আদিবাসী ম্রো ভাষায় প্রথম রূপকথার বই
মাতৃভাষা, মায়ের মুখের ভাষা। যে ভাষাতে শিশুর কথা বলতে শেখা, পড়তে শেখা।
জাতি হিসেবে বড্ড ভাগ্যবান আমরা। জন্মের পর যে ভাষাতে মা বলে ডাকি,সেই ভাষাতেই পড়ি। পড়ি পাঠ্যবই কিংবা কোন গল্প, উপন্যাস বা রূপকথার বই৷ মাতৃভাষার চাইতে মধুর কোন ভাষা যে হতেই পারে না।
কিন্তু যে দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে ভাষা অর্জন করেছে, সেই দেশে বাস করা কিছু মানুষ তাদের মায়ের ভাষায় কথা বললেও, পায়না মাতৃভাষায় বই পড়ার আনন্দ।
ম্রো বা মুরং সম্প্রদায় বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায়। অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর তুলনায় পিছিয়ে থাকা এই সম্প্রদায়টির জন্য অন্যরকম এক অনুভুতি নিয়ে এবারের গ্রন্থ মেলায় হাজির হয়েছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী।
প্রথমবারের মত বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বিদ্যানন্দ প্রকাশনী প্রকাশ করেছে আদিবাসী সম্প্রদায় মুরং এর নিজস্ব ভাষায় রচিত বই ‘ম্রো রূপকথা’। এটিই ম্রো ভাষায় প্রকাশিত প্রথম কোন গল্পের বই।
বইটির রচয়িতা ইয়াংঙান ম্রো। বইটি প্রকাশের করার কারণ সম্পর্কে বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর প্রতিনিধি সালমান খান ইয়াসিন বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের এতিমখানায় অনেক আদিবাসী শিশু থাকে। এবারের মাতৃভাষা দিবসে তাদের ভিন্নরকম এক উপহার দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ’।
ভবিষ্যতে আদিবাসীদের জন্য এমন আরো বই প্রকাশ করতে চাইলেও আদিবাসীদের ভাষার লেখক খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর বলেও জানান ইয়াসিন।
গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশ হওয়া এই বইটি প্রতিদিন গড়ে ১২-১৫টি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান একুশে গ্রন্থমেলার ১টাকার আহার (বিক্রেতাহীন স্টল) স্টলের স্বেচ্ছাসেবক আরিফ মাহাদি। তিনি বলেন, ‘বই গুলো মূলত সাধারণ বাঙালীরাই কিনছে বেশী। প্রচার কম থাকায় ঢাকায় অবস্থানরত আদিবাসীরা তেমন কেউ না জানার কারণে কিনছে না’।
ম্রো আদিবাসীদের জনজীবনে প্রচলিত বিশ্বাস, রূপক, রীতিনীতি এইসব নিয়েই লেখা হয়েছে গল্পের বই 'ম্রো রূপকথা'। দুই ভাষাভাষীর জনগোষ্ঠী যাতে একই বই পড়তে পারে, সেজন্য এই গল্পের বইটি একই সাথে বাংলা ভাষা ও ম্রো ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।
১ টাকার আহার স্টলের সামনে এসেই কোন কথা ছাড়াই ‘ম্রো রূপকথা’ বই টি হাতে তুলে নেন স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ওয়াসি আহম্মেদ। এতো বইয়ের মাঝে কেন এই বইটি তিনি কিনছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো অনেকটাই অবহেলিত। তেমনিভাবে তাদের ভাষা, সংস্কৃতিও পিছিয়ে রয়েছে অনেকটা। এই বইয়ের মাধ্যমে আমরা যেমন তাদের কথা, তাদের ভাষা, তাদের সংস্কৃতি জানতে পারবো তেমন তাদের ভাষা, সংস্কৃতিও পেল এক অনন্য মাইলফলক’।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এই বইটি বাংলাদেশের মুরং সম্প্রোদায়ের সকলের কাছে বিনামূল্যে পৌছে দিতে চালিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক ভিত্তিক প্রচারণা। ইতোমধ্যে, তারা তাদের আদিবাসী এতিমখানার শিশুদের মাঝে পৌছে দিয়েছে মাতৃভাষা দিবসের অনন্য এই উপহার।
আরো পড়ুন: পাখির চোখে ভিন্নমাত্রায় দৃষ্টিনন্দন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের আতিথেয়তায় মুগ্ধ ‘ফুড রেঞ্জার’