জনপ্রিয় হচ্ছে ভাসমান বেডে সবজি চাষ
বছরের বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধ থাকে ঝালকাঠির বেশ কিছু জমি। আর জলাবদ্ধতার কারণে আবাদ করতে না পারায় এক সময় পতিত থাকত ওই জমিগুলো। কিন্তু বছর খানেক ধরে ঝালকাঠিতে বন্যা সহিষ্ণু ভাসমান বেডে সবজি ও মশলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ভাসমান বেডে বিভিন্ন প্রকার সবজির ভালো ফলন হওয়ায় লাভের মুখ দেখছে কৃষকরা। জলাবদ্ধতা এবং বন্যা দুর্গত এলাকার কৃষকরা এ ধরনের ভাসমান বেডে সারা বছর ধরে সবজি চাষ করতে পারে। তাই জেলায় শতাধিক প্রদর্শনী প্লট করে দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কখনো ডুববে না, সেচের প্রয়োজন পড়বে না, কীটনাশক দিতে হবে না, এমনকি সারেরও প্রয়োজন হবে না এমন সবজি ক্ষেত এতো দিন ছিল কৃষকদের স্বপ্নে। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে পরিণত করছে কৃষকরা।
দু-একটি নয়, এমন শতাধিক ভাসমান বেডে বিভিন্ন প্রকার সবজি ও মশলা আবাদ করেছে ঝালকাঠির কৃষকরা। প্রায় সারা বছরই জলাবদ্ধতা থাকে এবং বন্যা ও বৃষ্টির জন্য যেসব এলাকার ক্ষেত পানিতে ডুবে থাকে, সেসব জায়গায় কৃষি বিভাগ নিজেদের উদ্যোগে কলাগাছের ভেলায় এবং কচুরিপানা দিয়ে বেড করে দিয়েছে।
ভাসমান এসব বেডে আবাদ হচ্ছে লাশ শাক, ঢেঁড়স, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি। একই বেডে বছরে কমপক্ষে চারবার ফসল চাষ করা যায়, পাশাপাশি মাছ চাষও করা যায়। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে যথেষ্ট লাভ হওয়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহও বাড়ছে।
সবচেয়ে বড় কথা কম জমিতে বেশি ফসল আবাদ সম্ভব হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব বেডে উৎপাদিত লাল শাক, পালন শাক, ঢেঁড়স, ধনিয়া পাতা ও লাউ বিক্রি শুরু করেছে তারা। এছাড়াও শালগম ও কাঁচা মরিচ চাষও শুরু করেছে ভাসমান বেডে।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কৃষক মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমার এক একর জমি জলাবদ্ধ থাকায় এখানে কোনো ফসল হতো না। এখন ভাসমান বেডে চাষাবাদ কারার কারণে এই জমিতে ফসল হচ্ছে। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি।’
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ঝালকাঠি জেলার প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি সারা বছর জলাবদ্ধ থাকে। এছাড়া প্রতিবছরই বন্যা, অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ক্ষেত তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়। তাই সময় মতো ফসল আবাদ করা যায় না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা। তবে ভাসমান বেডে সবজি ও মশলার আবাদ করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক জানান, ভাসমান বেডে সবজি ও মশলার আবাদ সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করছে। এটি একটি লাভজনক পদ্ধতি। কৃষকরা এখান থেকে লাভবান হতে পারবে।