যত্রতত্র ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) যত্রতত্র ভবন নির্মাণ বন্ধ করে পরিকল্পিত ভবন নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৯ মে) দুপুর ১টায় শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন পালন করা হয়।
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া সোহাগি সঞ্চালনায় মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। এসময় বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবীব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাতের আধারে অসংখ্য গাছ কেটে ভবন তৈরির পাঁয়তারা করছে। চারুকলা ভবনের বর্ধিত অংশে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অতিথি পাখির ফ্লাইং জোন নষ্ট করা হবে। নতুন রেজিস্ট্রার ভবনকে পূর্ণাঙ্গ না করে তার পিছনে কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের পরিকল্পনা করছে।’
বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মেহরাব সিফাত বলেন, ‘আমরা প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশের জন্য কথা বলছি। যারাই বিভিন্ন সময় পরিবেশের জন্য দাঁড়িয়েছি, তাদের উন্নয়ন বিরোধী তকমা দেওয়া হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই প্রকৃতিকে সংরক্ষণের জন্য কথা বলেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা গুরুত্ব দেয়নি। আমরা চাই উন্নয়ন হোক মাস্টারপ্ল্যানের ভিত্তিতে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে ভবন নির্মাণে আমরা বাঁধা দিলে প্রশাসন বলে টাকা ফেরত চলে যাবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাকি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, তা আমার বোধগম্য নয়। ভারতীয় হাইকমিশনের টাকা পেয়ে অতিথির ফ্লাইং জোনে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এভাবে চললে অন্যান্য দেশও বিভিন্ন বিভাগকে টাকা দিলে তারা স্ব স্ব ভবন নির্মাণ করতে চাইবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে পড়বে।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যত্রতত্র ভবন নির্মাণের ফলে একসময় এ ক্যাম্পাস ইট-বালুর জঞ্জালে পরিণত হবে। প্রশাসন প্রাণ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে ভবন করতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের ফলাফল আজকে আমাদের পিছনে থাকা কলা ও মানবিকী অনুষদের এই ভবন। এই ভবনটি এখনও পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। অথচ এই অনুষদের একটি সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের প্রাথমিক সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।’
সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক মো. ইমন বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ নিরসন হওয়া আমাদের সকলের দাবি। কিন্তু প্রাণ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে আমরা শ্রেণিকক্ষ চাই না। অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের ফলে রাষ্ট্রের টাকা নষ্ট হচ্ছে। আমাদের মূল দাবি- একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে সকল কাজ করা হোক। যে ভবনগুলোর ফলে গাছ কাটা পড়বে, জলাশয় ভরাট হবে, অতিথি পাখির ক্ষতি হবে সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হোক।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন, গাছপালা সমৃদ্ধ জায়গায় জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পিছনে কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন। এছাড়া চারুকলা বিভাগ অনুষদ ভবন নির্মাণের জন্য একটি লেকের পাড়ের জায়গায় কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করছে। যেখানে ভবন হলে ক্ষতির সম্মুখীন হবে পরিযায়ী পাখির বিচরণ। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে।