আমন মৌসুমে অ্যাপের মাধ্যমে ১৬ উপজেলায় চাল ক্রয়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী, ছবি: বার্তা২৪.কম

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবার আমন ধান কেনার ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছে খাদ্য অধিদফতর। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১৬টি জেলার ১৬টি উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছে।

বুধবার (১১ মার্চ) দুপুরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আমন ধান সংগ্রহ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এসব তথ্য জানান। এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১ টন আমন ধান, ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৮ টন সিদ্ধ চাল ও ৪৩ হাজার ৯০০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করব। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আমরা তালিকা সংগ্রহ করে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, আমাদের উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরের অধীনে ২৫টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয় মাঠ পর্যায়ের কাজ তদারকি করার জন্য। ছোটখাট বিচ্যুতি ছাড়া সর্বপ্রথম কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি প্রায় ৬ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সবসময় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কাজ করেছে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার জন্যই আমাদের এ প্রয়াস। আমরা ধানের লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া সিদ্ধ চাল সংগ্রহে ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও আতপ চাল সংগ্রহে ৯৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ সফলতা অর্জন করেছি।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমনে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৭ টন ধান, ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৭ টন সিদ্ধ চাল ও ৪৩ হাজার ৯০০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদফতর। ধান কেনার ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১৬টি জেলার ১৬টি উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছে। আমরা আস্তে আস্তে কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার উদ্দেশে কাজ করছি।

এছাড়া আগামী বোরো মৌসুমে অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ৬৪ জেলার একটি করে উপজেলায় ধান ও ১৬ উপজেলায় মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় আমনে অ্যাপসের মাধ্যমে ১৬টি উপজেলার ধান কেনায় সফলতা আসায় আগামী বোরো মৌসুম থেকে আরো বড় পরিসরে এ উদ্যোগ নেয়া হবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফসল উৎপাদন করে কৃষক যদি লাভ করতে না পারে, তাহলে তার জীবনের প্রয়োজনগুলো কীভাবে মেটাবে? গত বোরোতে কৃষক দাম পায়নি। তখন থেকেই আমরা গভীরভাবে চিন্তা করছিলাম কীভাবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসারি ধান কিনে কিছুটা বেনিফিট তাদের দেয়া যায়। গত বছর বোরো ধান কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা করতে সময় লেগেছিল, তারপরও ভালো সংগ্রহ হয়েছিল। এবার আমনের আগে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যে কোনো মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে।

অত্যন্ত আনন্দের কথা যে গত আড়াই-তিন মাস ধরে আমন ধান সংগ্রহ হচ্ছে। ধানের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন হয়েছে। এটা একটা অসাধারণ অর্জন। আমি আশাবাদী, আগামী বোরোতেও সফলভাবে ধান সংগ্রহ করতে পারব, যোগ করেন তিনি।

খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, আমনে পরীক্ষামূলকভাবে ১৬টি জেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ৩০ হাজার ১৭০ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে ২৯ হাজার ৭০১ টন ধান কেনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সরোয়ার মাহমুদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

   

সংরক্ষণশীল কৃষির চাষ ব্যবস্থাপনা: খুলবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার



ড. মোহাম্মদ এরশাদুল হক
ছবি: লেখক

ছবি: লেখক

  • Font increase
  • Font Decrease

কনজারভেশন এগ্রিকালচার (সিএ) বা সংরক্ষণশীল কৃষি একটি সমন্বিত চাষ ব্যবস্থাপনা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে, কনজারভেশন এগ্রিকালচার তিনটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত: ১) জমিতে চাষ কম দেওয়া, ২) ফসলের অবশিষ্টাংশ জমিতে রেখে আসা, ৩) লাভজনক শস্য পর্যায়। প্রথম মূলনীতি এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, জমি চাষের পরিমাণ মোট জমির ২৫ ভাগের কম হতে হবে তা ফালি চাষ বা শূন্য চাষের দ্বারা করা সম্ভব।

দ্বিতীয় মূল নীতির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে জমিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ কমপক্ষে ৩০ ভাগ রেখে আসতে হবে যাতে করে জমিতে বীজ বোনার পর পরিমাপ করা হলেও মোট জমির ৩০ থেকে ৬০ ভাগ অংশ নাড়ার অবশিষ্ট অংশ এর দ্বারা আবৃত থাকে। তথা সারা বছরই জমির বেশিরভাগ অংশ কোন একটি ফসল অথবা ফসলের অবশিষ্ট অংশ দ্বারা আবৃত থাকবে। তৃতীয় মূলনীতির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে এই পদ্ধতিতে একটি লাভজনক শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে যাতে করে একই ফসল এ ধারায় বারবার না আসে। সংরক্ষণশীল কৃষির ধারণাটি আসে ১৯৩০ সালে আমেরিকাতে সংঘটিত ধূলি ঝড় এরপর। তখন বিজ্ঞানীরা চিন্তা করেন কৃষির মাটি সংরক্ষণের জন্য এমন কোন বিষয়টি জরুরি কিন্তু বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

এ প্রেক্ষিতেই ১৯৪০ সালে প্রথম বীজবপন যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় সরাসরি চাষ ছাড়া জমিতে বীজ বপনের জন্য। সেই তখন থেকে শুরু হওয়া সংরক্ষণশীল কৃষির ধারণাটি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে সংরক্ষণশীল কৃষি বা সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। দক্ষিণ আমেরিকাতে প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে ও উত্তর আমেরিকাতে প্রায় ৩৫ ভাগ জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যদিও এশিয়াতে এর পরিমাণ নগণ্য (৩.১৫%), তবুও সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০৫ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে যা পৃথিবীর মোট আবাদযোগ্য জমির প্রায় ১৫ ভাগ। বাংলাদেশেও প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে।

গবেষণা মাঠ। ছবি: লেখক 

বাংলাদেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট রয়েছে যা আনফেবারেবল ইকো সিস্টেমের মধ্যে । কিন্তু এখানে উন্নত চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষের আওতায় আনার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, তারমধ্যে লবণাক্ত অঞ্চলে ১.০৬ মিলিয়ন হেক্টর, খরা অঞ্চলে ৩.৫ মিলিয়ন হেক্টর, জলাবদ্ধ অঞ্চলে ২.৬ মিলিয়ন হেক্টর, চরাঞ্চলে ০.৮২ মিলিয়ন হেক্টর, হাওড়াঞ্চলে ০.৮৬ মিলিয়ন হেক্টর এবং পাহাড়াঞ্চলে ১.৮১ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সুযোগ রয়েছে।

দেশের প্রায়ই ১১.০৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে জমির পুষ্টির স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাদ্যের যোগান দিতে ২০৫০ সালে ১৫ থেকে ১৬ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত দানাদার ফসল উৎপাদনের প্রয়োজন পড়বে। অন্যদিকে জমির ভূগর্ভস্থ পানিস্তর ক্রমেই নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এসব জমির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধি উভয়টি অর্জন করার লক্ষ্যে সংরক্ষণশীল কৃষি বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশেও ক্রমে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সিএ চাষ পদ্ধতিতে যদিও প্রথম এক দুই বছরেই উৎপাদন বৃদ্ধি হতে দেখা যায় না কিন্তু প্রচলিত চাষ পদ্ধতির চেয়ে ফলন কম হয় না। উপরন্ত পর পর তিন বছর এ পদ্ধতি ব্যবহার করার পর থেকে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলন বৃদ্ধি হতেও দেখা যায়।

এ পদ্ধতিতে ফসল বপন বা রোপণে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে কম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। আমরা জানি এক লিটার জ্বালানি ডিজেল পোড়ালে ২৬ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে নিঃসরণ হয়। ফলে সিএ চাষ পদ্ধতি একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি; এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস পাবে এবং পরিবেশ নির্মল হবে। সিএ চাষ পদ্ধতিতে ধান চাষের ক্ষেত্রেও অচাষকৃত জমিতে ধান বপন বা রোপন করা হয়ে থাকে। অচাষকৃত জমিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষের ফলে ৭০ ভাগ জ্বালানি, ৫০ ভাগ শ্রমিক এবং ১০ থেকে ১৫ ভাগ পানি সাশ্রয় করা সম্ভব। সিএ চাষ পদ্ধতিতে বছরের বেশিরভাগ অংশই ফসল অথবা ফসলের নাড়া দ্বারা আবৃত থাকায় জমিতে দিবারাত্রির তাপমাত্রার পার্থক্যের পরিমাণ কম হয় ফলে মাইক্রো ইনভাইরনমেন্ট উত্তম ফলন এর উপযোগী থাকে।

বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে এ চাষ পদ্ধতি সম্প্রসারিত হচ্ছে। এছাড়া আংশিক ভাবে সারা দেশেই বিনা চাষ বা স্বল্পচাষের ব্যবহার বাড়ছে। বিনাচাষে রসুন চাষ চলনবিল এলাকা থেকে শুরু হয়ে এখন দক্ষিণের লবণাক্ত এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিনা চাষের রিলে পদ্ধতিতে সরিষা ও ডাল জাতীয় ফসলের চাষ লাভজনক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তা সারা দেশেই ছড়িয়ে গেছে। আমন ও বোরো ধানের মাঝে এ রিলে পদ্ধতিতে সহজেই আরেকটা ফসল ঘরে তোলা যাচ্ছে যাতে করে ফসলের নিবিড়তা বাড়ছে। রাজশাহী, রংপুর ও নীলফামারীতে আলু চাষের পরে যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্প চাষে বোনা আউস বা লেট বোরো বা ব্রাউস ধানের আবাদ লাভজনক বলে কৃষক সমাদৃত হয়েছে। বিনা চাষের আলু কৃষককে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে। এমনকি খুলনার লনণাক্ত এলাকাতেও বিনা চাষে আলু ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এই পদ্ধতির ব্যাপক সম্প্রসারণ করা গেলে লনণাক্ত অঞ্চলে আলু চাষ করে কৃষকের আর্থসামজিক উন্নয়ন করা যাবে।

টেকসই কৃষি উৎপাদন সুসংহত করতে সৌরবিদ্যুৎ নির্ভর সেচব্যবস্থা। ছবি: লেখক

গবেষণার জন্য আরো অনেকগুলো বিষয়ের উপরে গুরুত্ব আরোপ করা দরকার, যেমন জমি সমতল করার জন্য লেজার ল্যান্ড লেভেলার এর ব্যবহার বৃদ্ধি করা, সিএ চাষ পদ্ধতির জন্য উপযোগী জাত বাছাই করা, ফসলের অবশিষ্ট অংশ ব্যবস্থাপনা ও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সিএ চাষ পদ্ধতির উপযোগী সার সুপারিশমালা তৈরি করা। এসব বিষয়কে নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। সিএ হল মাটির জৈবকার্বন বাড়ানোর একটি জাদুকরী অস্ত্র। মাটির জৈবকার্বন ব্যাপক চাষ, নিবিড় ফসলের ধরণ এবং উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণে হ্রাস পাচ্ছে। সিএ এর সুবিধাগুলি এমন একটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হতে পারে যেখানে বছরের পর বছর ধরে পুরো শস্য বিন্যাসে সিএ অনুশীলন করা হচ্ছে। সিএ বিশ্বব্যাপী কাজ করলেও বাংলাদেশে খুব সীমিত সঠিক শস্যবিন্যাসভিত্তিক ব্যবহার হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) নব্বইয়ের দশক থেকে সিএ নিয়ে কাজ করছে, তবে সিএ অনুশীলনের ঋতুভিত্তিক আংশিক প্রয়োগের কারণে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়নি। সিএ প্রধানত রবি (শুষ্ক শীত) মৌসুমে উচ্চভূমির ফসলের জন্য অনুশীলন করা হয় এবং পরবর্তী মৌসুমে প্রচলিত চাষ ব্যবহার করে ধানের ফসল চাষ করা হয়। সুতরাং, সিএ-এর প্রভাব দৃশ্যমান নয়। অতএব, কৃষক, ছাত্র, গবেষক এবং নীতি নির্ধারকদের দ্বারা সিএ কার্যক্রমের সুবিধা পর্যবেক্ষণ এবং জ্ঞান বৃদ্ধির সুযোগ খুব কম । বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) গাজীপুরে একটি সংরক্ষণ কৃষি পার্ক (CA পার্ক) স্থাপন করেছে। সিএ পার্ক নামে সংরক্ষণশীল কৃষি নিয়ে গবেষণার প্লাটফর্মে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের বিজ্ঞানীদের সমন্নয়ে এই বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রায় ১ হেক্টর জমিতে নিবিড় গবেষণা চলমান রয়েছে।

CA Park পরিদর্শনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: লেখক

এখানে সৌর সেচ পাম্প ব্যবহার সহ আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সমন্বিত চাষ ব্যবস্থায় সফলতার পথ খোঁজা হচ্ছে। বিঘাতে তিন বছর একই জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়া আগাছার প্রবণতা কমেছে। ফলে বিনা চাষে বা স্বল্প চাষের মাধ্যমে ধান-ভুট্টা, ধান-সরিষা-পাট, ধান-সরিষা-মুগডাল, ধান-ধান-ধান কেন্দ্রিক ফসলধারায় লাভজনক ও জমির স্থাস্থ্য সুরক্ষাকর উপায় খুঁজে পাওয়া গেছে। ফলে গাজীপুরের এই সিএ পার্ক কৃষক, গবেষক ও পলিসি প্ল্যানারদের পরিদর্শন ও এ ব্যপারে জ্ঞান লাভের সুযোগ তৈরি করেছে। এই ধারাবাহিকতায় কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সরকার সারাদেশে আরো ১৪ টি সিএ পার্ক স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিএ পার্কের কার্যক্রম এবং বাংলাদেশের উপযোগী খামার যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত পরিষেবাগুলি এক বাতায়নে সহজে তুলে খরার জন্য একটি সিএ ওয়েবসাইট (www.camachinery.org) চালু করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে সিএ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে সিএ জ্ঞানভান্ডার।

লেখক: ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এফএমপি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর

;

রংপুর অঞ্চলে বোরো মৌসুমে বিএডিসির ধানবীজ অবিক্রিত



স্টাফ করেসপন্ডন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুর অঞ্চলে নানা কারণে বোরো মৌসুমে সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ধান বীজ অবিক্রিত থাকছে। চলতি মৌসুমে বরাদ্দকৃত বোরো বীজের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের প্রদান করার পরেও অবিক্রিত রয়েছে ৯৩৬ দশমিক ৬৯৬ মেট্রিক টন। গতবছর বোরো মৌসুমেও ২ হাজার ৯৬৫ মেট্রিকটন বরাদ্দকৃত ধান বীজের মধ্যে অবিক্রিত বীজ ছিলো প্রায় ১ হাজার টন।

শুধু তাই নয় কোন কোন ডিলার তার ধান বীজ বরাদ্দ উত্তোলন করলেও কৃষকের চাহিদা না থাকায় সকল বীজ বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কৃষকরা যেমন মান সম্পন্ন বীজ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনি পরবর্তীতে খাবার হিসেবে ধান বীজ বিক্রি করায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বীজ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্তদের।

ডিলারদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, একেক এলাকার কৃষক আলাদা আলাদা ধান আবাদ করেন। তাদের চাহিদা সামনে রেখে বীজ সরবরাহ করা দরকার। বিশেষ করে নতুন জাতের বীজকে জনপ্রিয় করতে কৃষি সম্প্রসারণের সাথে আরো সমন্বিতভাবে কাজ করাসহ প্রচারণায় জোর দিতে হবে।

বিএডিসি রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক (বীজ বিপনন) এর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় (নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, রংপুর) ২০২৩-২৪ মৌসুমে বোরো ধান বীজের বরাদ্দ ছিলো ২ হাজার ৮০৮ দশমিক ৩২৫ মেট্রিক টন। (কৃষকদের প্রনোদনা হিসেবে ৭শ টন প্রদানসহ) ডিলাররা উত্তোলন করেছেন ১ হাজার ৮৭১ দশমিক ৬১৯ মেট্রিক টন। অবিক্রিত বীজের পরিমাণ ৯৩৬ দশমিক ৬৯৬ মেট্রিক টন। রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় নিবন্ধিত ডিলারের সংখ্যা হচ্ছে ৮৫১ জন।

এবার ২৪টি জাতের বোরো বীজ কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে। বিএডিসি (বীজ বিপণন) রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. মাসুদ সুলতান বলেন, সারাদেশে বীজের প্রয়োজন হয় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন।

বিএডিসিসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ উৎপাদন হয় ১লাখ ২৭ হাজারের মতো। তাই বীজ অবিক্রিত থাকার এটি কারণ। এছাড়া কৃষকেরা সহজে নতুন জাত নিতে চায় না ফলে বীজ অবিক্রিত থাকে। অবিক্রিত জাতের মধ্যে প্রায় ব্রি ৮৯ জাত বীজ আছে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ। এগুলো এখন পুনর্নির্ধারণ দামে বিত্রিু হবে। দাম হবে প্রতি কেজি ৩৩ টাকা থেকে ৩৫ টাকা।

;

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে রাবি শিক্ষক ফোরামের র‌্যালি



রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে র‌্যালি করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোড থেকে র‌্যালি শুরু হয়।

র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধিজীবী চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. মাসুদুল হাসান খান (মুক্তা) বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশকে সকল ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে তারা এ দেশে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলো। কিন্তু জিয়াউর রহমান সেটা হতে দেন নি। তিনি সকল মানুষকে সেদিন জালিমদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তারই স্মরণে আজকে আমরা এই দিন পালন করছি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশে বাকশালতন্ত্র কায়েম করেছে। দেশে গনতন্ত্র নেই। বিরোধী দলের কোন মানুষ কথা বললে তাকে মামলা দেওয়া হয়, হয়রানি করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের আন্দোলনে হামলা করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, আহত, নিহত, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়।

সমাবেশে অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, অধ্যাপক ফজলুল হক, অধ্যাপক হাছানাত আলীসহ জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের এই দিনে সংঘটিত সিপাহী ও জনতার বিপ্লব এর স্মরণে এ দিবসটি পালিত হয়। কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের এর নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিপ্লব জেনারেল খালেদ মোশাররফের তিনদিনের সরকারের পতন ঘটায়। এই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দীদশা থাকে মুক্তি পান, এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন।

;

ফুল চাষে বদলেছে ভাগ্য, মাসিক আয় ৪০ হাজার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ফুল চাষে স্বাবলম্বী  গোপীনাথ । ছবি: বার্তা২৪

ফুল চাষে স্বাবলম্বী গোপীনাথ । ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

অন্যের জমিতে কাজ করে কিংবা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন গোপীনাথ। নিজের অদম্য ইচ্ছে শক্তি আর প্রচেষ্ঠায় সখের বসে নিজ বাড়ির উঠানে গড়ে তোলেন ফুলেন বাগান। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সেখান থেকেই ভাগ্য বদল শুরু। নিবিড় পরির্চযা আর যত্নে গড়ে তুলেন এই দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। বলা হয়, যে মানুষ ফুলকে ভালোবাসে তার সুন্দর মন আছে। ফুল প্রেমী আর ভ্রমণ পিপাসুরা অবসর সময়ে ছুটে আসেন গোপীর বাগানে। ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হন গোপীনাথ বর্মন।

গোপীনাথ এখন ৫ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করছেন। দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করেছেন বিশ্রামাগার। তার প্রতিদিনে আয় এখন ১ হাজার টাকা।

সরেজমিনে জানা যায়, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রনচন্ডী ইাউনিয়নের বাফলা গ্রামের বাসিন্দা গোপীনাথ বর্মন একটি ফুলের বাগান করেন। সেখানে কয়েক প্রজাতির ফুলের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির উঠানে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন একটি ফুলের বাগান। কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতায় তিনি ৫ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করে এখন স্বাবলম্বী।

ওই বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে রজনীগন্ধা, জারবেরা গোলাপ, গেন্ডারিয়া, ক্যানডুলার, গাচুবাম ট্রেটাজ, মন্ডিওঝাউ, চাইনিজ পাম্প, ললনি পাম্প, ময়ুরপঙ্কিরাজ কার্পেট ঘাসসহ নানা প্রজাতির মূল্যবান ফুল।

প্রতিদিন ফুলপ্রেমী দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন তার বাগানে। দর্শনার্থীদের ১০ টাকা টিকিট কেটে ঢুকতে হয় ওই বাগানে।

গোপীনাথ বর্মন জানায়, ফসলের তুলনায় ফুল চাষে উৎপাদন খরচ কম। ৫ বিঘা জমিতে বছরে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। আর সব মিলিয়ে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস ও ভ্যালেন্টাইন ডে ছাড়াও বিশেষ দিবসগুলোতে ৫০ হাজার টাকারও বেশি ফুল বিক্রি হয়।

;