জবিতে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চায় ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে চায়।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সমিতির অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে এই অনলাইন জরিপে মোট ৩১৭১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ২৪০৯ জন শিক্ষার্থী। যা জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৭৫.৯৭ শতাংশ (প্রায় ৭৬ শতাংশ)।
সশরীরে পরীক্ষার পক্ষে মত দেন ৬০৪ জন শিক্ষার্থী। যা জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ১৯.০৪ শতাংশ। এছাড়াও পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত না বলে মত দিয়েছেন ১৫৮ শিক্ষার্থী। যা মোট জরিপের ৫ শতাংশ। তবে ৩ বিষয়েই শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ উঠে এসেছে।
অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চেয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহনা মেহজাবিন বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা চাই। সিজিপিএ কম আসুক। সমস্যা নেই আমার। তবুও আর সময় নষ্ট না করার বিনীত অনুরোধ রইল। পরীক্ষার ফি গুলো দিয়ে যাদের অনলাইন পরীক্ষা দেওয়ার পর্যাপ্ত উপকরণ নেই ওগুলোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। সশরীরে পরীক্ষা না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বাবদ ব্যয় যা হতো সেটা হচ্ছে না। ওই টাকার সঠিক উপযোগ আমার মতে এটাই হওয়া উচিত।
অপরদিকে এখনই সশরীরে পরীক্ষা দিতে চেয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান আহমেদ রাফি বলেন, করোনার জন্য দীর্ঘ দেড় বছর ধরে একই সেমিস্টারে আটকে আছি। অনেক ডিপার্টমেন্টে অনলাইনে মিড এক্সাম নিচ্ছে। অনেক ডিপার্টমেন্টে নেওয়া শেষ। তবে তাতে অনেক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। কেউ কেউ নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যার জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র জমা দিতে পারছে না আবার অনেকে কানেক্ট হতে পারছে না। এমতবস্থায় অবশ্যই সশরীরে পরীক্ষা নিতে হবে এবং তা যত দ্রুত সম্ভব হবে ততই মঙ্গল। একই সেশনের যে সব বন্ধুরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে তারা আমাদের থেকে ২/৩ সেমিস্টার এগিয়ে গিয়েছে।
এখনি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত নয় জানিয়ে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী নভেরা হাসান নিক্কণ বলেন, আমি চারুকলা ও ছাপচিত্র বিভাগে পড়ছি। আমাদের এখানকার ৮০% কোর্সই প্র্যাকটিকাল এবং যেগুলো নির্দিষ্ট স্টুডিও এবং যন্ত্রাংশ ছাড়া করা সম্ভব না এবং সেগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজে ম্যানেজ করে করাও সম্ভব না। আমাদের গত ৬-৮ টি সেমিস্টারের কোর্সগুলো সবই অনলাইনে শেষ হয়েছে। মানে প্র্যাকটিকাল কোর্স তত্ত্বীয়ভাবে শেষ হয়েছে। এই জ্ঞান দিয়ে আমাদের বা আমার পক্ষে মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সম্ভব না। পরবর্তীতে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করতে গেলে, আমরা কিছুতেই তাল মিলাতে পারব না। তাই উপযুক্ত পরিমাণ স্টুডিওবেজড ক্লাস না করে, আমি পরীক্ষায় বসা অনর্থক বলে মনে করি।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি যদি শুধু বাড়তেই থাকে তবে শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদান পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন আশু প্রয়োজন। আমাদেরকে অনলাইনে আরও দক্ষতার সাথে ফাইনালসহ সকল পরীক্ষা যথাসময়ে নিয়ে সকল সেশনজট নির্মূল করতে হবে। ইন্টারনেটকে সারা দেশে পর্যাপ্ত ও সহজলভ্য করতে হবে। শুধু ব্যবহারিক ক্লাশ ও পরীক্ষা অনলাইনে সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে ব্যাচ ভিত্তিক স্বাস্থ্য বিধি মেনে ইন ক্যাম্পাস ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা নিতে হবে। এভাবে বছরের পর বছর বন্ধ রেখে সময় নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতোমধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে তা দূর করতে হবে।
এ বিষয়ে অনলাইন পরীক্ষা আহবায়ক কমিটির সদস্য ও আইন অনুষদের ডিন ড. সরকার আলী আককাস বলেন, ইতিমধ্যেই দেড় বছর নষ্ট হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা এখন পুরো অনিশ্চিত। তাই আমরা বিকল্প হিসেবেই অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছি। কারণ এভাবে বসে থাকলে শিক্ষার্থীদের আরও সময় নষ্ট হবে এবং সার্বিকভাবে সেশনজট আরও বাড়বে।