ঢাবির ছাত্রী হলে সব ধর্মের জন্য প্রার্থনা কক্ষ
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক হলগুলোতে চালু হয়েছে সকল ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক পৃথক প্রার্থনা কক্ষ। এখন থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মানুসারী শিক্ষার্থীরা সব সময় প্রার্থনা করতে পারবেন নির্ধারিত কক্ষে।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১৪টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৫টি আবাসিক হল রয়েছে। অমুসলিম ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে থাকেন। ভিন্ন ধর্মের ছাত্রীদের জন্য আলাদা হল নেই, পাঁচটি ছাত্রী হলেই সব ধর্মের শিক্ষার্থী রয়েছে।
ছাত্রী হলগুলোতে মুসলমানদের নামাজ ঘরের পাশাপাশি তিন ধর্মের ছাত্রীদের জন্য খোলা হয়েছে আলাদা প্রার্থনা কক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদ্যেগে প্রশংসা কুড়োচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোকেয়া হল এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সুফিয়া কামাল হল, কুয়েত মৈত্রী হল এবং সর্বশেষ গত জুন মাসে শামসুন নাহার হলে তিন ধর্মের জন্য আলাদা প্রার্থনা কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে ছাত্রীদের হলগুলোতে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সব ধর্মের প্রার্থনার জন্য আলাদা একটি কক্ষের দাবি তোলেন একদল শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল বাছির বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এতদিন ছাত্রীদের হলে শুধু মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজ ঘর ছিল। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এখন ছাত্রীদের সব হলেই হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রার্থনা কক্ষ খোলা হয়েছে।
শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটা অসাম্প্রদায়িক জায়গা, এখানে সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের সমান অধিকার আছে। শিক্ষার্থীদের দাবি এবং প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এই ব্যবস্থা করেছি। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করে সামনে এগিয়ে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
এদিকে ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ব্যতিত অন্য ধর্মাবলম্বী ছাত্রদের জন্য আলাদা হল এবং উপাসনালয় রয়েছে। তবে ছাত্রীদের হলে প্রার্থনার জন্য কোনো উপাসনালয় ছিল না। তাছাড়া ছাত্রীরা চাইলেও সবসময় ঢাকেশ্বরী, জগন্নাথ হল বা অন্য কোথাও গিয়ে প্রার্থনা করতে পারে না। অসাম্প্রদায়িক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধর্মের জন্য প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। তার প্রেক্ষিতে ছাত্রীদের হলগুলোতে এখন প্রার্থনা কক্ষ খোলা হয়েছে। এজন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
এদিকে এমন উদ্যেগ প্রশংসার দাবি রাখে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে বার্তা২৪.কমের কথা হলে তাঁরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের এমন উদ্যেগ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ ও লালনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি।