শিক্ষক হিসেবে আত্মীয়কেই নিয়োগ দিচ্ছেন জাবি উপাচার্য

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক পদে সেই আত্মীয়কেই নিয়োগ দিতে চলেছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো: নূরুল আলম।

গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ডে প্রভাষক পদে উপাচার্যের ভাগ্নি আয়েশা সিদ্দিকা আরশিকে তিনি সুপারিশ করেছেন বলে গোপন সূত্রে জানা যায়। তাছাড়া আগামীকাল সিন্ডিকেট সভায় এই নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, গত ৫ জুলাই প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য ভাইভা বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ বোর্ডে ৪ জন সদস্যের মধ্যে ২ জন এক্সটার্নালের একজন অনুপস্থিত ছিলেন এবং বাকি ১ জন অনলাইনে যুক্ত হয়ে ভাইভা নেন। এতে করে ‘অসম্পূর্ণ’ বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক শিক্ষক।

তাদের দাবি, উপাচার্যের মর্জি মাফিক পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে এমন অসম্পূর্ণ বোর্ড সাজানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, উপাচার্য স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজের আত্মীয়কে নিয়োগ দেয়ার জন্য এমন অসম্পূর্ণ বোর্ড গঠন করেছেন৷ বোর্ডে দুইজন এক্সপার্টের মধ্যে একজন অনুপস্থিত ছিলেন এবং বাকিজন অনলাইনে যুক্ত হোন। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের মতো একটা নিয়োগে অনলাইনে ভাইভা নিয়ে যোগ্যপ্রার্থী বাছাই করা খুবই দুরূহ। দেশে এমন কোন জরুরি অবস্থা নেই যে অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। একমাত্র উপাচার্যের ইচ্ছে বাস্তবায়ন করার জন্য এরকম প্রহসনমূলক বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, ৫ জুলাইয়ের নিয়োগ বোর্ডে এক্সপার্ট হিসেবে অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও নিজের ব্যক্তিগত ব্যস্ততার জন্য উপস্থিত ছিলেন না আরেক সদস্য বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।

অনলাইনে নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থাকার বিষয়ে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলে তিনি তা দেখেও (সিন করে) কোন উত্তর পাঠাননি।

নিজ আত্মীয়ের নিয়োগ বোর্ডে বোর্ড প্রধান হিসেবে উপাচার্যের উপস্থিত থাকাকে বেআইনি উল্লেখ করে জীববিজ্ঞান অনুষদের এক অধ্যাপক বলেন, যে কোন প্রকার নিয়োগে যদি নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের কোন আত্মীয় প্রার্থী হিসেবে থাকলে সেই সদস্য নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এখানে উপাচার্য সেই বিধি লঙ্ঘন করেছেন৷ নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ দিতেই তিনি বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন।

এবিষয়ে জানতে চেয়ে উপাচার্যের দপ্তরে গেলে তাঁকে ‘বিশেষ সভায়’ ব্যস্ত পাওয়া যায়। তবে এসম্পর্কে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এসময় হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ক্ষুদেবার্তা দেখলেও (সিন) তিনি এর কোন উত্তর দেননি৷

এর আগে, গত ২২ জুন ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ডিন অফিসে এক আলাপচারিতায় বিভাগের তৎকালীন সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন বিভাগে নতুন নিয়োগ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা আরশির নাম উল্লেখ করে বলেন, এবারের নিয়োগে তাকেই নিয়োগ দিতে হবে। কারণ তিনি উপাচার্যের ভাগ্নি। এসময় ডিন অফিসে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিভাগের চেয়ারম্যানের মন্তব্যে বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতির আভাস পেয়ে ক্ষুব্ধ হোন শিক্ষকেরা। সেসময় তারা বলেন, নিয়োগ বোর্ডই সিদ্ধান্ত নিবে কে শিক্ষক হবেন। তবে তার আগেই যদি এরকম একজনকে বাছাই করে ফেলা হয়, তাহলে নিয়োগটি স্বচ্ছ থাকে না। তারা আরো বলেন, এখানে রেজাল্ট ভালো, ভাইবা বোর্ড এ যে ভালো করবেন তিনিই নিয়োগ পাবেন এই ক্রাইটেরিয়াতেই নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু স্বজনপ্রীতি করে একজনকে এগিয়ে দেয়া হবে আবার অন্যজনকে পেছানো হবে, এভাবে তো হতে পারে না।

গত ৬ জুলাই সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ শওকত হোসেনের শেষ কার্যদিবস ছিল। তার মাত্র একদিন আগে নিয়োগ বোর্ড বসানোকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন বিভাগের একাধিক শিক্ষক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আয়েশা সিদ্দিকা আরশি জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো: নূরুল আলমের ভাগ্নি। তিনি জাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মেহের নিগার কবিতার ভাতিজি। মেহের নিগার উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের নিকটাত্মীয় এবং সম্পর্কে বোন। তিনি আয়েশা সিদ্দিকা আরশির আপন চাচী। অধ্যাপক মেহের নিগার ছাত্রাবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার স্বামী মনোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন এবং শাখা ছাত্রদলের সংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আরশির পিতা প্রয়াত আরজু মিয়া মিরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।