ধৈঞ্চা চাষ করে মাটির উর্বরতা বাড়াচ্ছেন কৃষকরা
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার মিরপুরে সবুজ সার তথা ধৈঞ্চার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাসায়নিক সার ব্যবহারে দিনকে দিন জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। একারণে মাটির গুণাগুণ ও জৈব শক্তি বাড়াতে এর চাষ বাড়ছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এখন চলছে রোপা আমন চাষের প্রক্রিয়া। জমির শক্তি বাড়াতে উপজেলা কৃষি অফিসও কৃষকদের ধৈঞ্চা চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। মাসখানেক আগে জমিতে ধৈঞ্চার বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেসব, জমিতে চাষ করে সবুজ সারে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।
সরেজমিন মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া ব্লকের চুনিয়াপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ধৈঞ্চা চাষের পর জমিতে মিশিয়ে দিয়ে তা সবুজ সার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বারুইপাড়া ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী মাহিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কোনো উদ্ভিদকে চাষ করে সবুজ অবস্থায় তা মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে যে সার উৎপন্ন হয় তাকে সবুজ সার বলা হয়। স্থানীয় কৃষকদের জমির উর্বরতা রক্ষা ও মাটিতে জৈব পদার্থের গুণাগুণ রক্ষায় ধৈঞ্চা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তার ব্লকে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে ধৈঞ্চার চাষ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ৪ কেজি ধৈঞ্চা বীজের প্রয়োজন পড়ে। প্রতি কেজি বীজের দাম ৫০ টাকা। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যেও কৃষকদের মাঝে সরবরাহ হয়ে থাকে।
চুনিয়াপাড়া কৃষক খোসবার আলী নিজে প্রায় ২ বিঘা জমিতে ধৈঞ্চা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমি গত ৪ বছর ধরে ধৈঞ্চা চাষ করে আসছি। এর ফলে রোপা আমন চাষে সাধারণত যে পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হতো তার অর্ধেক সার ব্যবহার করা লাগবে বলেও জানান তিনি।
ওই এলাকার আরেক কৃষক মাসুদ আলী এবার ৪ বিঘা জমিতে ধৈঞ্চা চাষ করেছেন। তিনি জানান, আমি বিষয়টি জানার পর প্রতিবছরই ধৈঞ্চার চাষ করে থাকি। এরফলে রাসায়নিক সার কম প্রয়োজন হয়। তিনি আরো জানান, একবার যিনি (কৃষক) ধৈঞ্চার চাষ শুরু করেছেন তিনি প্রতি বছরই চাষ করবেন।
কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে দুইবার চাষ দিয়ে প্রতি হেক্টর জমিতে ৪০-৫০ কেজি বীজ ছিটিয়ে বুনতে হয়। বীজ রোপণের ৪০ দিন পর গাছে ফুল আসার সময় সবুজ থাকা অবস্থায় মই দিয়ে তা মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। এরও ১০-১২ দিন পর আবার মই দিলে তা পচে সবুজ সারে পরিণত হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, জমিতে মাত্রা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের উপাদান উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। ধৈঞ্চা চাষে সবুজ অবস্থায় এটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার ফলে একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা বাড়ে অপরদিকে মাটির জৈব পদার্থের উপাদানের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে নাইট্রোজেনের পরিমাণও বাড়ে। সবুজ গাছ পচার সময় জীবাণুর কার্যকারিতা বাড়ে। সবুজ জাতীয় গাছ মাটির আচ্ছাদন সৃষ্টি করে রাখে ও ভূমিক্ষয় রোধ হয়। এতে করে বেলে মাটিতে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং মাটির অভ্যন্তরে বাতাস চলাচলে সুবিধা হয়। তিনি আরো জানান, চলতি বছর উপজেলার প্রায় ২ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে ধৈঞ্চা আবাদ করা হয়েছে।