কে হচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম উপাচার্য?

  • আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হচ্ছে মার্চের দুই তারিখে। দেশের প্রথম নারী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম প্রথম মেয়াদে নিয়োগ পান ২ মার্চ ২০১৪ সালে। দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পান ২০১৮ সালে। বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে আছেন আর এক মাসেরও কম সময়। অর্ধ শতাব্দীর পুরনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি আবর্তিত হয় উপাচার্য পদটিকে কেন্দ্র করে। তাই কে হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য এ আলোচনা এখন ক্যাম্পাসের সর্বত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক এমন সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে চলছে নীরব প্রতিযোগিতা। সবাই যার যার মতো করে সরকারের নানা মহলে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ এর অ্যাক্ট অনুসারে সিনেট সদস্যদের ভোটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ৩ জনের নাম পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। আচার্য তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ দিবেন। তবে আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করতে পারেন। উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে যারা রয়েছেন তাদের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের চেয়ে সরাসরি উপাচার্য হয়ে আসার দিকেই আগ্রহ বেশি দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ তম উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন ৭ জন প্রভাবশালী অধ্যাপক। এরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.আমির হোসেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.নুরুল আলম, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শেখ মো. মঞ্জুরুল হক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদার। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হানিফ আলী।

ড. আমির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্তরে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। অধ্যাপক নুরুল আলম বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদে দায়িত্বে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহ নানা প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই অধ্যাপকের। অধ্যাপক শেখ মঞ্জুরুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সহ নানা প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) পদে দায়িত্বে আছেন।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক রাশেদা আখতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী কোষাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্বে আছেন। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই অধ্যাপক ভিসি পদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদার বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সহ নানা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে এই শিক্ষকের। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আছেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হানিফ আলী। এই দুই সিনিয়র অধ্যাপকের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা নতুন উপাচার্য হিসাবে এমন কেউ আসুক যিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেশনজট দূর করবেন, নিয়মিত সমাবর্তন ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন দিবেন। কেমন উপাচার্য চাই? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল রনি বলেন, আমরা এমন উপাচার্য চাই যিনি নিজের ও আজ্ঞাবহ শিক্ষকদের আখের গুছাতে ব্যস্ত না হয়ে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের সকল অংশীজনের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে মনোযোগী হবেন। যিনি শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হবেন। দক্ষ প্রশাসক ও বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবার আগ্রহ ও সামর্থ্য আছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, আমরা এমন ভিসি চাই যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধ করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করতে পারবেন।

জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমরা চাই নতুন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীলতা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং ছাত্রবান্ধব হবেন। নতুন উপাচার্য হিসাবে যিনিই আসবেন তার কাছে প্রত্যাশা থাকবে নিয়মিত জাকসু নির্বাচন এবং সমাবর্তন আয়োজনের ব্যাপারে যাতে আগ্রহী থাকেন।