মামলা, জরিমানা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ট্রাফিক কার্যক্রম!

  • মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

২০১৮ সালে রাজধানীর বিমান বন্দরের রোডের হোটেল রেডিসন এলাকায় বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর পরেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের এমন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীসহ সারাদেশের সড়কপথের শৃঙ্খলা ফেরাতে নানা আশ্বাস আসে সরকারের পক্ষ থেকে।

এদিকে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ছাত্র আন্দোলনের পর নিয়মিত ট্রাফিক সপ্তাহ ও ট্রাফিক শৃঙ্খলা মাসের কার্যক্রম চালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়া চলতি মাসের ১৫-৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৭ দিনব্যাপী ডিএমপির বিশেষ ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম চলছে।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের দাবি, ট্রাফিক সপ্তাহ এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলা মাসের পর পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক অনুকূলে।

তবে এ বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ডিমএমপির ট্রাফিক নিয়ে বিশেষ কার্যক্রম শুধুমাত্র মামলা ও জরিমানা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। রাজধানীর গণপরিবহন ও সড়কপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ কার্যক্রম কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞ ও সচেতন নাগরিকদের এই মতামতের সত্যতা ডিএমপির বিশেষ ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম চলাকালীন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পাওয়া গেছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ডিএমপির বিশেষ ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রমে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মামলার মেশিনে মামলার পরিমাণ ও জরিমানার রশিদই শুধুমাত্র বাড়েছে। রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। তাই এ ধরনের বিশেষ ট্রাফিক কার্যক্রম রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ব্যর্থ হচ্ছে মনে করছেন অনেকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/17/1547736999169.JPG

বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) ডিএমপির ১৭ দিনের ট্রাফিক কার্যক্রমের তৃতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেই আগের মতোই নগরবাসীরা ট্রাফিক আইন মানছে না, উল্টো পথে গাড়ি চলছে, অকার্যকর সিগন্যাল ব্যবস্থা ও প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত চালকরা।

রাজধানীর মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, শান্তিনগর, কাকরাইল, পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রাফিক সার্জেন্টদের সামনেই পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে বাস থামিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন।

অপরদিকে কোনো গণপরিবহনই নির্ধারিত বাস স্টপেজে থামছে না। যেখানে সেখানে নিজেদের ইচ্ছা মতো চালকরা রাস্তার ওপর বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন। এক কথাই বলা চলে বিশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থায় কোনো শৃঙ্খলার লেশমাত্র দেখা যায়নি।

তবে মাঝেমধ্যে ট্রাফিক সার্জেন্টরা কিছু কিছু মোটরসাইকেল বা বাসের চালকদের লাইসেন্সের কাগজপত্র চেক করে মামলা দিয়ে দিচ্ছেন। অন্যথায় ডিমএমপির বিশেষ এই ট্রাফিক কার্যক্রমে কোথাও জনসচেতনতার কার্যক্রম দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজ্জামেল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জরিমানা বা মামলা দিয়ে রাজধানীতে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। কারণ এসব কর্মসূচিতে মানুষ সচেতন হচ্ছে না। তাই মানুষ সচেতন হয় এমন কর্মসূচি দিতে হবে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় গবেষকদের নামাতে হবে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/17/1547736559590.JPG

তবে সামাজিক আন্দোলন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর কার্যকরী পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। এ বিষয়ে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পুলিশ চেষ্টা করছে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফেরাতে। তবে মোটরসাইকেল ও পথচারীদের জন্য সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমি মনে করি এ ধরনের কঠোর কর্মসূচি মাসব্যাপী নয় দীর্ঘ সময় ধরে চলা উচিত। এছাড়া এক সঙ্গে সব কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন প্রাথমিকভাবে মোটরসাইকেল চালক ও পথচারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত। পরে আস্তে আস্তে বাকি সব বিষয়ে নজর দেওয়া যাবে। পথচারীরা ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলে তাদের ফাইন করা উচিত। নিজের পকেট থেকে টাকা গেলে তখন মানুষ ঠিক হবে।’

এদিকে ডিএমপির বিশেষ ট্রাফিক কার্যক্রমের প্রথমদিন ১৫ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সর্বক্ষেত্রে আপনারা ট্রাফিক আইন মেনে চলুন।’