জাবির উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের এক নারী কর্মকর্তার একাধিক দিন অফিস চলাকালীন ঘুমিয়ে থাকার কয়েকটি স্থিরচিত্র ভাইরাল হয়েছে৷ সে কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কানিজ সায়েমা৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে মন্তব্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷
গত রবিবার (৩ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘JU Insiders’ নামক একটি পেজ থেকে এই কর্মকর্তার নিজ অফিস কক্ষে ঘুমিয়ে থাকার ৪টি ছবি ভাইরাল হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কানিজ সায়েমা অফিস চলাকালীন অফিস কক্ষের নিজ আসনে বসে ঘুমিয়ে আছেন। এছাড়া পোস্টকারী ভুক্তভোগী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) শিক্ষার্থী ৪ দিন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে গিয়ে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া সেই পোস্টে ভুক্তভোগীর বরাত দিয়ে বলা হয়, জনাব কানিজ সায়েমা দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সারারাত কি করেন, মাবুদ জানে। টানা চারদিন গেলাম ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে। চার দিনই ঘুমে পেলাম। তাও সকাল ৯ টায় এক দিন, সাড়ে ১০টায় এক দিন, ১১টায় এক দিন এবং ১২টায় এক দিন।'
ভুক্তভোগীর বরাতে দেওয়া সেই ফেসবুক পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, আগের ডেপুটি কন্ট্রোলার মাসুদ ভাই যাওয়ার পর উনার কাছে যখনই গিয়েছি, মনে হয়েছে এনার মত দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তা আর হতে পারে না। ইভেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ম্যাক্সিমাম কর্মকর্তাই এই টাইপের। কাজ রেখে বিরতির আগেই চা-বিড়ি খেতে চলে যান নিচে। কি এক ভয়াবহ অবস্থা। ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থীর রেজাল্ট পাবলিশ করতে এরা ছয় মাস লাগায়। উদ্ভট উটের পিঠে চলছে জাহাঙ্গীরনগর৷
এদিকে ঐ কর্মকর্তার ঘুমন্ত ছবি ভাইরাল হওয়ার পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কাজে অবহেলার বেশ কয়েকটি অভিযোগ লক্ষ্য করা যায় শিক্ষার্থীদের মন্তব্যে। শিক্ষার্থীরা জানায়, কর্মকর্তাদের অবহেলার দরুণ ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসময়, মার্কশিট ও সার্টিফিকেট উত্তোলনে ভোগান্তি-নির্ধারিত সময়ে প্রদান না করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসদাচরণ, সনদের বানানে ভুল থেকে শুরু করে নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানালেও সমস্যা সমাধানে এখন পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে কোনো সঠিক ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, প্রায় বছর খানেক আগে মূল সনদপত্র সত্যায়িত করতে গিয়ে কানিজ সায়েমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে সনদে সিল দিতে গিয়ে তিনি উল্টো সিল মেরে ফেলেন। এর সমাধান কি তাও তিনি জানতেন না। পরে উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার কাছে পাঠান৷
এদিকে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শায়লা আজাদ তার মন্তব্যে বলেন, ওনার কারণে আমার মাস্টার্সের রেজাল্ট উল্টা পাল্টা হইছে।তাঁর কাছে ২/৩ বার এপ্লিকেশন দেওয়ার পরও হারায় ফেলে।কি পরিমাণ হয়রানি যে উনি আমাকে করছেন আমার এপ্লিকেশন আর উপর মহলে যায় নাই।ওনার কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। এনারা কিভাবে পারে এরকম করতে!
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন ওয়াজিদ তার মন্তব্যে বলেন, বড়ই আফসোসের বিষয় উনার এই ঘুমের কারণে ভোগান্তির শিকার আমিও হয়েছি এই তো কিছুদিন আগে। শুধু উনি নয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মোটামুটি সবাই একই রকম। আমি একই রকম কেন বললাম? আমার অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের জন্য আমি ৬০০ টাকা ব্যাংক জমা দিয়ে আবেদন করসি জরুরি পাওয়ার আশায়। সেই ট্রান্সক্রিপ্ট আমি পেয়েছি ১০ কর্মদিবসের দিন। ৭ কর্ম দিবসে গিয়ে পাই নাই, ধন্না দিয়েছি। ৯ কর্ম দিবসে পাই নাই, ধর্না দিয়েছি। যেই ভাই এইসব সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট প্রিন্ট করে দেন (উনার নামটা মনে নাই) উনাকে দুই দিনই জিজ্ঞাসা করেছি আমার কাজটা কেন হয় নাই এবং ৬০০ টাকা জমা দিয়ে জরুরি আবেদন করেও যদি অফিসে ঘুরতে হয় আর ধর্না দিতে হয় তাহলে জরুরি আবেদনের নিয়ম কেন রাখলেন? তিনি আমাকে বললেন কাজের অনেক চাপ থাকে, অনেক সময় মনে থাকে না। এই হচ্ছে তাদের মন্থর গতি, সার্ভিস এবং কাজ৷
এছাড়া গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিলা সুলতানা তার মন্তব্যে বলেন, একদা অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট তুলতে গিয়েছিলাম, ইনি কেমন বিরক্তি দেখালেন। পাত্তাই দিলেন না। ইমারজেন্সিতে সব তুলবো জন্য টাকা বেশি দিলাম। শেষে দেখলাম আমাকে পর পর দুই সপ্তাহ ঘুরালেন। তাহলে আমার লাভটা কি ছিলো টাকা বেশি দেবার!
দায়িত্বে অবহেলাসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কানিজ সায়েমার সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এছাড়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে অবহেলায় কি ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অব্যবস্থাপনা দূরীকরণের বিষয়ে জানতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক সালাহউদ্দিন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা মোহাম্মদ ফিরোজের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায় নি৷
পরবর্তীতে একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলমের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনিও সাড়া দেননি৷