লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বহির্বিশ্বে যখনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং প্রকাশ পায়, ঠিক তখনই নানা বির্তকের মুখে পড়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০১ বছর পার করে ১০২ বর্ষে পদার্পণে করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যাত্রা পথে ঝুলিতে অর্জনও অনেক। তবে র্যাংকিং, শিক্ষার মান, গবেষণা নিয়ে বির্তকের অন্ত নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং তৈরিতে অনেক ইন্ডিকেটরকে বিবেচনাতে নেওয়া হয়। অনেক ইন্ডিকেটর আছে যেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং তৈরির সময় সামনে আসে না, অথচ কর্তৃপক্ষের দাবি ইন্ডিকেটর হিসেবে বিবেচনা করা যায় এমন অনেক কার্যক্রম চালু থাকার পরও র্যাংকিং তৈরির দৌড়ে এসব যুক্ত হয় না।
এবছর ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন: ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া সহযোগিতা’ কে সামনে রেখে লক্ষ্যের পাণে ছুটছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লক্ষ্যের পাণে যে ছুটছে তার দৃষ্টান্ত মেলে মাদ্রিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবোমেট্রিক্সের করা ২০২২ দ্বিতীয় সংস্করণে (জুলাই)। ২০২২ সালের ওয়েবোমেট্রিক্সর প্রথম সংস্করণে দেশ সেরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থাকলেও এবার প্রথম স্থানটির জায়গা দখল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অবস্থান তৃতীয়। ওয়েবমেট্রিক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে ঢাবির অবস্থান ১ হাজার ৪৬৮। দ্বিতীয় থাকা শাবিপ্রবির অবস্থান ১ হাজার ৪৭৬ এবং বুয়েটের অবস্থান ১৪৮৩। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান বিশ্বের দুই শতাধিকেরও বেশি দেশের ৩১ হাজার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং তৈরিতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ পদ্ধতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রভাব, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা, সাম্প্রদায়িক সন্নিবেশ অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ভূমিকা বিবেচনা করে ওয়েবোমেট্রিক্স। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ছাড়াও তাদের গবেষক এবং তাদের প্রবন্ধ বিবেচনায় নিয়ে এটি তৈরি করে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ৫০ শতাংশ, টপ সাইটেড গবেষকদের ১০ শতাংশ এবং টপ সাইটেড প্রবন্ধ ৪০ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে র্যাংকিং তৈরি করে এ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
নানা সময় ‘গবেষণা নেই’ এমন বিতর্কও পিছিয়ে নেই এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে এবার গবেষণার দিকেও কিছুটা মনোযোগ বাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যা এবারের বাজেটের দিকে খেয়াল করলেই বোধগম্য হয়। এ অর্থবছরে (২০২২-২৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেটের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে গবেষণা খাতেও বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে গবেষণা মঞ্জুরি হিসেবে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ ৷ গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্বিতীয় শতকের জন্য উপযুক্তভাবে গড়ে তুলার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা মোতাবেক জাতির উন্নয়নের সহায়ক, এমন ধরনের উদ্ভাবন এবং গবেষণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত হবে। যার মধ্য দিয়ে জাতীয় উন্নয়নে খ্যাতিমান এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ঐতিহাসিকভাবে যে অবদান রেখে আসছে সেই ধারাবাহকিতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং বির্তকে চুপ থাকলেও এবার হয়তো এদিকে মনোযোগ দিয়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সকলের প্রত্যাশা পূরণের পথে ছুটছে। পথ দীর্ঘ হলেও, হয়তো তা খুব সন্নিকটে বলে তাদের প্রত্যাশা।