২৫০ প্রজাতির আগাছা কমিয়ে দিচ্ছে ফসলের উৎপাদন
খাদ্য উৎপাদনে আমরা আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ফসলের কাঙ্ক্ষিত অর্জনে ভাগ বসাচ্ছে দেশি-বিদেশি আগাছা। ফসলের জমিতে কিংবা টবে, ড্রামে যে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ দেখা যায় তাই আগাছা। আগাছা চাষ করা ফসলের বৃদ্ধিতে ও পুষ্টি প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করে।
আগাছা দমন ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ধানসহ অন্যান্য ফসলের খাদ্য, আলো, বাতাস ও পানিতে ভাগ বসিয়ে শস্যের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আগাছার কারণে ফসল লিকলিকে, লম্বা, দুর্বল ও হলদে হয়ে যায় এবং কুশির সংখ্যা কমে যায়। এটি ফসলে পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, কাঁটা নটে শাক, নটে শাক, মালঞ্চ, টোপাপানা, কচু , চাঁদমালা, ছোট কুট, হাতিশুঁড়, মুথা ঘাস, হলদে মুথা, বড় চুচা, শক্ত খাগড়া, চেচরা, ক্ষুদে চেচরা, জয়না, মাটি চেচ, বথুয়া, চাপালি ঘাস, কেশটি, হেলেঞ্চা, শিয়ালমুত্রা, ঘাঘরা, বন শিমুল, বন লেটুস, বন সরিষা, মরিচ ঘাস, বন মূলা, কানাইবাশী, মনায়না, পানি কলাগাছি, কমেলিনা, কানাইনালা, ফণি মনসা, কলমী লতা, স্বর্ণলতা, মর্নিং গ্লোরি, বিন্দলতা, বড় দুধিয়া, ছোট দুধিয়া, বন মরিচা, শ্যামা ঘাস, ক্ষুদে শ্যামা, দুর্বা ঘাস, চাপড়া ঘাস, আরাইলা, চেলা ঘাস, গিটলা ঘাস, কাশ, উলু ঘাস, প্রেম কাটা, ঝরা ধান, দুধ নল, ছোট দুধ নল, বরেন্দা ঘাস, আঙুলি ঘাস, মোরারো, গইচা, ময়ুরলেজা ঘাস, ফুলকা ঘাস, শ্বেতদ্রোণ, শিয়াল লেজা, ভাতশোলা, আরাইচা, লজ্জাবতী, বন্য মশুর, মসুর চানা, নারিন্দা ঘাস, ক্ষুদে পানা, তিলক পানা, কানফুল, বেরেলা, শালুক, শাপলা, নীল পদ্ম, রক্ত কমল, পদ্ম, আমরুল শাক, হেলেঞ্চা, কচুরি পানা, পানি কচু, বিষকাঁটালী, তিতা মরিচ, পানি মরিচ, নুনিয়া ঢেঁকিশাক, ঝিল মরিচ, তিতা বেগুন, বন্য বেগুন, কাঁটা বেগুন, ধুতুরা, ফোসকা বেগুন, থানকুনি, বন ধনিয়া, বন গাজর, কাঁটা মেহেদী, মটকাসহ ২৫০ এর অধিক প্রজাতির দেশি-বিদেশি আগাছা রয়েছে ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক এক মহাপরিচালক বলেন, ফসলের চেয়ে আগাছা বেশি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এসব কারণে ফসলের ফলন ব্যাপকহারে হ্রাস পায়। বাংলাদেশে আগাছার উপদ্রবের ফলে ধানে ৪০- ৫০ শতাংশ, গমে ২৪ - ৫৮ শতাংশ, ভুট্টায় প্রায় ৪৯ শতাংশ, আলুতে ৪৩ শতাংশ, আখে ২০ শতাংশ, পাটে ৭৫-৮০ শতাংশ, চায়ে ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ফসলে গড়ে ২৫-৬০ শতাংশ ফলন কম হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কোনও সন্দেহ নেই যে, আগাছা আমাদের ফসল উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে এদেশে খালি হাতে, নিড়ানি যন্ত্র দিয়ে এবং আগাছানাশক ব্যবহার করে ফসলের আগাছা দমন করা হয়। কিন্তু আগাছানাশক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ। এর ব্যবহার সঠিকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে না করলে মাঠ ফসলের পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে কৃষকদের আগাছা ব্যবস্থাপনা বা দমন বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ ও পরিকল্পনা দিয়ে থাকি। তবে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে পরিবেশবান্ধব আগাছা ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, সঠিক নিয়মে ও সঠিক পদ্ধতিতে আগাছা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন ১৮-২২ ভাগ বাড়ানো সম্ভব।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সংস্থানের জন্য একদিকে বিদেশ থেকে কৃষি পণ্য সামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে, অন্যদিকে শষ্য বীজও আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু এসব বীজের সঙ্গে নানা জাতের আগাছা বীজও আমাদের অজান্তেই চলে আসছে। ফলে বিদেশি বীজ আমাদের দেশে বাসা বাঁধছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষিজ পণ্য বা বীজ আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গ নিরোধ কেন্দ্রের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। তা না হলে নানা ধরনের রোগ জীবাণু ও আগাছা ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক নিয়ম মেনে আমদানি না করায় আমদানিকৃত বীজের মাধ্যমে এসেছে অনেক আগাছা। এজন্য বিদেশি কোনো কৃষিজ পণ্য বা বীজ আমদানিও আগেই পণ্যগুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।
কৃষি কর্মকর্তা এবং ছাদ বাগাদ সম্প্রসারণ বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক মো. তাহেরুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ছাদ বাগানেও আগাছা দমন জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশে নির্মল বাতাস, কেমিকেল ছাড়া নিরাপদ ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ সবজি ও ফলমূল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে আগাছার কারণে। তবে ছাদ বাগান যেহেতেু বৈজ্ঞানিকভাবে করা হচ্ছে । সেখানে আগাছা দমন সহজ।