ফি জমাসংক্রান্ত আইটি জটিলতা নিরসনে জবিতে নেই স্থায়ী উদ্যোগ

  • সাগর হোসেন, জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে সেমিস্টারে ভর্তি ও পরীক্ষা ফি প্রদানের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা চালু করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সময়ে আইটি জটিলতায় এই সুবিধাই হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির প্রধান কারণ। দিনে দিনে এই ভোগান্তি যেন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। আবার ফি প্রদান সংক্রান্ত যেকোন সমস্যায় সমাধানে হেল্পলাইন মেইল থাকলেও সেখানে সমস্যা জানানোর পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন রিপ্লাই বা ফিডব্যাক আসে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

প্রতি মৌসুমে ফি প্রদানের ক্ষেত্রে আইটি জটিলতা ধারাবাহিকভাবে দেখা দিলেও এটি সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্থায়ী কোন ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি শুধু আইটি জটিলতা নয় বরং বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে ফি প্রদান না করলেই কেবল সেক্ষেত্রে সার্ভারে ফি জমা দেওয়া যায় না ৷ আর ফি প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিরসনে সচেষ্ট বলেও দাবি কর্তৃপক্ষের। যদিও নির্ধারিত সময়েই অনেক শিক্ষার্থী ফি প্রদান করতে পারে না সার্ভার জটিলতায়।

বিজ্ঞাপন

তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের শেষের দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও পরীক্ষার ফিসহ সকল ফি পরিশোধের জন্য রূপালী ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং সেবা শিওরক্যাশের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শিউরক্যাশ সব জায়গায় পর্যাপ্ত না হওয়ার পাশাপাশি ফি প্রদানের মৌসুমে সার্ভারজনিত সমস্যায় নির্ধারিত সময়ে অনেক শিক্ষার্থীই ফি প্রদান করতে পারতো না বলে জানা যায়। পরবর্তীতে গত বছরের জুনে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ফি প্রদানে মোবাইল ব্যাংকিং রকেট ও নগদের সাথে চুক্তি করে কর্তৃপক্ষ। মোট ৩টি অপারেটরের মাধ্যমে ফি প্রদানের ব্যবস্থা হলেও কার্যত কাটেনি ভোগান্তি।

সার্ভার জটিলতা বিদ্যমান থাকে ফি প্রদানের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধিকাংশ সময়ই ৷ এতে করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি প্রদান করতে না পেরে গুণতে হয় অতিরিক্ত জরিমানা।

বিজ্ঞাপন

নির্ধারিত সময়ের পর পরবর্তী প্রথম একমাসে বিলম্ব ফি'র পরিমাণ ৩০০ টাকা, পরবর্তীতে প্রতিমাসে বিলম্ব ফি'র পরিমাণ হয় ১০০০ টাকা।

গত ৩০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবারের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে (৫-৯ জুন) ক্লাস বন্ধ থাকলেও চলবে সেমিস্টার পরীক্ষা। এরই ধারাবাহিকতায় সেমিস্টার পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের পাশাপাশি পরীক্ষাসহ যাবতীয় ফি প্রদানের নোটিশ দিয়েছে বিভাগগুলো ৷ এক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি প্রদান করার ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় এবারও ভোগান্তিতে পড়েছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। কেউ পরীক্ষা ফি দিতে পারলেও দিতে পারছেন না ইম্প্রুভমেন্ট ফি ৷ আবার কোন কোন বিভাগের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ভালোভাবে ফি প্রদান করতে পারলেও অধিকাংশরাই কয়েকবার চেষ্টা করে ফি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সমস্যা সমাধানে অনেক শিক্ষার্থীরা ফি জমাদানসংক্রান্ত হেল্পলাইনের মেইলে ([email protected]) বিষয়টি অবগত করলেও সেখান থেকে কোন ফিডব্যাক বা রিপ্লাই না আসার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা আইসিটি সেলের দায়িত্বরতদের কাছে সাহায্য চাইলে তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি এড়িয়ে যান বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসবের সমন্বিত প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, সিস্টেম এমন হওয়া উচিত যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবাই জটিলতা ছাড়াই যাবতীয় ফি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে জমা দিতে পারে ৷ বিড়ম্বনার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানাও গুণতে হয়। হাতে টাকা নিয়েও অধিকাংশ তা প্রদান করা যায় না আইটি জটিলতার কারণে। কর্তৃপক্ষের উচিত অতি দ্রুত বিষয়টির স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য্য বলেন, প্রতিটি বিভাগ থেকে ফি জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময় পার হলে ফি জমা দেওয়া যায় না। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়েই ফি দিতে হবে। যেসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে ফি দিতে পারেনি তাদের জন্য সময় বৃদ্ধি করা সংক্রান্ত একটি নোটিশ দ্রুতই দেওয়া হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও অনেক শিক্ষার্থী ফি দিতে গিয়ে আইটি জটিলতায় কেন পড়ে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আইসিটি সেলে যোগাযোগ করলেই আমরা সেই সমস্যা সমাধান করে দেই। এখন ১২ তালায় আইসিটি সেলের অফিস স্থানান্তর করা হয়েছে।

আইসিটি সেলে সমস্যা সমাধানের জন্য যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা একজন আরেকজনের কথা বলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইসিটি সেলে সবাই সব কাজ করে না। দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া থাকে ৷ তাই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত ব্যাক্তিই নির্ধারিত সমস্যা সমাধানে কাজ করে। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করার।