গ্রেনেড হামলা: জঙ্গি-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জড়িত
আগামী ১০ অক্টোবর ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। হাই-প্রোফাইল এই মামলার রায়কে ঘিরে জনমনে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক।
মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন (ভারপ্রাপ্ত) তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।
এছাড়া এ মামলার অন্যতম আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যরা।
তাদের মধ্যে আছেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, ইকবাল, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর ওরফে আবু হুমাইয়া ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবউল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সায়ীদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গির আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামীম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, আবিদ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামীম ওরফে রাশেদ মো. উজ্জল ওরফে রতন ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।
হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায়, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। বাকিরা কারাগারে বন্দী আছেন।
হুজি সদস্য মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, ইকবাল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি শফিকুর রহমান কোথায় আছেন সেই তথ্য কারও কাছেই নেই।
গোয়েন্দাদের ধারণা, নাম-ঠিকানা ও চেহারার ধরন পাল্টে তারা দেশে অথবা বিদেশে অবস্থান করেছেন।
এদিকে জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎকালীন কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা। তাদেরকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে আছেন- এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আহমদ, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক আইজিপি খোদাবক্স, সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ।
এদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আহমদ যুক্তরাষ্ট্রে, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান ইউরোপের কোনো এক দেশে পলাতক আছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। বাকিরা এখন কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট শনিবার তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে জার্মানির তৈরি আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে ভয়াবহ হামলা করা হয়। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা। হামলায় তিনি বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির নেতাসহ ২৪ জন মারা যান। কয়েক শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হন। যারা এখনও শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে যন্ত্রণাকাতর জীবন পার করছেন।