পূজার ছুটিতে বেলুন বিক্রেতা স্কুলছাত্র সোহান
‘বাবার কাজে সহযোগিতা করতে আমার বেশ ভালো লাগে। তবে আমি শুধু স্কুল বন্ধ দিলে বেলুন নিয়ে বের হই। তাও বন্ধের প্রতিদিন নয়। আমি দিনে সর্বোচ্চ ৮টি বেলুন বিক্রি করতে পেরেছি। আমার এ কাজে বাবা খুব খুশি হন।’
কথাগুলো বলছিলেন রঙিন বেলুন বিক্রেতা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভাঙ্গাখাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সোহান। তার বাবা আবু সিদ্দিক, পেশায় বেলুন বিক্রেতা। লক্ষ্মীপুর শহরের অলিগলিতে ফেরি করে বেলুন বিক্রি করেন আবু সিদ্দিক।
পূজার ছুটিতে অন্য শিশুরা যখন বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়, নানান জিনিস কিনে দিতে বায়না ধরে, সে সময় কতগুলো রঙিন বেলুন হাতে বিক্রির জন্য রাস্তায় বের হয়েছে স্কুলছাত্র সোহান। তার চোখেমুখে কোন বিরক্তি নেই, একটি বেলুন বিক্রি করতে পারলেই তার তৃপ্তি মেলে।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর সদরের চক বাজার এলাকায় দেখা মিলে সোহানের। কতগুলো রঙিন বেলুন হাতে দাঁড়িয়ে আছে সে। জানার আগ্রহ থেকে তার কাছে যেতেই সে তার পরিচিত গলায় বলতে লাগল, ‘বেলুন লাগবে, ভাই, বেলুন’। সোহানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সে রাজি হল। কিন্তু বিনয়ের সাথে শর্ত জুড়ে দিল যে, ক্রেতা আসার আগেই কথা শেষ করতে হবে।
কথা বলে জানা যায়, দুর্গাপূজায় সোহানের স্কুল ছুটি হয়েছে। এ জন্যই সে বেলুন বিক্রি করতে বের হয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকলে প্রায়ই এ কাজটি করে। মূলত এটি তার বাবার ব্যবসা। তবে তাকে জোর করে এ কাজে পাঠানো হয়নি।
বাবাকে সহযোগিতা করতেই বেলুন নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে সোহান। লক্ষ্মীপুর শিশু পার্ক এলাকায় সে বেলুন বিক্রি করে থাকে। তাদের কোন স্থায়ী দোকান নেই। প্রতিদিনই গ্যাস দিয়ে ২০-৩০টি বেলুন ফুলিয়ে সেগুলো বিক্রির জন্য ঘর থেকে বের হন তার বাবা।
পার্ক, কিন্ডার গার্টেন, স্কুল-কলেজ ও বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে এসব বেলুন বিক্রি করেন সোহানের বাবা আবু সিদ্দিক। একটি বেলুন ৬০-৮০ টাকা ধরে বিক্রি করে থাকেন। দিনে প্রায় ১০-১৫টি বিক্রি করতে পারেন। আবার মাঝে মাঝে আরো কমও বিক্রি হয়।
মাছ, পাখি, পশু ও উড়োজাহাজ আকৃতির ও নানা রঙের বেলুনগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। খুব সহজেই এসব শিশুদের মনকে আকৃষ্ট করে। বাচ্চাদের জন্য কিনে নিয়ে যান বাবা-মা। যে শিশুদের জন্য এ বেলুন সে বেলুনের বিক্রেতাও একজন শিশু।
ছেলেরা সবসময় তাদের বাবাকে কোনো না কোনো কাজে সহযোগিতা করতে চায়। হয়তো প্রাপ্তবয়স্ক হলে এটি বেশি দেখা যায়। তবে ভিন্ন রকম অনুভূতির সৃষ্টি হয় স্কুলছাত্র জহিরুল ইসলাম সোহানকে দেখে। মাত্র ১১ বছর বয়সে সে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে।