আসছে কোরবানি, চামড়া শিল্পনগরীকে ভোগাবে এই সড়ক

  • জাহিদুর রহমান,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাভার: ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। ড্রেন উপচে বিষাক্ত বর্জ্যে সয়লাব রাস্তা। সঙ্গে বিকট দুর্গন্ধ। চিত্রটি সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর। আসছে কোরবানির ঈদের পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত নিয়ে রাস্তার এই করুণ হাল বড় ধরনের ভোগান্তির সৃষ্টি করবে এমন আশঙ্কা ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকদের।

হেমায়েতপুর বাগবাড়ি মোড় থেকে চামড়া শিল্প নগরীর প্রধান ফটক পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা পুরোটাই ভাঙাচোরা।

বিজ্ঞাপন

ট্রাক চালক ইদ্রিস মিয়া জানান, রাস্তার যে হাল তাতে ঈদের পর চামড়া এখানে নিয়ে এসে ট্রাকসহ সড়কেই ফেঁসে যেতে হবে। আর একটি ট্রাক যদি ফেঁসে যায় তাহলে অচল হয়ে পড়বে গোটা সড়ক।

তার মতে, এত বড় একটি শিল্প নগরীর সঙ্গে রাস্তাঘাটের এই চিত্র বেমানান।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/12/1534055764424.jpg

অটো চালক সামছু হালদার জানান, রাস্তার এমন হালে অটো নিয়ে সব স্থানে যাওয়া যায়না। যে কারণে শ্রমিকদের বিভিন্ন কারখানায় পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয়।

চামড়া শিল্প নগরীর একজন কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা ঈদের আগেই সড়ক মেরামতের নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু ঠিকাদারদের কাজের ধীরগতির কারণে ঈদের পর দুর্ভোগ কতটা বাড়বে তা এখনই আঁচ করা যায়।’

এদিকে যে কারণে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারের ধলেশ্বরীর তীরে আনা হয়েছিল তার মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যেতে বসেছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায়। বেশ কিছু কারখানার তরল বর্জ্য চোরাপথে পাইপ দিয়ে সরাসরি ফেলতে দেখা গেছে ধলেশ্বরীতে। যে কারণে ধলেশ্বরীর পানিও বিষাক্ত হয়ে বিপন্ন করে তুলেছে নদী ও আশপাশের পরিবেশ। আবার টুকরো চামড়ার উচ্ছিষ্ট, ঝিল্লির মতো কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শিল্প নগরীর একটি অংশ এখন রীতিমতো পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/12/1534055789008.jpg

স্থানীয় পরিবেশবিদ সোহরাব হোসেন জানান, বুড়িগঙ্গা নদীকে রক্ষা করতে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে আনা হলেও দূষণের মাত্রা কমেনি। বরং এখানকার ধলেশ্বরী এখন মরতে বসেছে এই ট্যানারির কারণে।

তিনি জানান, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) ক্রোমিয়াম রিকভারি ইউনিট চালু না হওয়ায় বর্জ্যের যে ভাগাড় গড়ে উঠেছে তা বৃষ্টিতে গড়িয়ে নদীতে পড়ছে। আর তাতে মারাত্মক দূষণের কবলে পড়েছে নদীগুলো। ইতোমধ্যে নদীতে অক্সিজেনের মাত্রাও কমে গেছে।

এদিকে চামড়া শিল্পে ট্যানারি মালিকদের বরাদ্দ করা প্লটের দাম নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন জটিলতা। শিল্প মন্ত্রণালয় প্লটের বর্গফুট প্রতি দাম ১৭৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও তা মানতে নারাজ ট্যানারি মালিকরা।

সরকারের জমির দামের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের নির্মাণ ব্যয় যুক্ত করে নতুন দাম নির্ধারণ করায় তা মানছেন না শিল্প মালিকরা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/12/1534055813461.jpg

বাংলাদেশ ট্যানারি এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, আগে প্রতি বর্গফুট জমির দাম ১৯৫ টাকা করে নির্ধারণের পর তা যথারীতি শোধ করা হয়েছে।এখন সরকার নতুন করে দাম নির্ধারণ করেছে ১৭৯০ টাকা।যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের নির্মাণ ব্যয়। এটা তো অযৌক্তিক। কারণ কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের নির্মাণ ব্যয় সরকারেরই পরিশোধ করার কথা। সরকার তাদের এমটাই আশ্বাস দিয়েছিল। তাহলে তারা কেন সেটার ব্যয় নির্বাহ করবে।

এছাড়া চামড়া শিল্প নগরীর ২০৭টি প্লট ১৫৬ ট্যানারিকে বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনো উৎপাদনে যায়নি ৪১টির ট্যানারি মালিক। এ ব্যাপারে চালু না হওয়া এসব ট্যানারিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও তাতে খুব বেশি পাত্তা দেয়নি সংশ্লিষ্টরা।

চামড়া শিল্প নগরীর সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, সার্বিকভাবে প্রকল্পের কাজে গতি রয়েছে। ছোটখাট সমস্যা থাকলেও তা তেমন জটিল নয়।