৭০ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

  • রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দেশের উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষায় আলোকিত করার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠ ৬৯ বছর অতিক্রম করে আজ বুধবার (০৬ জুলাই) ৭০ বছরে পা দিল।

বর্তমানে গুণগত শিক্ষা প্রদান, গবেষক তৈরি, শিক্ষা-সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সংকটের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয়টি রেখে চলেছে অসামান্য অবদান।

বিজ্ঞাপন

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় জরুরি হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর দেশের সব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় স্যাডলার কমিশন রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। পরে ১৯৫৩ সালে ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৫৩’ পাস হয়। ওই বছর ৬ জুলাই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩৮ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। ১২টি অনুষদের আওতায় ৫৮টি বিভাগে চার বছর মেয়াদি স্নাতক এবং এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি। এমফিল ও পিএইচডিসহ উচ্চতর গবেষণার জন্য এখানে রয়েছে ৬টি ইন্সটিটিউট। শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গবেষণা কাজে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনার দায়িত্বে রয়েছেন ১ হাজার ২২১ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৬টি। গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়টির দুইজন ইমেরিটাস অধ্যাপক মারা যাওয়ায় বর্তমানে রয়েছেন একজন ইমেরিটাস অধ্যাপক।

বিজ্ঞাপন

ঐতিহাসিক বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অসামান্য অবদান। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের অগ্রণী ভূমিকা। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা। এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবিবুর রহমান, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইয়ুমসহ অনেকে।

জানতে চাইলে রাবি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে না। সেই অর্থ বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এছাড়া দিনটি উপলক্ষে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে এদিন সকালে পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অন্যতম।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় যথেষ্ট এগিয়ে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ৬৯ পেরিয়ে ৭০ বছরে পদার্পণ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শুভাকাঙ্খীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯ বছর পালিত হতে যাচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গৌরবের। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

উপাচার্য আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ, গবেষণার সুনাম, প্রভাব, অভিনবত্ব ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের দক্ষ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ দিতে হবে। নিয়োগে স্বচ্ছতার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

এসময় তিনি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, সেশনজট মুক্ত ও গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় যাতে সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারে সে প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।