বঙ্গবন্ধুর সাহিত্যপ্রেম

  • ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

শিল্প-সাহিত্যের প্রতি সবসময়ই অগাধ ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করতেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিল্প-সাহিত্য যে একটি জাতির পরিচয় বহন করে, সেই সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিলেন তিনি। রাজনীতি শিল্প-সাহিত্য থেকে বেশ দূরের বিষয় হলেও শিল্পানুরাগী বঙ্গবন্ধুর অনেক কাজে, কর্মে ও কথায় প্রকাশিত হতো শিল্প-সাহিত্যের ছোঁয়া। তাই তো তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের ‘মহাকবি’। বিশ্ব মিডিয়ায় পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ হিসেবে। আর স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের শিল্প-সাহিত্যের প্রসারের ক্ষেত্রে তিনি রেখেছিলেন অনবদ্য ও অসাধারণ ভূমিকা।

নিয়মিত বই পড়তেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর ছিল দুর্নিবার গ্রন্থপ্রীতি। ছিলেন সচেতন পাঠক। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, উইনস্টন চার্চিল, আব্রাহাম লিংকন, নেলসন ম্যান্ডেলা, জন এফ কেনেডি, ফিদেল কাস্ত্রো প্রমুখ রাজনৈতিক নেতার মতো যখনই অবসর পেতেন, তখনই তিনি বইয়ের বিচিত্র জগতে হারিয়ে যেতেন। বঙ্গবন্ধু যে প্রচুর শিল্প-সাহিত্যের বই পড়তেন, তা তাঁর ভাষণ, বক্তৃতা, চিঠিপত্র আর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে অবস্থান করছিল রবার্ট পেইন, জর্জ বার্নার্ডশ, বার্ট্রান্ড রাসেলের রচনাবলি, মাও সেতুং স্বাক্ষরিত গ্রন্থ। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ছিল তাঁর প্রাণ। ১৯৪৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণকালে একই গাড়িতে করাচি আসার পথে উর্দুভাষী কয়েকজন পাকিস্তানিকে তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন। (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, পৃ. ২১৭) ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের শান্তি সম্মেলনে যোগদান করে তিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেছিলেন। (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, পৃ. ২২৮)

বিজ্ঞাপন

১৯৪৮ থেকে ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকদের রুদ্ররোষে ২৪টি মামলায় ১৮ বার জেলে যেতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। সর্বমোট ১২ বছর জেল খেটেছেন তিনি। আর ১০ বছর ছিলেন কড়া নজরদারিতে। জেলবন্দী নিঃসঙ্গ জীবনেও তাঁর একমাত্র অবলম্বন ছিল বই। ২১ ডিসেম্বর, ১৯৫০ সালে ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট জেল থেকে বঙ্গবন্ধু একটি চিঠি লিখেছিলেন গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। সেই চিঠিটি তৎকালীন সরকার বাজেয়াপ্ত করলেও গবেষকরা পরবর্তী সময় উদ্ধার করেন। সেই চিঠিতে আছে—“গত অক্টোবরে কেন্দ্রীয় জেলখানার গেটে যখন আমাদের দেখা হয়েছিল, আপনি কথা দিয়েছিলেন, আমাকে কিছু বই পাঠিয়ে দেবেন। তবে এখনো কোনো বই পাইনি। ভুলে যাবেন না এখানে আমি একা আর বই-ই আমার একমাত্র সঙ্গী।” সত্যিই, কত অসাধারণ ছিল বইয়ের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “১৯৪৯ থেকে আব্বা যতবার জেলে গেছেন কয়েকখানা নির্দিষ্ট বই ছিল, যা সব সময় আব্বার সঙ্গে থাকত। জেলখানার বই বেশিরভাগই জেল লাইব্রেরিতে দান করে দিতেন, কিন্তু আমার মা’র অনুরোধে এই বই কয়টা আব্বা কখনো দিতেন না, সঙ্গে নিয়ে আসতেন। তার মধ্যে রবীন্দ্র-রচনাবলী, শরৎচন্দ্র, নজরুলের রচনা, বার্নার্ডশর কয়েকটা বইতে সেন্সর করার সিল দেওয়া ছিল। জেলে কিছু পাঠালে সেন্সর করা হয়, অনুসন্ধান করা হয়, তারপর পাস হয়ে গেলে সিল মারা হয়। পরপর আব্বা কতবার জেলে গেলেন তার সিল এই বইগুলোতে ছিল। মা এই কয়টা বই খুব যত্ন করে রাখতেন। আব্বা জেল থেকে ছাড়া পেলেই খোঁজ নিতেন বইগুলো এনেছেন কিনা। যদিও অনেক বই জেলে পাঠানো হতো। মা প্রচুর বই কিনতেন আর জেলে পাঠাতেন। নিউ মার্কেটে মা’র সঙ্গে আমরাও যেতাম। বই পছন্দ করতাম, নিজেরাও কিনতাম। সব সময়ই বইকেনা ও পড়ার একটা রেওয়াজ আমাদের বাসায় ছিল। প্রচুর বই ছিল। সেই বইগুলো ওরা (পাকিস্তানিরা) নষ্ট করে। বইয়ের প্রতি ওদের আক্রোশও কম না। আমার খুবই কষ্ট হয় ওই বইগুলোর জন্য যা ঐতিহাসিক দলিল হয়ে ছিল, কিন্তু ১৯৭১ সালে সবই হারালাম।” (শেখ হাসিনা : শেখ মুজিব আমার পিতা, আগামী প্রকাশনী, ২০১৪, পৃ. ৭০-৭১)

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে কেবল সাধারণ মানুষ কিংবা কৃষক-শ্রমিকদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলেন না, তিনি ছিলেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীরও প্রতিনিধি। স্বাভাবিকভাবে নিজ শ্রেণীর শিল্পী-সাহিত্যিকদের প্রতি তাঁর একটা টান ছিল। তা ছাড়া তিনি সাহিত্যের একজন অনুরাগী পাঠক তো ছিলেনই। ১৯৭০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, “শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকবৃন্দের সৃষ্টিশীল বিকাশের যে কোনো অন্তরায় আমি এবং আমার দল প্রতিহত করবে।” (আতিউর রহমান, ‘বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক বঙ্গবন্ধু’, শোকাশ্রু, বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদ, ২০১৫, পৃ. ৩০)

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পরপরই কাজী নজরুল ইসলামকে অনুরোধ করে ঢাকায় নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু। তাঁকে প্রদান করেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। কবি নজরুলের ওপর সবার চেয়ে বেশি যে বাংলাদেশের মানুষেরই অধিকার আছে, সেকথা বঙ্গবন্ধুর চেয়ে ভালো আর কে বুঝেছিলেন! ১৯৭২ সালের ২৫ মে ঢাকায় কবির বাসায় যাওয়ার সময় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর থেকে বের হয়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করতে করতে পথ হেঁটেছেন বঙ্গবন্ধু।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র সূত্র অনুযায়ী আব্বাসউদ্দীনের ভাটিয়ালি গান শুনে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। এই কণ্ঠশিল্পীর বাংলা ভাষা রক্ষার আকুতিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামে অবদান রাখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হয়েও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে ‘স্যার’ সম্বোধন করতেন। প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের লেখনীর মাধ্যমে নির্ভয়ে এগিয়ে আসুন, দুঃখী মানুষের সংগ্রাম নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করুন। কেউ আপনাদের বাধা দিতে সাহস করবে না।” (দৈনিক ইত্তেফাক ১৬/২/১৯৭১)

মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি সবসময়ই কাছে পেয়েছেন শিল্পী-সাহিত্যিকদের। জসীমউদ্দীন, সুফিয়া কামাল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, হাশেম খান, সমরজিৎ রায়চৌধুরী প্রমুখ কবি ও চিত্রশিল্পী এবং কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক ছবি রয়েছে। ১৯৭৩ সালে তাঁর সঙ্গে ফরাসি লেখক আঁদ্রে মালরোর সাক্ষাত হয়। ১৯৭৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মানবাত্মার সুদক্ষ প্রকৌশলী হচ্ছেন দেশের সুধী সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাব্রতী, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিসেবী।” এ জন্য তাঁদের প্রতি তাঁর প্রাণের টান এত! অসুস্থ কবি হুমায়ূন কাদির, আবুল হাসান ও মহাদেব সাহাকে সুচিকিৎসার জন্য বার্লিন, মস্কো, লন্ডন পাঠান তিনি। কবি দাউদ হায়দারকে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত থেকে রক্ষা এবং নিরাপত্তা দিয়ে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কবি আল মাহমুদকে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিয়োগ দেন শিল্পকলা একাডেমিতে। নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে সহজতর করেছিলেন টেলিভিশন ও মঞ্চনাটকের ওপর থেকে প্রমোদকর ও সেন্সর প্রথাকে।

চলচ্চিত্রের উন্নয়নেও দারুণ ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধুর। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল প্রাদেশিক পরিষদে এফডিসির বিল উত্থাপন করেন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু। তখন চলচ্চিত্রবিষয়ক দপ্তর ছিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন। ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয় বাংলাদেশের ১৮ এবং ভারতের চারজন বিশিষ্ট শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী ও বেতারকর্মীকে। অর্থাৎ কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নে তিনি যুক্ত করেছিলেন শিক্ষক-প্রকৌশলী ও পেশাজীবীদের। প্রশাসনের সঙ্গে রেখেছিলেন শিল্পী-সাহিত্যিকদের।

উপরের বিবরণ থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, শিল্প-সংস্কৃতির একজন রসবোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেশ-বিদেশের কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের গভীর সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধুর শিল্পসংস্কৃতি ভাবনায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে সংগ্রামী ও দুঃখী মানুষের কথা। লোকজ সংস্কৃতির প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল বিস্তর। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয় ‘বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন’ স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করে যেমন গরিব কৃষক ও শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন, তেমনি শিল্প-সংস্কৃতির চেতনাসম্পন্ন উপযুক্ত জাতি গঠনে নিবেদিত ছিলেন তিনি।

রাজনীতির অমর কবি বঙ্গবন্ধুর মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার অঙ্গীকার পরবর্তীকালে দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকরা ভুলতে পারেননি। দেশ পরিচালনায় খুব কম সময় পেলেও তাঁর আত্মবলীদান প্রেরণার শতধারায় উৎসারিত এখনো। তাঁকে আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী করে তুলেছেন শিল্পী-সাহিত্যিকরা—সৃষ্টি হয়েছে কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, চিত্রকলা। আদর্শের মৃত্যু নেই, যেমন কবি পাবলো নেরুদা লিখেছেন, “কোনো কোনো রক্তের দাগ কিছুতেই শুকোবার নয়।” বঙ্গবন্ধুর রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। প্রেরণার উৎসে মহীরূহ তিনি। এজন্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের জাগরণ হলো। বিনা দ্বিধায় আমরাও বলে উঠলাম, ওই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যত দিন লড়াই চলবে, তত দিন আমরাও সঙ্গে আছি। বাঙালি হিসেবে আমরাও সহযোদ্ধা।” (আমরা কি বাঙালি, পত্রভারতী, কলকাতা, পৃ. ১৪৩)

১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেওয়া মন্মথ রায় লেখেন, “বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে অবলম্বনে লিখিত আমার ‘স্বাধীনতার ইতিহাস’ এবং ‘আমি মুজিব নই’ গ্রন্থ দুইটি তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়ে ধন্য হতে পেরেছিলাম।” (আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন স্মরণিকা)

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে তাঁকে হত্যা করা হলে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন দেশের শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক জগতের অনেকেই। পরে তাঁরা তাঁদের লেখনীতে সামাজিক দায়িত্ব পালন করেন। মূলত জাতিকে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে প্রেরণা জুগিয়েছেন শিল্প-সাহিত্য সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গ। অর্থাৎ, মৃত্যুর পরেও কবি-সাহিত্যিকদের রচনার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। আর কেনই বা নয়, শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ ও এইক্ষেত্রের উন্নয়নে তাঁর অসামান্য অবদানই তাঁকে বাঙালির হৃদয়ে করে রাখবে চির জাগরূক!