বেরোবি’র ভিসির মেয়াদ শেষ নিয়ে ধোঁয়াশা!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মেয়াদ শেষ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে উপাচার্য হিসেবে কলিমউল্লাহর মেয়াদ প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে নাকি যোগদানের দিন থেকে ধরা হবে, তা পরিষ্কার করে বলা না থাকায় এ ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১ জুন চার বছরের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। সেই হিসেবে তার চার বছরে মেয়াদের শেষ দিন ছিল সোমবার (৩১ মে)। তবে তিনি উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন ২০১৭ সালের ১৪ জুন। যোগদিনের হিসেবে তার মেয়াদ শেষের দিন ১৩ জুন।

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে তাকে সমর্থন দেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যোগদানের দিন থেকে চার বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে। আর বিপক্ষের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবি, প্রজ্ঞাপনের দিন থেকেই মেয়াদ চার বছর। তাই সোমবারই তার মেয়াদ শেষ হয়েছে।

মঙ্গলবার (০১ জুন) দুপুরে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মেয়াদ শেষ দাবি করে তার পিএস আমিনুর রহমান অফিসে আসায় অবরুদ্ধ করে রাখে ভিসি বিরোধী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একাংশ।

বিজ্ঞাপন

গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ। তাই তার পিএসও দায়িত্বে থাকতে পারবে না। পরিপত্র অনুযায়ী ভিসির মেয়াদ গতকাল শেষ হয়েছে। ভিসি নাই তো পিএস কীসের? আমরা তাকে সসম্মানে রুম থেকে বের হতে বলেছি। উনি বের হননি। এ কারণে তাকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

এ বিষয়ে উপাচার্যের পিএস আমিনুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তাই আমি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অফিস করব। কারো কথায় আমি অফিস ত্যাগ করবো না।

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক আসাদ মণ্ডল বলেন, ভিসি নাই, উনি এখনও চেয়ারে কেন? আমাদের অনেকের জীবন শেষ করে দিয়েছে এই আমিনুর রহমান। তিনি নিজেকে উপাচার্যের নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএস দাবি করছেন। এটি লজ্জাজনক ও হাস্যকর।

উপাচার্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে গঠিত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলেও ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে আগের তারিখ দেখিয়ে বিভিন্ন ফাইলপত্রে স্বাক্ষর করছেন উপাচার্য। অথচ গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে পাঠানো একটি পরিপত্রের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাস্থ গেস্ট হাউস ছাড়া কোনো ধরনের লিয়াজোঁ অফিস চালু না রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তাফা কামাল বলেন, ভিসি স্যারের মেয়াদ কবে শেষ হয়েছে তা আমার জানা নেই। প্রজ্ঞাপন না দেখে বলতে পারব না।

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সরিফা সালোয়া ডিনা।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে কলিমউল্লাহর ‘নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির’ প্রতিবাদ করে তার শাস্তি এবং সহযোগীদের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্যের বিভিন্ন দুর্নীতির প্রমাণ পায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক ও নিয়োগসহ মোট ১১১টি অভিযোগের এখন তদন্ত করছে ইউজিসির অপর একটি তদন্ত কমিটি।

গত ২৭ মে এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট করেন কলিমউল্লাহ। সেই রিটের শুনানি এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে উপাচার্য কলিমউল্লাহকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।