ঢাবি সিনেট নির্বাচন: ৩ শিক্ষককে অযোগ্য ঘোষণা করতে আইনি নোটিশ
যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেটের আসন্ন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করতে আইনি নোটিশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই ও দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আর আই চৌধুরী।
গত সোমবার (১৬ মে) সিনেটের নির্বাচন কমিশনার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ডাকযোগে এ নোটিশ পেয়েছেন বলে জানা যায়।
অভিযুক্ত ওই তিন শিক্ষকের মধ্যে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন তারই বিভাগের এক ছাত্রী, যা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে তদন্তাধীন।
এছাড়া গত বছরের ২২ নভেম্বর লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও যৌন হয়রানি নিয়ে ঢাবির প্রযুক্তি ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (নিটার) ৩৭ জন শিক্ষক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অন্যদিকে, ডিন থাকাকালীন ফার্মেসি অনুষদের তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন মর্মে ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহমানের বিরদ্ধে দুদকে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার সকালে (১৭ মে) এটি (আইনি নোটিশ) আমার অফিসে দিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি নিয়মমাফিক রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
আইনি নোটিশে বলা হয়, অত্যন্ত লজ্জা ও পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ঢাবির মতো একটি পবিত্র বিদ্যাপীঠের অতীব গুরত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী বডি (কমিটি) সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে নীল দলের প্যানেলে মনোনয়ন পেয়েছেন যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত দুজন ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় দুদকে অভিযুক্ত একজন শিক্ষক, যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুলভাবে প্রচারিত হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ও টানা ৩য় মেয়াদে সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের শিক্ষক প্যানেলের ৩৫ সদস্যের মধ্যে উল্লেখিত তিন শিক্ষক থাকায় অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু একজন অ্যালামনাই হিসেবেই নয়, দেশের একজন সচেতন নাগরিক ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের সমর্থক হিসেবে আমি অত্যন্ত মর্মাহত, ব্যথিত ও লজ্জিত।
তিন শিক্ষককে সিনেট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানিয়ে নোটিশে বলা হয়, দেশের মিনি পার্লামেন্ট খ্যাত সকল আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার পবিত্র এ বিদ্যাপীঠের সিনেটে ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে অভিযুক্তদের প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়েরের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১২ মে নির্বাচনের প্যানেল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে নীল দল ও সাদা দল (বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন) তাদের ৩৫ সদস্যের মনোনীত প্যানেল রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নির্বাচন শাখায় জমা দেয়। তবে অভিযুক্তদের কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি বলে জানিয়েছেন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আবদুস সামাদ।
অধ্যাপক সামাদ বলেন, আমাদের কোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। যাদের নাম জমা দেওয়া হয়েছে তারাই চূড়ান্ত।
উল্লেখ্য, আগামী ২৪ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেটে ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রায় ২ হাজার শিক্ষক ভোটার হিসেবে ভোট দেবেন এ নির্বাচনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
সিনেটে সর্বশেষ শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ২২ মে। সে সময় আওয়ামীপন্থী নীল দলের ৩৩ জন ও বিএনপিপন্থী সাদা দলের দুই জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়।