ট্রেনের ছাদে ঢাবি ছাত্র নিহত: পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

  • ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র মাহাবুব আলম আদরের নিহত হওয়ার ঘটনায়, তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আপনজনদের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৮ মার্চ) নিহত মাহবুব আলম আদরের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। আদর ক্ষেতলাল পৌর এলাকার সাখিদার পাড়া মহল্লার ব্যবসায়ী ও জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ওরফে মিঠুর ছেলে। দুই ভাইবোনের মধ্যে মাহবুব আলম বড়।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, বুধবার (১৬ মার্চ) বন্ধু এমরানের কাছ থেকে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে বের হয়। ওই রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেনের ছাদের ওপর থাকা অবস্থায় মাহবুব আলম আদর তার ফেসবুকে সর্বশেষ একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে লেখা ছিল- ‘অফ টু কুষ্টিয়া। কঠিন তবুও আনন্দঘন, মাঝপথে জুটেছিল, অপরিচিত সঙ্গী।’

যেখানে ট্রেনের ছাদে অপরিচিত এক সঙ্গীর সাথে ছবিতে দেখা যায় মাহবুবকে। বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্য কেউই চিনতে পারছেন না, অপরিচিত ওই ব্যক্তিটিকে। মাহবুবের কাছে টাকা কম থাকলেও তার কাছে দুটি দামি মুঠোফোন ছিল। তবে সেই মুঠোফোন দুটি অক্ষত ছিল।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তার সহপাঠী এমরান হোসেন বলেন, মাহবুব আমার কাছে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে বলেছিল সে কুষ্টিয়া যাবে। আমাদের বন্ধুরা কেউ তার সঙ্গে যায়নি। আমাদের ধারণা, মাহবুব খুব সহজ-সরল ছিল, সে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের ছেলে নয়। কেউ তার সরলতার সুযোগ নিয়ে ট্রেনের ছাদে তুলে নিয়ে দামি মুঠোফোনটি দুটি ছিনিয়ে নিতে হত্যা করতে পারে। কারণ, তার মাথার পেছনের আঘাতটি ধারালো অস্ত্রের বলে ধারণা করছি। আমরা মাহবুবের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও অপরাধ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী জুলিয়াস সিজার তালুকদার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি পোস্ট দিয়েছেন।

যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মুহসিন হলের মাহবুব ট্রেন থেকে পড়ে মারা যায়নি, তাকে খুন করা হয়েছে। তার মাথার পিছনের আঘাত দেখে তা স্পষ্ঠই বুঝা যায়৷ আর তার সাথে ট্রেনের ছাদে থাকা অপরিচিত সঙ্গীকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই সন্দেহ আরো গভীর হচ্ছে। আমরা আমাদের ভাইয়ের অপমৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে কাজ করছি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষেরও সংশ্লিষ্টতাও খতিয়ে দেখা হোক।’

এদিকে নিহত মা মোছা. মৌলদা খাতুন বলেন, বুধবার রাত ৯টার দিকে মোবাইলে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে তখন বলেছিল- মা আমি কুষ্টিয়া যাচ্ছি। কার সঙ্গে যাচ্ছো বলতেই বলল অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। এরপর রাত ১২টায় আবার ফোন দিয়েছিলাম। ফোন আর রিসিভ করেনি। বৃহস্পতিবার সকালে খবর আসলো আমার ছেলে আর নেই।

তিনি বলেন, আমার ছেলে দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে ট্রেনের ছাদে একটি ছবি ফেসবুকে দিয়েছিল। ওই ছবিতে আমার ছেলের পেছনে এক ব্যক্তিকে দেখা গেছে। ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পেলেই আমার ছেলের মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।

কুষ্টিয়ার পোড়াদহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজের আলী বলেন, খবর পেয়ে হার্ডিঞ্জ রেলসেতু থেকে মাহবুবের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছিল। পরে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তবে কীভাবে সে মারা গেল তা জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে সঠিক তথ্য জানা যাবে।