মিলার বিরুদ্ধে ধূমপান, অশালীন কাপড় পরার অভিযোগ সাবেক স্বামীর
নির্যাতনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সঙ্গীতশিল্পী মিলা ইসলামের সাবেক স্বামী পারভেজ সানজারী। শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মিলার দেওয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাসের প্রায় ১০ দিন পর পারভেজ স্ট্যাটাস দিয়ে সকল অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু গণমাধ্যমকে ট্যাগ দিয়েছেন তিনি। পেশায় বৈমানিক পারভেজ সানজারীর দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো-
### নীরব থাকব বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ###
নীরব থাকব বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। দেড় বছর ধরে নীরবই ছিলাম। এই নীরবতা একজন প্রাক্তন স্ত্রী ও তার পরিবারের প্রতি আমার শ্রদ্ধা প্রদর্শণ। কিন্তু এই নীরবতা যখন দুর্বলতা হিসেবে গণ্য হতে থাকে তখন চুপ থাকাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমি কখনই চাইনি পারিবারিক বিষয়গুলো এভাবে প্রকাশ হোক। আমার পরিবার, আমার শিক্ষা, পেশা, জ্ঞান ও মূল্যবোধ কখনই আমাকে সেটা শেখায়নি। কিন্তু মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ বক্তব্য ফেসবুক ও ইউটিউব এর মত সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার এবং গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে আমার ও আমার পরিবারকে নিয়ে যখন বানোয়াট বক্তব্য তুলে ধরা হয় তখন মুখ বুজে থাকা অসম্ভব হয়ে পরে। অপ্রিয় সত্য গুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও এভাবে প্রকাশের জন্য আমি শুরুতেই ক্ষমাপ্রার্থী।
আমাদের বিয়ে হয় ২০১৭ সালের ১২ মে। সঙ্গীত তারকা মিলার সাথে আমার পরিচয় তারও আগে। কিন্তু বিয়ের পরই তিনি পারিবারিক জীবন সম্পর্কে তার নিজস্ব অস্বাভাবিক ধারাণাগুলো আমার ও আমার পরিবারের উপর চাপিয়ে দিতে থাকেন| একটি যৌথ পরিবারে কখনই ঘরের বউ-এর তার কাজের বুয়া-দাড়োয়ানকে দিয়ে সিগারেট আনানো, অশালীন কাপড়ে মুরব্বি-মেহমানদের সামনে যাওয়া, তুচ্ছ কথায় বাড়িতে ভাংচুর করা ও প্রতিবেশীদের অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলা......... মেনে নেওয়া যায়না। তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল আমার চিরায়ত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে।
পরিস্থিতি এক পর্যায়ে সীমা অতিক্রম করে ফেলে। আমার তাকে বুঝানোর সব ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আমি ধারণা করেছিলাম সে নিজেকে শুধরে নেবে। কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও তার আক্রমণের নিশানায় পরিণত হন। বাসাবাড়িতে অশান্তি দেখা দেয়। সব কিছু মিলিয়ে পরিবেশ যখন সহ্যের বাইরে চলে যায় তখন উভয় পরিবারের কাছে আমি বিচ্ছেদের কথা জানাই। কিন্তু বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের পরই পরিস্থিতি আর সংকটময় হয়ে পড়ে। তার দায়ের-কৃত সম্পূর্ণ সাজানো ও বানোয়াট নারী নির্যাতন ও দশ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবীর মামলায় আমাকে আসামী হতে হয়। তিনি আমাকে আমার কর্মস্থল থেকে গ্রেফতার করান। যিনি (মিলা) আমাকে কারাগারে পাঠালেন, তিনিই আবার সাক্ষাতে গিয়ে শর্ত দিলেন যে জন্মদাতা পিতা-মাতাকে ত্যাগ করলেই জেল থেকে আমাকে মুক্তি দেবেন। আমার পক্ষে এমন প্রস্তাব মানা সম্ভব ছিল না। আসলে আমার পক্ষে মিলার সাথে দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখার আর কোন উপায় ছিল না। সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষে গত ২২ মে ২০১৮ ইং তারিখে আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়। গত ১ বছর ধরে আইনগতভাবে তার সাথে আমার কোনরূপ সম্পর্ক নেই। তিনি আমার স্ত্রী নন।
আইনী প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে আমি জামিনে মুক্ত হই। তার দায়েরকৃত বানোয়াট এই মামলায় আদালত চার্জ গঠনের পর থেকে গত দেড় বছরে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় মামলার বিচারিক পর্যায়ে আজ অবধি পরপর ৬ টি শুনানির একটিতেও তিনি সাক্ষী দিতে আসেননি, বিজ্ঞ আদালত সমন-জারী করা সত্ত্বেও। অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি একের পর এক আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েই চলেছেন। অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তিনি জনসমক্ষে এনে আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে চলেছেন। তিনি নিজেই তার বক্তব্যে স্বীকার করেছেন যে, তিনি আমাকে ছাড়বেন না এবং ভক্তদের নিয়ে আমাকে রাস্তায় নামিয়ে জুতাপেটা করবেন (সুত্র: সময় টিভি সাক্ষাৎকার ২৪/০৪/১৯)। আমার জেল-জরিমানাও দাবী করছেন। অথচ আমি এই পর্যন্ত তার প্রতি কোনরূপ সম্মান হানিকর বক্তব্য কোথাও একবারও উচ্চারণ করিনি। এতকিছুর পরেও তিনি হাস্যকরভাবে আমার সাথে সংসার করতে চাইছেন, আমাকে নিজের স্বামীও দাবী করছেন। এই স্ববিরোধীতাপূর্ণ বক্তব্যের বিচারভার আমি আপনাদের কাছে দিলাম।
তার বক্তব্যে এটা সুস্পষ্ট যে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমার ক্যারিয়ার ধংস করে আমাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করাটাই তার এখন মূল লক্ষ্য। কিছু কল্পনাপ্রসূত বানোয়াট উপাত্ত দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনটিই সত্যি নয়। অথচ লাগামহীনভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে আইনের বিচারেই তা সঠিক কিনা প্রমাণ হবে। আপনারা সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া রাখবেন|
- পারভেজ সানজারী (মিলার প্রাক্তন স্বামী)
আরও পড়ুন: শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ কণ্ঠশিল্পী মিলার