মৃত প্রায় ঝিনাইদহের খরস্রোতা ১২ নদী
দখল, দূষণ আর নাব্যতা সংকটে মৃত প্রায় ঝিনাইদহের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ১২টি নদী। নদীর বুকে এখন চলছে কলের লাঙলের ফলা। আর নদীর সঙ্গে জড়িতদের জীবন-জীবিকা ঘুরেছে অন্য পেশায়। বিদায় নিয়েছে মৎস্য সম্পদ। এ পর্যন্ত কোনো সংস্কার না হওয়ায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
জানা যায়, ঝিনাইদহ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ওই নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে কালী, কুমার, ডাকুয়া, নবগঙ্গা, বেগবতী, চিত্রা, ফটকি, ভৈরব, কপোতাক্ষ, কোদলা, যমুনা ও বেতনা। নদীগুলো সংস্কার করা হয় না কোনোদিন। এতে উৎস মুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছে এলাকার মানুষ। চাষ করা হচ্ছে ধান, সরিষাসহ নানা ফসল।
শৈলকুপা উপজেলার মৎস্যজীবী নবীনচন্দ্র জানান, শৈলকুপার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালীগঙ্গ নদীতে এক সময় লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা চলত। ঢাকা-ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা লঞ্চ যোগে শৈলকুপায় ব্যবসা করতে আসত। নদীতে তখন মাছ পাওয়া যেত। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। সারাদিন মাছ ধরলেও নিজের খচরটাও উঠে না।
ঝিনাইদহ শহরের ভুটিয়ারগাতি গ্রামের অসীত সরকার জানান, এক সময় নবগঙ্গা নদীতে মাছ ধরে তার সংসার চলত। এখন তিনি ইজিবাইক চালান। নদীতে মাছ ধরতে গেলে পাওয়া যায় না। নদীগুলো থেকে মাছ বিদায় নিয়েছে। তার মতো নদী তীরবর্তী জেলেরা বেকার হয়ে এখন অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির সংকট দেখা দেয়। তাই নদী পুনঃখননের দাবি জানান তিনি।
ঝিনাইদহ জেলার মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা দেখেছি ও শুনেছি ঝিনাইদহের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলো খরস্রোতা ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন নদীগুলোতে পানি থাকে না। যে কারণে নদীগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল যদি নদীগুলো পুনঃখননের ব্যবস্থা করত, তাহলে দখলের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি নদীগুলো পুনরায় আগের যৌবন ফিরে পেত।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের কাজের মধ্যে রয়েছে ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন করা। যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমানে জেলার ৬টি উপজেলার ৭টি খান পুনঃখনন শুরু হয়েছে। ২য় পর্যায়ে কোদলা, বেগবতী ও ভৈরব নদী খননের প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছি। এছাড়াও অন্যান্য নদী জরিপ কার্য চলমান রয়েছে। জপির শেষ হলে একটি পরিকল্পনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে।’
তিনি আরও জানান, ঝিনাইদহে যে নদীগুলো রয়েছে তার উৎস্য মুখ পার্শ্ববর্তী মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে। তাই উৎস্য মুখগুলোতেও খনন করা প্রয়োজন।