রমজানে উৎসবমুখর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



আরিফ জাওয়াদ, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনা অতিমারির দোলাচলে গেল দু’বছরের রমজান মাস ক্যাম্পাসে কাটাতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। মহামারি করোনার ধাক্কা কিছুটা সামলে উঠলে গেল বছরের ১০ অক্টোবর খোলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; শিক্ষার্থীর পদচারণায় প্রাণ ফিরে পায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। রমজান মাস আসলেই প্রিয় ক্যাম্পাস ও হলগুলো এক উৎসবের আমেজে মেতে থাকে।

ক্যাম্পাস আর হলেই সীমাবদ্ধ না! এছাড়া এ সময়ে টিএসসি, ডাকসু ক্যাফেটরিয়া, কার্জন হল ক্যাফেটরিয়া কিংবা ক্যাম্পাসের অন্যান্য স্থানে ইফতারের এক উৎসব বিরাজ করে। সেহরিতে চলে শিক্ষার্থীদের দৌঁড়-ঝাপ ; মেয়েদের হলগুলোতে সেটা না থাকলেও, ছেলেদের হলগুলোতে রয়েছে একধরনের প্রতিযোগিতা। এক হল থেকে অন্য হলে স্বল্প মূল্যে পছন্দের খাবার খেতে যাওয়াতে রয়েছে এক ধরনের অবাধ প্রতিযোগিতা।

এমন উৎসব মুখরতার মাঝেও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা ও অভিযোগ। কারো বা এবারই পরিবার ছাড়া প্রথম ইফতার ও সেহরি খেতে বসা। কারো আবার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম পরীক্ষাতে বসা। রমজানে ক্লাশ-পরীক্ষাতে কেউবা হয়ে উঠেছে ভীষণ বিরক্ত। বার্তা২৪.কমের আজকের আয়োজন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে কেমন কাটে শিক্ষার্থীদের রমজান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো দিনের বেলায় আলোতে যেমন, রাতেও ঠিক তেমনই। এমন আলোর মধ্যে থেকেও, নিজেদের আলোয় আলোকিত করতে মরিয়া এখানকার প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী। প্রতিটা রাত, প্রতিটা দিন এখানে ‘স্বপ্ন পূরণের গল্প’ লিখা হয়। রাত-দিনের হিসেব, এখানে কেউ করে না। হিসেবে করে স্বপ্ন পূরণের দিন-ক্ষণ, হিসেবে করে কত দিন, কত রাত বাকি স্বপ্নের কাছে যেতে। রমজান এসে ‘স্বপ্ন’ আর সেই স্বপ্ন পূরণে মহান আল্লাহ তা’লার সন্তুষ্টি লাভের আশায় মশগুল থাকে এ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীরা।

তারাবির সালাত দিয়ে একটি রোযার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। হলের মসজিদগুলোতে ভরে উঠে শিক্ষার্থী দিয়ে। জায়গা না মেলায়, কার্পেট বিছিয়ে হল মাঠে সালাত আদায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারাবির নামায মাত্র শেষ হয়েছে। নামায শেষে কেউবা ক্লান্ত শরীরে হিম-শীতল বাতাস লাগাতে লাগাতে আপন মনে কার্পেটে শুয়ে রাতের আকাশ দেখেন আর বুকে স্বপ্ন লালন করেন।

তেমনই আকাশের পানে তাকিয়ে থাকা এক স্বপ্নবাজ তরুণ আজিজুল হক, সবে স্নাতক শেষ করেছেন। ফলাফল এখনও প্রকাশ হয় নি। তারাবির সালাত শেষ করে শুয়ে আকাশ দেখছেন আজিজুল। চোখে মুখে স্বপ্ন আর বুক ভরা কষ্ট চেপে নিয়ে শুয়ে আছে এ তরুণ। কাছে গিয়ে বসতেই, কিছুটা ভড়কে উঠে বসে পড়লেন আজিজুল। কেমন কাটছে ক্যাম্পাসে রমজান, জানতে চাইলে কিছুটা বিরক্তির কণ্ঠে আল-হামদুলিল্লাহ, ভাল। তাঁর এক পর্যায়ে গল্পের রেশ ধরতে গিয়েই আজিজুল তাঁর জগতে প্রবেশ করায় প্রতিবেদকে। বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে তত যেন হতাশা বাড়ছে কাঁধে ঝেঁকে বসছে হতাশা। কি করব? না করব, আদৌতে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব কি না? আবার পারলেও সেটি কবে?’ এমন হতাশার গল্প শুরু করলেন। আজিজুল মনে করেন, এখানকার হাজারো শিক্ষার্থীর চোখে মুখে এমন হতাশা রয়েছে। তারপরেও তাঁরা ভাল থাকার অভিনয় করেন ; চেষ্টা করেন সুখী থাকার। কম দামের নিম্নমানের খাবার খেয়েও বাসাতে বলেন ইফতারি আর সেহরিতে অনেক সুস্বাদু খাবার খেয়েছেন। নিজের হতাশার জীবন লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে, আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছিই যেন জীবন হয়ে গেছে। আজিজুলের কাছে ক্যাম্পাসের রমজান অনেকটা বোঝার মত। কারণ সেহরি-ইফতার সব মিলিয়ে খেতে গেলে দৈনিক ২০০ টাকার মত পড়ে যায়। যেখানে রমজান ব্যতীত অন্য সময়ে তাঁর লাগত ৭০-৯০ টাকা। “অনেকটা বোঝার উপর সবজি আঁটির মত লাগে আমাদের মত বেকার তরুণদের কাছে”, বলে মন্তব্য করেন তিনি। এখানে কেউ টিউশনি করে, কেউবা বাসা থেকে টাকা নিয়ে চলে।

কথার এক পর্যায়ে আজিজুল বলেন, প্রশাসনের সদিচ্ছার প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর শতবর্ষে কতটুকু শিক্ষার্থী বান্ধব হতে পারল সেটাই দেখার বিষয়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা মানায় নিতে শেখে, নতুন পরিবেশের সাথে খাপ-খাওয়াতে শেখে। মেনে নেওয়ায় যেন এখন জীবন হয়ে গেছে।

তারাবির নামায শেষ করে, কেউ পড়তে চলে যায় রিডিং রুমে, কেউ বা বসে আড্ডায়। আড্ডায় বসাদের স্নাতক শেষ করা নেই বললেই চলে। আজিজুলের জায়গা থেকে কয়েক কদম এগোতে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জটলা। শাকিল, আশরাফ, রবিউল, রব্বানী সহ বেশ কয়েকজন গোল হয়ে বসে অট্ট-হাসিতে খোঁস গল্পে মেতে উঠেছেন। ক্যাম্পাসে রমজান কেমন কাটছে, বলে জানতে চাইলে তিক্ত অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে বসেন তাঁরা।

প্রথমে খাবার দামের চড়া মূল্যেও অভিযোগ দিয়ে শুরু করেন। তাঁরা বলেন, রাতারাতি এভাবে খাবার দাম বৃদ্ধি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অহেতুক প্যাকেজ করে খাবারের দাম বৃদ্ধি করেছে, দাম আকাশচুম্বী হলেও মান একেবারেই বাড়ে নি, বলে তাঁদের অভিযোগ। হল প্রশাসনের উচিত বিষয়গুলো নজরদারি’র মধ্যে রাখা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাল খাবার খাওয়া মানে, একটি জাতিকে ভাল খাবার খাওয়ানো। ঢাবি শিক্ষার্থীরা সুস্থ্য থাকলে একটি জাতি সুস্থ্য থাকবে, বলে মনে করেন ওই শিক্ষার্থীরা।

সেশনজট কাটিয়ে উঠতে রমজানেও বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু রেখেছে ক্লাশ ও পরীক্ষা। তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, সেহরী শেষ করে ঘুম থেকে সকাল ৯ টায় ক্লাশে যাওয়াটা বেশ বিরক্তির। অনেক কষ্ট হয়ে যায়! তাঁদের সাথে কথা বলতে বলতে দূর থেকে একজন বলে উঠেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত সিলেবাস শেষ করে দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে, উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে বিষয়টি বেশ সাংঘর্ষিক।

রাত তখন ১২ টা ৫, সেখান থেকে উঠে রিডিং রুমের সামনের ফিল্টার থেকে পানি নিচ্ছে এক চশমা পরিহত যুবক। নাম সালেহীন ; স্নাতক শেষ করেছে, স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল এখনও বের হয় নি। বোতলে পানি ভরানো শেষ হলে, একটু কথা বলতে চাইলে আগ্রহ দেখান সালেহীন।

রমজান মাস কেমন কাটছে বলে, জানতে চাইলে সালেহীন বার্তা২৪.কম’কে বলেন হতাশার মধ্যে নির্ঘুম রাত কাটছে। পরিবার থেকে চাপ আসছে, কবে চাকরি পাব। রহমতের মাসে আল্লাহর কাছে রহমত চাইছি যেন দ্রুত একটা চাকরি পেয়ে যাই। সেহরি করে ঘুমান কি’না জানতে চাইলে তিনি জানান, হ্যাঁ সেহরি করেই ঘুমানো হয়। এভাবে তাঁর শৈশব-কৈশোরের অনেক গল্পেই মেতে ওঠে বার্তা২৪.কমের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।

সালেহীন বলেন, জীবনে কখনও ভাবি নি পৃথিবীটাকে এমন বোঝা মনে হবে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে কত না দুরন্তপনায়। সব কিছুই যেন এখন বিস্মৃতি। এখন যুদ্ধতে নামতে হবে, চাকরি নামক এ যুদ্ধে সফলতা নিয়ে ফিরতেই হবে! এক পর্যায়ে তখন ঘড়ির কাটা ৩ টা ছুঁই ছুঁই করছে। কথা শেষের এক পর্যায়ে অভিবাদন জানিয়ে সালেহীন সেহরি খেতে চলে যায়।

এদিকে সালেহীনের পিছু নিলে, মিলে হলের ক্যান্টিন। হলের দোকানগুলোতে দেখা যায় উপচে পড়া ভীড়। ক্যান্টিন থেকে বের হওয়া, এক বন্ধু আরেক বন্ধু’কে বলছে। ওদিকে যাস না! “কামরুল আগুন লাগায় দিছে!” কয়েক কদম এগিয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা যায় আগুন না, দাম বেড়েছে দ্বিগুণ হারে পূর্বের তুলনায়। খাবারের দামই যেন আগুন হয়ে গেছে!

এদিকে স্বল্প মূল্যে খাবার খেতে এক হল থেকে আরেক হলে ছুটছেন অনেক শিক্ষার্থীরা। একজন আরেকজন’কে বলেছে “চল অমুক হলে যাই, ওখানে দাম কম। খাবারও তুলনামূলক মান ভাল।” শিক্ষার্থীদের সেহরী খেতে এক হল থেকে অন্য হলে ছোটার দৃশ্য, প্রত্যেকটি হলে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে মেলে। সেহরী খাওয়া শেষ হলে কেউ ছোটে রিডিং রুমের দিকে স্বপ্ন পূরণের জন্য, কেউ ছোটে ঘুমোনোর জন্য। কারণ, সকালে হয়তো কারো পরীক্ষা আবার কারো বা রয়েছে ক্লাশ।

কেউ ক্লাশ না করেই দীর্ঘ ঘুম থেকে উঠে ; যোহরের নামায আদায়ের মধ্য দিয়ে দিন শুরু করে। এমন একজন সিফাত আলম, পড়ছেন স্নাতক ২য় বর্ষে। বার্তা২৪.কমের এ প্রতিবেদক’কে সিফাত জানান, রোযা রেখে ঘুম থেকে উঠতে অনেক কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে ক্লাশে বন্ধুরা প্রক্সি দেয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাশ-পরীক্ষা থাকলে, কষ্ট হলেও যাওয়া হয়।

ইফতারিতে ঢাবি যেন এক টুকরো উৎসবের কেন্দ্রে পরিণত হয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ইফতারের আমেজ লাগে সেই দুপুর ৩ টা থেকে। ক্যাম্পাসের সাবেক, বর্তমান কিংবা বহিরাগতরা মেতে ওঠে ইফতারির আমেজে। টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি সামনে, হলগুলোর সম্মুখ কিংবা হল পড়াতে পুরোনো আমেজে মুখর এবারের ইফতার। মহামারী করোনার দু’বছর পর, এবারের ইফতারের আমেজ যেন ভাল ভাবেই লেগেছে।

ঠান্ডা শরবত, ফল, ছোলা-বুট, বুন্দিয়া, বেগুনি, পিঁয়াজু, চপ হাজারো রকমের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বসে ইফতারি খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া রমজান মাসে যেন এখানকার নিত্য-নৈমেত্তিক ব্যাপার। টিএসসি, বটতলা, শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ সম্মুখে ইফতারির আয়োজনে মেতে ওঠার দৃশ্য যেন চোখে পড়ার মত।

গোল হয়ে পত্রিকা কিংবা বড় গামলা বিছিয়ে ইফতারির আয়োজনে মেতে ওঠেন বর্তমান, সাবেক কিংবা বহিরাগতদের কোন গ্রুপ। পারস্পরিক ফেলে আসা হৃদ্যতার সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করা হয়ে যায় ইফতারির এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে। হলগুলোর মাঠেও চলে নানান আয়োজনে ইফতার।

পরিবার ছাড়া ইফতার করতে বসেছেন, এমন দু’জনের সাথে কথা হয় বার্তা২৪.কমের। তাঁরা জানায়, ইফতার ও সেহরী পরিবার ছাড়া এবারই প্রথম। তবে ইফতার ও সেহরি খেতে বসলে পরিবারের জন্যও একটু কষ্ট হয়। তবে শতবর্ষী এ প্রাণের বিদ্যাপিঠে কষ্ট-সুখ কোন কিছুই দীর্ঘস্থায়ী নয়। বন্ধু-বান্ধবের ব্যাঙ্গাত্মক বাক্য বিনিময়ে সকল কষ্ট যেন ম্লান হয়ে যায় এখানে।

   

জাবিতে খাবার হোটেলে দাম বেশি রাখার অভিযোগ: ১৫ হাজার টাকা জরিমানা



মাহমুদুল হাসান, বার্তা২৪.কম, জাবি করেসপন্ডেন্ট
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বটতলাস্থ ‘রাঁধুনী’ হোটেলের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কাছ থেকে খাবারের দাম বেশি রাখার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কনজ্যুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি)।

শুক্রবার (৩ মে) বটতলায় এবং সালাম-বরকত হল সংলগ্ন খাবারের দোকানগুলোতে খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ, মূল্য তালিকা পর্যবেক্ষণ ও হোটেল মালিকদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও কনজ্যুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি) জাবি শাখার উপদেষ্টা ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া।

অভিযান পরিচালনাকালে ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘রাঁধুনী’ হোটেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি এবং যথোপযুক্ত জরিমানা করেছি। প্রত্যেক দোকানে খাবারের মান ঠিক রাখতে সতর্ক করা হয়েছে। নিয়মিত আমাদের এই অভিযান চলবে। ভবিষ্যতে পচা-বাসি খাবার খাওয়ানোর কিংবা দাম বেশি রাখার অভিযোগ পেলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত বুধবার (১ মে) দর্শন বিভাগের এক অধ্যাপক ‘রাঁধুনী’ হোটেলে খাবার খেতে গেলে খাবার মূল দামের দ্বিগুণ রাখেন হোটেল মালিক রিপন মিয়া।

ভাউচারে দেখা যায়, ৩০ টাকা মূল্যের তিন প্লেট ভাতের দাম রাখা হয়েছে ৯০ টাকা। ৩৫ টাকা মূল্যের দইয়ের দাম রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। ৬০ টাকা মূল্যের টেংরা মাছের দাম রাখা হয়েছে ৮০ টাকা। শাক ও কচুর লতির দাম ৮০ টাকা হলেও রাখা হয়েছে ৩শ ৪০ টাকা। ১শ টাকা মূল্যের দুই পিস রুই মাছের দাম রাখা হয়েছে ৩শ টাকা।

;

চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে ১১ মে ঢাবিতে সমাবেশ



ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর চেয়ে আন্দোলন জোরদার করতে আগামী ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছে ‘চাকরিতে ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থী সমম্বয় পরিষদ’।

শুক্রবার (৩ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের মুখপাত্র শরিফুল হাসান শুভ এ ঘোষণা দেন।

শরিফুল হাসান শুভ বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, ৩৫ বছর চাই। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট থেকে লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর ডিও লেটার প্রদান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্ন, এমপি জোর সুপারিশ করেছেন এবং সেই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে ৩৫ জন স্থানীয় সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নীতিগত সমর্থন করে জোর সুপারিশ করেন।

সেই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে ৫ জন পেশাজীবী সংগঠন ও ৩ জন ছাত্র সংগঠনের লিখিত সুপারিশের ভিত্তিতে দ্রুত প্রজ্ঞাপন চেয়ে আগামী ১১ মে শিক্ষার্থী সমাগম পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হলো।

তিনি আরো বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বাড়াতে হবে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এটা নির্ধারণ করতে হবে। এ দাবি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, এ সময় তিনি চাকরির বয়স ৩৫ বছর চাওয়ার নানাবিধ যৌক্তিকতা ও উপকারিতা উপস্থাপন করেন।

;

জবি শিক্ষককে দেখে নেয়ার হুমকি, সতর্ক করেই দায় সেরেছে প্রশাসন



জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ মো. নিস্তার জাহান কবিরকে প্রকাশ্য হেনস্থা ও হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সাঈদুল ইসলাম সাঈদকে সতর্ক করেই দায় সেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘদিনের দায়সারা কাজের ফলশ্রুতিতেই এখন শিক্ষককেও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। এভাবে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ার ফলে অপরাধ প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কতির ফলে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক মারধরের শিকার হলেও সেটিতে কেউ অবাক হবে না।

গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ২৮ আগস্ট, সোমবার বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষকদের বাস ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে আপনি (সাঈদুল ইসলাম সাঈদ) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ মোঃ নিসতার জাহান কবিরের সঙ্গে চরম ধৃষ্টতামূলক আচরণ করেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির মতামত অনুসারে আপনাকে ভবিষ্যতে এ ধরণের কর্মকান্ড না করার এবং করলে কঠিনতম শাস্তি প্রদান করা হবে মর্মে সর্তক করা হলো।

এই ঘটনায় গত বছর ৩১ আগস্ট তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা, সদস্য হিসেবে সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার হেদায়েতুল্লা তুর্কিকে মনোনীত করা হয়।

এভাবে প্রকাশ্যে একজন শিক্ষককে হেনস্তা ও হুমকির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাঈদুল ইসলাম সাঈদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এছাড়া সাঈদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর আলাদা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিল। পরে সাঈদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ডাক দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে মানববন্ধন স্থগিত করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা বলেন, তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানি নিয়ে একটি লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই অনুযায়ী কিছু সুপারিশমালা দেওয়া হয়েছে৷ এখন প্রশাসন এটাকে কীভাবে নিষ্পত্তি করবে সেটা তাদের ওপর নির্ভর করছে। এখন বাকী দায়িত্ব প্রশাসনের ওপর, তদন্ত কমিটির না। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তাদের পছন্দ না হলে তদন্ত আবার করতে পারে। তদন্ত একাধিক বার হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের সাপেক্ষে উপাচার্যের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ অপরাধের ধরনের উপর ভিত্তি করেই তাকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষক যদি এই বিচারে সন্তুষ্ট না হোন তবে পুনরায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক ড. শাহ মো. নিসতার জাহান কবির বলেন, সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয়ে কিছু বলবো না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সকল সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি। তবে মতামত প্রকাশ বা সমালোচনার অধিকার সকলেরই রয়েছে। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ইতিবাচক কিছুই হয় নি। এর ফলে অন্যায়কারীরা আরও শক্তিশালী হবে, তারা আরও সাহস পাবে। তারা ভাববে অন্যায় করে কিছু হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো কিছু করতে পারে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্ষমতা নেই।

তিনি আরও বলেন, ছেলেটি আমাদের বিভাগের এসে বিভাগের সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছে। বিভাগের সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা বা শক্তির উৎস কোথায় সেটি খুঁজে বের করা উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

জানা যায়, ডিবেটিং সোসাইটির নির্বাচনের জন্য সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অভিযুক্ত সাঈদুল ইসলাম সাঈদ তার পছন্দের ২ জনকে ভোটার করার জন্য অধ্যাপক শাহ নিস্তারকে অনুরোধ করেন। এ সময় অধ্যাপক নিস্তার বলেন, প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য আলাদা শিক্ষক রয়েছেন। তারা বাছাই করে তা নির্ধারণ করেন। তবে সাঈদ অধ্যাপক নিস্তারকে নিজের পছন্দের লোককে ভোটার করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। পরে তিনি অস্বীকৃতি জানালে প্রকাশ্যে 'দেখে নেয়ার' হুমকি দেন।

;

মায়ের কোলে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এলেন মীম



ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জন্ম থেকেই হাঁটতে পারেননা মীম। হাতের সমস্যা থাকার কারণে ধীরে ধীরে লিখতে হয়। মায়ের কোলে উঠেই শিক্ষাজীবনের দুই তৃতীয়াংশ পারি দিয়েছেন তিনি। এবার গুচ্ছ ভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা দিতেও ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কেন্দ্রে মায়ের কোলে চড়ে এসেছেন তিনি।

মীমের পুরো নাম মাহফুজা আক্তার মীম। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশায়। দুই ভাইবোনের সংসারে বড় মেয়ে মীম। তার বাবার নাম মঞ্জু হোসেন পেশায় ফার্নিচার মিস্ত্রী মায়ের নাম সাহেরা বেগম।

শুক্রবার (৩ মে ) গুচ্ছভুক্ত 'বি' ইউনিটের পরীক্ষায় মায়ের কোলে উঠে পরীক্ষার অংশ নিতে আসে মীম। বাহাদুরপুর পন্ডিত কাজী আবুল হোসেন কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। মায়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মীমকে কেউ থামাতে পারেননি। ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে শিকার হতে হয়েছে নানা বাঁধার। তবে নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে স্কুল কলেজ জয় করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হওয়ার অপেক্ষা।

পরীক্ষা শেষে কথা হয় মীমের সাথে। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা ভালো হয়েছে। জন্মগতভাবে আমি শারীরিক অসুস্থ, আমার লেখাপড়ার পুরোটা সময়ই আম্মু পাশে ছিলো, আমার এ পর্যন্ত শিক্ষাজীবন আম্মুর কোলে বসেই। ছোটোবেলায় আমি যখন স্কুলে ভর্তি হতে যাই সাধারণ বাচ্চাদের মতো আমাকে ভর্তি নিতে চায়নি। স্কুল থেকে বলা হয়েছিলো আমি হয়তো পড়তে পারবেনা অন্য বাচ্চাদের সমস্যা হবে। আম্মুর অনুরোধে শিক্ষকরা আমাকে ভর্তি নেয়। ভর্তি নিলেও আমার রোল নির্ধারণ হয় সবার পরে। পরবর্তীতে বার্ষিক পরীক্ষার পর যখন আমি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করি তখন শিক্ষকরা আমাকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর থেকে নিজের চেষ্টায় ভালো ফলাফল ধরে রেখেছি। আজ জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়েছি। প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ ছিলো, আম্মুর স্বপ্নই আমার স্বপ্ন।

মীমের মা সাহেরা বেগম বলেন, কোন মা যেন তার সন্তানকে না বলে যে আমার সন্তান পড়তে চায় না। সকল পিতা মাতার উদ্দেশ্যে আমার একটাই উক্তি চেষ্টা করবেন, আমি আমার অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে এতো দূর আসতে পারলে আপনি আপনার সুস্থ সন্তানকে নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবেন। শিক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই, আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে যদি শিক্ষিত হয় আমি মারা গেলে আমার মেয়ে তার বাবার বোঝা হবেনা। সেজন্য আমি এতদূর তাকে এনেছি।

তার মা আরও বলেন, ওর জন্মের পর থেকেই ওর বাবা আমাকে সাপোর্ট করেছে। আমার আরেকটা ছোট ছেলে রয়েছে। তবে আমার স্বপ্ন আমার বড় মেয়ে মীমকে ঘিরেই। আমি চাই আমার মেয়ে একটা সরকারি চাকরি করুক, সমাজের বোঝা না হোক।

;