স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা সম্পর্কে জানে না ঢাবির ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী

  • ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

গেল বছরের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু হলেও শতকরা ৯৬ ভাগ শিক্ষার্থী জানে না কীভাবে স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ-সুবিধা নিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিকের (স্বাস্থ্য অর্থনীতি) করা এক জরিপে এমন তথ্য জানানো হয়।

ইন্সটিটিউটটির অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৫০০ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি জরিপ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়সারা ভাবের কারণে স্বাস্থ্যবিমা সম্পর্কে এবং তার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবগত নন তারা। এছাড়া বিভাগগুলোতে বিমার বিষয়ে খোলা-মেলা আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে।

জানা যায়, ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ স্বাস্থ্যবিমা সফল করতে কিছু সুপারিশ করেন। যেখানে বলা হয়-সকল বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের বিমা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন দেওয়া, বিমা সুবিধা নিতে শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাপ চালু করা, মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম যুক্ত করা এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বুথ বসিয়ে ক্যাম্পেইন করা।

বিজ্ঞাপন

তিনি সুপারিশ করেন, কোনো শিক্ষার্থী হসপিটালাইজড হলে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা সুবিধা পাবেন। দৈনিক শর্তহীন পাঁচ হাজার টাকা নিশ্চিতকরণ এবং অন্যান্য ত্রুটি সমাধান করে পুনরায় চুক্তিনামা স্বাক্ষর করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন অধ্যাপক হামিদ।

স্বাস্থ্যবিমার অগ্রগতির খোঁজখবর করে দেখা যায়, বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের নিয়ে একটি মিটিং করেছে কর্তৃপক্ষ। এ পদক্ষেপ গুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ না থাকায় সেভাবে সফল হয়ে উঠেনি ঢাবির স্বাস্থ্যবিমা।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিমা প্রোগ্রামের ত্রুটি নিঃসরণ, বিমা কোম্পানির আন্তরিকতা বেশি প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ এবং মুজিববর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা স্বাস্থ্যবিমা চালু করেছি। বিমা সম্পর্কিত সকল তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে, বিভাগে দেওয়া আছে। এগুলো জানতে হবে। জানার কোনো বিকল্প নাই।

স্বাস্থ্যবিমা যেভাবে নিতে হবে:

বিমার আওতাভুক্ত ৩০টি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় du.ac.bd ওয়েবসাইট থেকে জিওপি ফরম ডাউনলোড করে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন এবং আইডি কার্ডের ফটোকপি যুক্ত করে [email protected] এ মেইল করে অথবা এই নম্বরে ০১৭১৫৪১৩৬৩৫ (সহকারী হিসাব পরিচালক (স্বাস্থ্যবিমা) মো. ছানোয়ার হোসেন) ফোন করে স্বাস্থ্যবিমা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

এক্ষেত্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা হারে বছরে সর্বোচ্চ ১০ দিনে সর্বমোট ৫০ হাজার টাকা ক্যাশলেস সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীকে কোন টাকা দিতে হবে না, যা ব্যয় হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিমা কোম্পানির থেকে নেবে।

এছাড়া দেশের যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ বা আওতাভুক্ত হাসপাতালে বহিঃবিভাগ চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ওয়েবসাইট থেকে ক্লেইম ফর্ম ডাউনলোড, পূরণ এবং ব্যয় বিলের কপি যুক্ত করে শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব বিভাগ, ইনস্টিটিউটে জমা দিয়ে খরচের টাকা ফেরত পাবেন।

উল্লেখ্য, গেল বছরের ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মিত শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় বাৎসরিক মাত্র ২৭০ টাকা প্রিমিয়াম প্রদান করে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা তালিকাভুক্ত বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমা প্রকল্পের আওতায় আনা হলো।

প্রতিবছর ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের এককালীন বাৎসরিক মাত্র ২৭০ (দুইশত সত্তর) টাকা প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে। চলমান শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময় যেসকল নিয়মিত শিক্ষার্থী বার্ষিক প্রিমিয়ামের টাকা দিতে পারেননি, তারা https://student.eis.du.ac.bd -ওয়েবসাইটে লগইনের মাধ্যমে health insurance বাটন ক্লিক করে প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিতে পারবেন। টাকা জমা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বিমা প্রিমিয়ামের একটি জমা রশিদ পাবেন। এটি তাদের সংরক্ষণ করতে হবে। বিমা সুবিধা দাবির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে প্রিমিয়াম জমা রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বিমা সুবিধা পাবেন। এরমধ্যে হাসপাতালে থাকাকালীন কেবিন/ওয়ার্ড ভাড়া, হাসপাতাল সেবা, অস্ত্রোপচার জনিত ব্যয়, চিকিৎসকের পরামর্শ ফি, ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিল বাবদ দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা চিকিৎসা ব্যয় পাওয়া যাবে।

বহির্বিভাগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এরমধ্যে বহির্বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় অর্ন্তভুক্ত থাকবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ফি বাবদ প্রতি ব্যবস্থাপত্রে সর্বোচ্চ ৫শ’ টাকা পাওয়া যাবে।

কোন শিক্ষার্থীর বয়সসীমা ২৮ বছর অতিক্রম করলে অথবা ছাত্রত্ব হারালে বিমা সুবিধা পাওয়া যাবে না।