ধর্ষণের প্রতিবাদে পঞ্চম দিনেও আন্দোলনে সরব জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি ও নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশন (ঢাকা জেলা)।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনের সড়কে এ ৩ দফা দাবিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ও জঘন্য অপরাধে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। ক্যাম্পাসের শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
মানববন্ধনে সংগঠনটি থেকে উথাপিত ৩ দফা দাবিগুলো হলো- ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে দোষীদের ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, মেয়াদোত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে ও গণরুম- গেস্টরুমের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটাতে হবে, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সকল নিপীড়নের ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।
মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধর্ষকের কোন দল নেই, কোন সমাজ নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষকের কোনো ঠাঁই নাই। ধর্ষক আর ছাত্রছাত্রী একসাথে বসবাস করতে পারে না। যাদের শাস্তি এখনো হয়নি তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রশাসনকে জোর দাবি জানাই।
সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব শাহাবদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে ৩১৭ নং কক্ষে টর্চার সেলে ব্যক্তিকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে এর জন্য আমি ধিক্কার জানাই। পাশাপাশি ও বলতে চাই এই ধরনের ঘটনা যেন বিশ্ববিদ্যালয় না ঘটে এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোর দাবি জানাই।
মানববন্ধন শেষে সকাল ১১ টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলমের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন সংগঠনের সভাপতি শাহাবদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। নেতৃবৃন্দের হাত থেকে উপাচার্য এসময় স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ও অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।
এদিকে 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ' এর ব্যানারে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ৪ দফা দাবিতে নিপীড়ন বিরোধী গনসংযোগ ও সমাবেশ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ৪ দফা দাবিগুলো হলো-ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে, নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ ক্যাম্পাসে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের অপরাধ তদন্তপূর্বক তাদেরকে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ধর্ষণের প্রতিবাদে মিছিলের ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মশাল মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে টারজান, প্রীতিলতা হল, চৌরঙ্গী হয়ে ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বরে এসে শেষ হবে।
জাবিতে ধর্ষণের ঘটনায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি:
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক জামিনুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং একই বিভাগের উপপরিচালক মৌলি আজাদকে সদস্য করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান।
এ ব্যাপারে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনা কেন ঘটল এবং এর পেছনে কাদের দায় রয়েছে, তদন্ত কমিটি তা খতিয়ে দেখবে।
তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্পর্শকাতর জায়গা, সেখানে এমন কোনো কিছু ঘটেছে কি না বা কীভাবে ঘটেছে, সেটার একটা ফাইন্ডিংসের জন্য কমিটি করা হয়েছে। আগামীকালই এই কমিটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। আর অতি দ্রুত তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে