আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের সার্বিক অবস্থান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন
ছাত্ররাজনীতি বিরোধী আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনকারীদের নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার এবং মিডিয়াতে কিছু বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার হচ্ছে দাবি করে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা-ক্লাস, শিবির-হিজবুত তাওহিদসহ সার্বিক বিষয়ে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় বুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন তারা।
এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা জানান, ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর পক্ষে আন্দোলনরত সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীরা আজ নিরাপত্তাজনিত সঙ্কার কারণে কেউ কোনরুপ সমাগম করে নি।
এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তারা জানান, ক্যাম্পাসের আশপাশের সকল এলাকায় ক্রমাগত মাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি ধামকি প্রদান করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদেরকে হেয় করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বুয়েট ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাইরেও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য আনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এ সকল কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আজ অবস্থান না দেওয়া মানে এই নয় যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর দাবি থেকে সরে এসেছে, এ দাবি বুয়েটের সফল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীর।
পরীক্ষার বিষয়ে তারা জানান, ৩১ মার্চ বুয়েট এর ২০ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল ছিল, উক্ত পরীক্ষায় ক্যাম্পাসে কোনোরূপ অবস্থান আন্দোলন ছাড়াই কোনো বাধা ছাড়াই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ১ জন বাদে সকল শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত ছিল। ১২১৫ জন ২০ ব্যাচ এর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২১৪ জনই পরীক্ষার অংশ নেয় নি। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
তারা আরো জানান, ৩০ মার্চ বুয়েট ২২ ব্যাচ এর প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাতেও কোনো শিক্ষার্থীই অংশগ্রহণ করেনি, শতভাগই অনুপস্থিত ছিল।
অবস্থান পরিষ্কার করে তারা জানান, সম্প্রতি মিডিয়ায় বুয়েটের আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আমরা আবারও সাফ জানিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের অবস্থান কোন একক ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং বুয়েট ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের সকল ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারা বলেন, ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে দেশবাসীর সামনে একথা সৎ সাহসের সহিত সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের এবং স্বাধীনতার চেতনায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার এবং প্রচেষ্টা তার সাথে বুয়েটের সকল শিক্ষার্থীরাই তাদের একাত্মতা পোষণ করে এবং নিজেদের সুযোগ্য প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে তোলে তার জন্য অবদান রাখতে উদ্যমী। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না চাওয়া মানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মতাদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়। আমরা শুধু চাই না. ক্ষমতার লোভ এবং অপচর্চা আবারো এসে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে না ফেলুক। আমরা সকল শিক্ষার্থীই গর্বের সহিত আমাদের দেশপ্রেম, স্বাধীনতার চেতনার চর্চা আমাদের অন্তরে লালন করি।
হিজবুত তাহরীর প্রসঙ্গে তারা জানান, এটি কোনো রাজনৈতিক দল না বরং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। এদের কর্মকান্ড আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের (সিসি ফুটেজ অনুযায়ী) লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না। আমাদের ইন্সটিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডাব্লিউ স্যারকে ভার্চুয়ালি এই মর্মে ইনফর্ম করা হয়, আমাদের আন্দোলনরত এ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই। এ ব্যাপারে ডিএসডাব্লিউ স্যারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়। পরবর্তীতে ভিসি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, এ ব্যাপারে বুয়েট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও বিগত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এদের বিরুদ্ধে পুলিশে অবহিত করার রেকর্ড আছে। আমরা হিজবুত তাহরীরের নিঃসন্দেহে সম্পূর্ণ বিপক্ষে এবং ও জাতীয় অপশক্তির উত্থান যেন বুয়েটে না হয় এজন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শিবির সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে তারা জানান, যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে অভিযোগ আমার পাথে সাথে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবার লিখিত ভাবে আহবান জানাই, এবং এটি আমাদের পূর্বের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল। সে সময়ে ইন্টারভাল ১৮ এর ফেইসবুক মুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেয়া হয় যা বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেইজ থেকেও প্রচার করা হয়। মাননীয় আদালতে বর্তমানে এই মামলাটি বিচারাধীন আছে এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি এরকম কোনো শিদ্ধার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কার এর দাবি জানাবো। এই প্রসংগে অতি সম্প্রতি আমরা দেখতে পাই মিডিয়ায় ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন উনাদের বুয়েটে কার্যক্রম আছে। কোনরূপ প্রমাণ বাতীত এই ধরনের বক্তব্যের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং একই সাথে যদি কারো শিবিরের কোন কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার যথাযথ প্রমান পাওয়া যায়- আমরা সেক্ষেত্রে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।