ডিসির আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন ঢাবির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সেই শিক্ষার্থী
জেলা প্রশাসকের (ডিসি) আশ্বাসে আমরণ অনশন ভাঙলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এস এম শাহীন আলম।
এর আগে, সোমবার (৯ মে) সকাল ৯টা থেকে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আমরণ অনশনে বসেছিলেন শাহীন। শাহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা’ সূর্য সেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে।
ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম রেজা সাংবাদিকদের জানান, গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশের পর আমাদের নজরে আসে। পরে শাহীন আলমকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তখন তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না। পরে সন্ধ্যায় আমি গেলে আমাকেও সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অনশন ভঙ্গ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে রাতে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেন।
শাহিন আলম বলেন, আমাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যেতে বলা হলে, আমি তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিই একটি চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত আমার এ অনশন চলবে। পরে জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম আশ্বাস দেন চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। এজন্য আমরণ অনশন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। চাকরি না পেলে আবারও অনশনে বসবেন, বলে জানান তিনি।
জানা যায়, শাহীন জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন ছিলেন না। জেলার আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার জ্বর হয়। ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে জ্বর সেরে গেলও ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। দৃষ্টি হারিয়ে গেলে কী হবে, থেমে থাকেনি তার পড়ালেখা।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে সমাজ সেবা অধিদফতরের সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত নড়াইল তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হন শাহিন। ২০১৩ সালে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে ঝিনাইদহের মহেশপুর সামছুল হুদা খান মহাবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন।
২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর সকল বাঁধা উপেক্ষা করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সুযোগ পান। লেখাপড়ার পাশাপাশি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং নিজ উদ্যোগে ভারত, বাংলাদেশের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।