রাবির পরিত্যক্ত বাস ঘিরে সক্রিয় সিন্ডিকেট: ‘সমালোচনার ভয়ে’ বিলম্বিত নিলাম!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পরিবহন চত্বরে কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ৯টি বাস। অযত্নে পড়ে থাকায় বাসগুলোর চাকা দেবে গেছে মাটির সঙ্গে আর মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে কিছু বাসের।
বাসগুলোকে সচল করা কিংবা নিলামে তুলতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ। প্রশ্ন এসে যায়, তবে কি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিকে অবহেলায় নষ্ট করা হচ্ছে!
পরিবহন দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বাসের নিলামের সময় বাজার মূল্যের থেকে কম দামে কিনতে একটা সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে কারণে, সমালোচনার ভয়ে প্রশাসকেরা সাধারণত চান না, নিজের সময়ে নিলাম হোক।
এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক ও ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকছিদুল হক।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়েল শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পেছনে তিনটা এবং পরিবহন দপ্তর এলাকায় পড়ে রয়েছে আরো ছয়টা অচল বাস।
বাসগুলোর কোনোটির বিভিন্ন অংশের গ্লাস ভাঙা। কোনোটির চাকা মাটির নিচে দেবে গেছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় বাসগুলোর ভেতরে-বাইরে জমেছে ধুলো-ময়লার স্তূপ। ধরেছে মরিচা! খসে পড়েছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ! ভেঙে গেছে অনেক সিটও।
পরিবহন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ, ২০১৮ সালে নিলামের মাধ্যমে ৫টি অচল বাস বিক্রি করা হয়। তবে, ওই বাসগুলোর নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। তখন ৫টি অচল বাস বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছিল ৫ লাখ টাকার বেশি। এর আগের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১-১২ সালের দিকে।
২০১৬ সালের পর থেকে অচল হওয়া গাড়িগুলোই বর্তমানে পড়ে আছে। চেসিস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মূলত গাড়িগুলোকে অপসারণযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, পুরনো বাসগুলোর যন্ত্রাংশ বাজারে না পাওয়া ও জ্বালানি খরচ বেশি, মেরামতের খরচ বেড়ে যাওয়া, ফিটনেসে ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে গাড়িগুলোকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অনেকদিন ধরে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক ও ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকছিদুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাধারণত বেশিসংখ্যক অচল গাড়ি যখন একসঙ্গে জমা হয়, তখন নিলাম ডাকা হয়।
এটা সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর পর পরই হয়। কারণ, ২-১টা গাড়ির জন্য নিলাম প্রক্রিয়ায় গেলে বেনিফিট কস্টের (সুবিধার্থে ব্যয়) দিক থেকে সুবিধা হয় না। আর সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করার কিছু প্রক্রিয়া আছে। এই প্রক্রিয়া আমরা প্রায় দুই বছর আগেই শুরু করেছি। তারপরও করোনা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণেই আমরা এখনো প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি শেষ করতে পারিনি। শিগগিরই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রেখে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট করার দায়টা কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব গাড়ি তো ১০/১৫ বছর ধরে পড়ে থাকে না। দুই-চার মাস আগে অচল হয়েছে, এমন গাড়িও আছে। এছাড়া, একটা গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া এবং তার খরচ আর ১০টা গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া ও তার খরচ প্রায় এক।
এজন্য দুই-একটা গাড়ির জন্য নিলাম ডেকে খুব একটা সুবিধা হয় না আবার গাড়ির সংখ্যাটা বেশি নাহলে ভালো পার্টিও পাওয়া যায় না।
দু’বছর আগের নিলাম প্রক্রিয়া এখনো শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতদিন সময় লাগে না, এটা ঠিক! কিন্তু এটা তো সরকারি সম্পত্তি। এখানে কোনো খুঁত রেখে কাজ করা যায় না। দ্রুত নিলাম প্রক্রিয়া শেষ করলে, পরে দেখা যায় যে, অনেকে বলবেন, ১০ লাখ টাকার জিনিস ৪ লাখে বিক্রি করা হয়েছে। এজন্য একটু সময় নিয়েই প্রক্রিয়াটা শেষ করা হয়েছে। এখন বিজ্ঞাপন পর্যায়ে রয়েছে।
এবিষয়ে পরিবহন দপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নাসিমা আখতার বলেন, ৫ মাস হলো আমি ওখানকার সভাপতি নিযুক্ত হয়েছি। এতদিনেও কেন অচল হওয়া বাসগুলো বিক্রি করা হয়নি, সেটা আমি জানি না। কয়টা বাস অচল হয়ে আছে, সেটাও জানি না। এই সময়ের মধ্যে এরকম (অচল বাস নিলাম) কোনো বিষয় এজেন্ডাভুক্ত হয়নি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো, বিষয়টা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমি নিজেও অনেক আগে পরিবহন দপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম। তখন দেখেছি, বাসের নিলামের সময় সিন্ডিকেট করে এমন দরপত্র বলা হয়, যেটা শুনে সবাই হাসবে বা অন্যরকম কিছু ভাববে। তাই, বিশ্বাসযোগ্য দাম না পাওয়া গেলে প্রশাসকদের সমালোচিত হতে হয়, এটা সত্যি!
তিনি বলেন, তাই বলে, এখন বাসগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিতে হবে না, এমন নয়। এগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি গত দেড় বছর ধরে বারবার বলে এসেচি। কারণ, এগুলো ফেলে রেখে তো কোনো লাভ নেই! কিছুদিন পরে দেখা যাবে যে, বাসগুলোর জিনিসপত্র আর কিছুই নেই! আবার জং ধরে নষ্ট হয়ে গেলে দাম আরো কম পাওয়া যাবে! বিক্রি বিলম্ব হওয়ার কারণ বিষয়ে দপ্তরটির উপদেষ্টা কমিটি ভালো বলতে পারবে।