ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল ওরা কিন্তু জাতির বীর সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে মাতৃভাষা, প্রাণের ভাষা বাংলা। অতপর প্রতিষ্ঠা পেয়েছে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। জাতির সেই বীর সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে সম্মান প্রদর্শনে মহামূল্যবান স্থাপনা শহীদ মিনার পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি বর্ণিল আলপনা আর সাজ-সজ্জাতে সেজেছে। রং করা হয়েছে মূল বেদিসহ সংলগ্ন এলাকা। ভাষা আন্দোলনের নানা গান, কবিতা ও স্লোগানে রাস্তার পাশের দেয়ালগুলো চকচক করছে। এর পাশাপাশি ছয় স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে শহীদ মিনার এলাকা। অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকায় সিসিটিভি ও হাই পাওয়ারের লাইট স্থাপন করা হয়েছে।
গেল বছরের মত এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে হবে। ‘অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও সাব কমিটির’ বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন আর ব্যক্তিপর্যায়ে দুজন শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশের রাস্তা— পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হবার রাস্তা— শহীদ মিনার দিয়ে বের হবার ক্ষেত্রে দোয়েল চত্বরের দিকের রাস্তা অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে বের হতে হবে। কোনোক্রমেই প্রবেশের রাস্তা দিয়ে বের হওয়া যাবে না।
শহীদ মিনার যেভাবে আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল-
ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিসৌধ, স্মৃতির মিনার -শহীদ মিনার। মাতৃভাষা ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রসহ সাধারণ মানুষেরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলেই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়, আর সবাই মিলে সে রাতের মধ্যেই কাজটা করেও ফেলে। পরদিন, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ শফিউরের পিতা সেই মিনারের উদ্বোধন করেন।
পরবর্তীতে ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে। এবং প্রথমেই শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয় তারা। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া।
এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। তারও আয়ু বেশি দিন ছিল না। সরকারি ফতোয়ায় ভেঙে ফেলা হয় সেই মিনারটিও। কয়েক বছর পরে, বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেল। অবশেষে ১৯৫৭-তে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান এবং ভাস্কর নভেরা আহমেদের হাত ধরে নির্মিত হতে যাচ্ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
এরই মধ্যে ১৯৫৮-তে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরির পুরো কাজটাই বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আযম খানের আমলে নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি এর নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করেন। মূল নকশা ছেঁটে-কেটে দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ভাষা শহীদ আবুল বরকতের মাতা হাসিনা বেগম নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।