয় দফায় সাদিক খানের জয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে সাদিক খানের দুই সন্তান রয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে তার। সাদিক খানের পছন্দের খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও বক্সিং। ২০১৪ সালে লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে জনপ্রিয় সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নেন সাদিক খান।

;

রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর অপেক্ষায় সৌদি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ৯ মে বাংলাদেশ থেকে শুরু হচ্ছে চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট। হজযাত্রীদের নিয়ে ওইদিন প্রথম ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবে। এর পরের দিন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাওয়া শুরু করবেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ১৪ জুন থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই মক্কায় ভিড় জমানো শুরু করবেন হজযাত্রীরা। এই সময়ে কোনো উমরাযাত্রী গ্রহণ করবে না দেশটি।

এ বছর মক্কায় রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর সমাগম হতে পারে, এমন ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌদি আরব।

সুন্দর ও আরামদায়কভাবে যেন হাজিরা হজ সম্পন্ন করতে পারেন সে বিষয়টি মাথায় রেখে সৌদির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।

হজ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো ধারণা করছে, এবারের রমজান মাসে রেকর্ড সংখ্যক ৩ কোটি মানুষ উমরা পালন করার পর- হজেও মুসল্লিদের ঢল নামবে।

সদ্য বিদায় নেওয়া রমজান মাসে মদিনার মসজিদে নববিতে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করেছেন। রমজানে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর দিয়ে ৯০ লাখ মানুষ মদিনায় আসেন। হজের আগে ও পরে অনেক মানুষ মদিনায় যান।

গত বছর হজপালন করেছিলেন ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন পুরুষ ও নারী। যার মধ্যে বিদেশির সংখ্যা ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ ও সৌদি আরবের হাজির সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ জন। করোনা মহামারির কারণে এর আগের তিন বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়।

হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এবার হজে ২৫ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে। তাদের প্রত্যাশা এবার গতবারের তুলনায় আরও বেশি মানুষ হজ করতে আসবেন। তাই হজের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু হয়েছে।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজপালন করতে যাবেন ৮৩ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৪ হাজার ৩০৭ জন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন।

;

মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত এক মসজিদের কথা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের বাঁশখালী মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ ইসলামের এক অনুপম ও প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের প্রাচীন মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। এর মিনার গম্বুজ মেহরাব সবই নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন মোগল স্থাপত্য শৈলীর উপমা হয়ে আছে।

বাঁশখালী সরল ইউনিয়নে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে তার একমাত্র মেয়ে মালেকা বানু চৌধুরীর স্মৃতিস্বরূপ এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্রাট শাজহান যেমন তার প্রিয়তমা সহধর্মিণীকে ভালোবেসে আগ্রার তাজমহল গড়েছিলেন। আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী তার একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন।

জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের তৎকালীন জমিদার জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে মালেকা বানু চৌধুরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে আসলে মালেকার স্মৃতি ধরে রাখতেই তৎকালীন জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে শাসক লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস শাসন আমল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ ও তৎসম ভূমি জমিদারিতে নিবন্ধনভুক্ত হয়।

সংস্কারের আগে ও পরে, ছবি : সংগৃহীত

আমীর মোহাম্মদ চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে বর্তমানে দিদারুল কবির চৌধুরী বলেন, মসজিদটি সর্বপ্রথম ১৭৩০ সালে স্থাপিত হয়। পরে জমিদারি বন্দোবস্ত হয় ১৭৯৩ সালে।

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও এর শ্রীবৃদ্ধিকরণে বাংলা ২০১০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটিতে টালি সংযোজন সংস্কার করে একটি ফলক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সর্বশেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর ছেলেরা মূল মসজিদের পুনঃসংস্কার করে একতলা বিশিষ্ট এর বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর বংশধরগণ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে আসছেন।

মালেকা বানু চৌধুরীর ভাই দেওয়ান আলী চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ বংশধর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল কবির চৌধুরীর বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালেকা বানু চৌধুরীর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালের প্রভাবশালী জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যাসন্তান ছিলেন মালেকা বানু চৌধুরী। তার বাবার জীবদ্দশায় মালেকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রভাবশালী জমিদার পুত্র জবরদস্ত খা ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে। তাদের এই বিবাহের পূর্বে মিলন-বিরহের ঘনঘটাপূর্ণ কাহিনী যাই থাকুক না কেন বর্তমানে কয়েকশত বছর ধরে মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদটি প্রাচীন অনুপম নিদর্শন হিসেবে ইসলামের দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে।

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালীগামী যেকোনো বাসে করে বাঁশখালী উপজেলার মিয়ার বাজার স্টেশনে নেমে প্রধানসড়কস্থ পশ্চিম দিকে হারুনবাজার সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোটেক্সি, মাইক্রোবাসে সরাসরি সরল বাজার যেতে হবে। সরল বাজার থেকে সামান্য দূরে পশ্চিম দিকে একই গাড়ী নিয়ে মালেকা বানুর স্মৃতিবিজড়িত দীঘি ও মসজিদ স্পটে যাওয়া যাবে।

;

হাদিসের ঘটনা

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নবীদের মধ্যে কোনো একজন জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘যে নতুন বিয়ে করেছে এবং তার সঙ্গে বাসর করার বাসনা রাখা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত তা করেনি, তেমন লোক যেন আমার সঙ্গে না যায়। এমন লোকও যেন না যায়, যে ঘর তুলেছে, কিন্তু এখনো ছাদ ঢালেনি। তেমন লোকও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল বা মাদি উট কিনে সেগুলোর বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

এরপর ওই নবী জিহাদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাজের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন) পৌঁছালেন। তারপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তার) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ সূর্যকে আটকে দেওয়া হলো। এমনকি আল্লাহতায়ালা (ওই জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।

এরপর তিনি গণিমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এলো, কিন্তু সে তা খেল না (ভস্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গণিমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য থেকে একজন আমার হাতে বায়াত করুক।’

তারপর (বায়াত করতে করতে) একজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে বায়াত করুক।’ দুই বা তিনজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ তারা গাভির মাথার মতো একটি সোনার মাথা নিয়ে এলো। তিনি তা গণিমতের সঙ্গে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।

নবী কারিম (সা.) বলেন, আমাদের আগে গণিমতের মাল কারও জন্য হালাল ছিল না। পরে আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দেন। -সহিহ বোখারি

;