জাবি শিক্ষকের অসংলগ্ন আচরণ, দুই অধ্যাপকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মাতাল অবস্থায় অসংলগ্ন আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গণিত বিভাগের শিক্ষক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাব্বির আলমের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় গত রোববার (২১ অক্টোবর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের (অরুণাপল্লী) সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

বিজ্ঞাপন

ড. কবিরুল বাশার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় আমাদের বাসার ফ্ল্যাট মালিক প্রফেসর ড. সাব্বির আলম মাতাল অবস্থায় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অকথ্য ভাষায় আমাকে এবং আমার মৃত বাবাকে বকাবকি করেন। বাড়ির মেইন গেট বন্ধ থাকায় তিনি অসদাচরণ করেন। গার্ডরা এ সময় আতঙ্কিত হয়ে সকলে একসঙ্গে বাঁশি বাজানো শুরু করেন। বাড়ির সকল ফ্ল্যাট-মালিক ও ভাড়াটিয়াদেরকে মেইনগেট এবং পকেট গেটের চাবি সরবরাহ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাত ১১টার পরে কেউ বাসায় ফিরলে নিজ দায়িত্বে গেট খুলে প্রবেশ করতে হবে। আমাদের রাস্তায় দায়িত্বরত গার্ডকে জিজ্ঞেস করলে তার সত্যতা মিলবে।

অভিযোগপত্রে অধ্যাপক বাশার আরও উল্লেখ করেন, আমরা বাসার মেইনটেনেন্স খরচ, জেনারেটর, লিফটের খরচ, সিড়ি মোছার খরচ, কমন সকল বিদ্যুৎ বিল এবং কেয়ারটেকারের বেতন ও অরুণাপল্লীর উন্নয়ন ফি দিয়ে আসছিলাম। প্রায় এক বছর ধরে বাড়ির অন্যরা কমন চার্জ প্রদান না করায় আমি আমাদের বাসায় কেয়ারটেকারকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি। আগে অধ্যাপক সাব্বির রাতে বিভিন্ন সময়ে বাসায় ফিরতেন এবং কেয়ারটেকার খুলে দিতেন। কিন্তু সেদিন তিনি রাগান্বিত হয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে বকাবকি করে আমাকে গেট খুলে দিতে বলেন। ইতিপূর্বে আমি রাতে একদিন হাঁটার সময় পিছন থেকে ধর ধর বলে চিৎকার করেছেন। এমতাবস্থায় আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার ধারণা যেকোন সময় আমি বা আমার পরিবারের কেউ তার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারি।

বিজ্ঞাপন

একই ঘটনায় ড. সাব্বিরের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন অরুণাপল্লীর ১২ নম্বর রোডের ২৪৯ নম্বর রোডের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার। শনিবার সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে প্রফেসর ড. সাব্বির আলম আমাকে ফোন করে ঘুম ভাঙিয়ে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেছেন এবং তার বাড়ির গেট খুলে দিতে বলেন। আমি একজন বয়স্ক, অসুস্থ মানুষ। গভীর ঘুমের মধ্যে তার এহেন আচরণ আমাকে মর্মাহত এবং বিষন্ন করেছে। কোনভাবেই আমি এই আচরণ ভুলতে পারছি না।

এ বিষয়ে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ড. সাব্বির এবং আমি ১০ নম্বর রোডের ২৩৭ নম্বর বাড়িতে একই বাড়িতে থাকি। ড. সাব্বির চারতলায় থাকেন, আমি তিনতলায় থাকি। বিভিন্ন সময়ে তার অসংলগ্ন আচরণে অতিষ্ট হয়ে শেষ পযার্য়ে নিরূপায় হয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আমার মৃত বাবাকে নিয়ে অকথ্য গালিগালাজ করেছেন। এটা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে। আমার বড় ভাই ৬৭ বছর বয়স। এই অসুস্থ মানুষটাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তাই আমি অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।

তবে গতকাল সোমবার (২২ অক্টোবর) ড. কবিরুল বাশারের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন ড. সাব্বির। লিখিত অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ফ্ল্যাট ক্রয়ের পর থেকেই মালিক হিসেবে আমার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আসছেন তারা। বিল্ডিংয়ের কমন বিষয়গুলোতে কখনই আমার মতামত নেওয়া হয় না। বিভিন্ন সময় আমার নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং মনগড়া অভিযোগ দেয়, যা সম্পূর্ণ ব্যক্তি আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। গত ১৮ তারিখ কাউকে কিছু না জানিয়ে বিল্ডিংয়ের সকল দরজা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। যা আমাকে ভবনে বসবাস করতে না দেওয়ার জন্য তাদের পূর্বপরিকল্পনার অংশ। ভবনের একটি পরিচালনা কমিটি থাকা সত্ত্বেও কবিরুল বাশার ও তার স্ত্রী ভবনের সকল ক্ষমতা নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রাখে। বিভিন্ন সময় লিফট, পানির মটর, জেনারেটর এবং কমনরুমের চাবি নিজেদের কাছে রেখে আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করে। উপরন্তু আমাকে মাতাল ও সন্ত্রাসী বলে সামাজিক ও মানসিকভাবে নিপীড়ন করে আসছে।

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, অভিযোগটি বানোয়াট। আমি মাতাল ছিলাম এবং তাকে ধর ধর বলে চিৎকার দিয়েছি-এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। সেদিন আমাদের না জানিয়ে তার স্ত্রী বিল্ডিংয়ের মেইনগেইটের ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে আমাদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ সময় আমি বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে ডাকি। তার ভাইকে কল দিয়ে তার বাসার কেয়ারটেকারকে পাঠাতে বলি তালা খোলার জন্য। তখন আবুল বাশার বলেন যে তার (কবিরুল বাশারের) স্ত্রী তালা দিয়েছেন। তার বাবা-মাকে নিয়ে গালি দেওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।