মেয়ে আমার বিচারক হতে চেয়েছিল কিন্তু ওরা তাকে বাঁচতে দিলো না!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

‘মেয়ে আমার বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা তাকে বাঁচতে দিলো না’ বলে গগনবিদারী চিৎকার করে কাঁদছিলেন শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার (২৪) মা তাহমিনা শবনম।

তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে স্বামী ও মেয়ে আমার কাছ থেকে চলে গেল। মেয়ে আমার বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা তাকে বাঁচতে দিলো না। মেয়ে আমার সাহসী ছিল। বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, গত রোজায় সরকারি কলেজের অধ্যাপক স্বামীকে হারালাম। এবার মেয়েকে।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফেসবুকে এক পোস্ট করে কুমিল্লার নিজের বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। এর পর বুকফাটা আর্তনাদ করতে থাকেন তার মা তাহমিনা শবনম।

বিজ্ঞাপন

কাঁদতে কাঁদতে অবন্তিকার মা বলেন, এক বছর আগে থেকে অবন্তিকার এক সহপাঠী তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতো। এঘটনার পর অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে নালিশও করেছিল।

কিন্তু সহকারী প্রক্টর ঘটনার বিচার তো করেননি বরং অবন্তিকাকে ডেকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন। তিনি ওই ছেলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। এরপরই ওই ছেলে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়ে। আপত্তিকর মন্তব্য করতো, হুমকি দিতো। এ ঘটনার বিচার না পেয়ে আমার মেয়ে অবন্তিকা মনের ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে।

তাহমিনা শবনম বলেন, আত্মহত্যা করার কয়েক মিনিট আগে রাত সাড়ে নয়টার দিকে অবন্তিকা আমাকে এক গ্লাস পানি দিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরে ওর রুমের ফ্যান ঘোরার শব্দ না পেয়ে ওকে ডাকাডাকি করতে থাকি। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।

পরে আমার ছেলে নিচে গিয়ে বাড়ির দারোয়ানকে দিয়ে মই আনিয়ে পূব পাশের জানালা খুলে দেখা যায়, অবন্তিকা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে!

এরপর পাশের ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দা পুলিশে ফোন করেন। পুলিশ এলে তাদের নিয়ে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

তিনি আরো বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই অবন্তিকাকে খুব বিষণ্ণ দেখেছি। তার কাছ জানতে চাইলে বললো, তেমন কিছু না, এমনি। ও যে আত্মহত্যা করবে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে নয়টার দিকে কুমিল্লা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবন্তিকা তার শেয়ার করা পোস্টে বলেন, আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করে ও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানান ভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি, এখানে কোনো জাস্টিস পাবো না।

কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতাম ও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতিয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করছে, বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্ট দের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায়, সেটা কুমিল্লার কারো সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে গালি দিয়ে বলে 'তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেন? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি, তোরে এখন কে বাঁচাবে?'

আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না।

আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম।

আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ, সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না, কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না, বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।