শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বড় সেশনজটের শঙ্কায় কুবি শিক্ষার্থীরা
আগামী ১ জুলাই হতে সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বড় সেশনজটের শঙ্কায় পড়তে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যেই উপাচার্যের-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় ২ মাস পর গত ২৩ জুন থেকে আবার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ বন্ধের ফলে এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর থেকেই নানাভাবে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মাঝেই ১৩ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ এবং পরবর্তীতে ২১ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল মোট চার ধাপে শ্রেণী কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। পরবর্তীতে ২৮ এপ্রিলের উপাচার্য, শিক্ষক সমিতি ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনাকে ধরে ২৯ এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল প্রকার প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজ বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতি। ৩০ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম জরুরী সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ বন্ধ কাটিয়ে ২৩ জুন থেকে স্বাভাবিকভাবে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
এদিকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিতে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
চলমান এ সমস্যার ফলে এবার বড় আকারে সেশনজট, চাকরির বাজারে পিছিয়ে পরার ভয় জেগেছে কুবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা বলছেন, করোনার ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েছেন। এখন আবার এ বন্ধ তাদেরকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী কাজী ফাহমিদা কানন বলেন, 'শিক্ষক সমিতি ও ভিসি দ্বন্দের ফলে গত ২ মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। অবশেষে ২৩ জুন স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতির ফলে এই কয়দিনও ক্লাস কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার আগেই আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল হওয়ার কথা ছিলো, যা এখনো হয়নি। এখন আবার ১ জুলাই থেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে আমরা যে এতোটা পিছিয়ে গিয়েছি আমাদের এই ক্ষতির দায়ভার নিবে কে? আমাদের কী হবে? এইভাবে পিছিয়ে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আমরা। আমাদের পড়াশোনা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনার সময় একবার পিছিয়ে যাওয়া এখন আমরা আবার পিছিয়ে যাচ্ছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী ফারুক আল নাহিয়ান বলেন, 'একজন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে আসন্ন শিক্ষক ফেডারেশন এর কর্মসূচি নিয়ে আমি আতঙ্কিত। কারণ গত প্রায় দুই মাস যাবত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে আমরা তীব্র সেশনজটের আশঙ্কায় ভুগছি। আসন্ন কর্মসূচি আমাদের মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে পতিত হবে বলে মনে হচ্ছে।'
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার নিজস্ব কিছু সমস্যার কারণে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিলো এতোদিন। কিন্তু শিক্ষকরা যে সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত এই আন্দোলনের ডাক তারই উদাহরণ। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাথে আমাদেরও কর্মসূচি চালাতে হবে কারণ আমরাও এর অংশ।'
সেশনজট নিরসনে অনলাইনে বা অন্য কোনো মাধ্যমে ক্লাসের ব্যবস্থা করবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আসলে আমরা শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবো না। যেহেতু এখন পর্যন্ত সকল কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা আছে সেহেতু বন্ধই রাখতে হবে। তবে পরবর্তীতে আমরা যেভাবেই হোক শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে দিবো।'
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, 'এটি আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। আমরা এতে অনড় থাকবো। ৩০ তারিখের মাঝে কোনো সমাধান সরকার আমাদের না দিলে আমরা ১ তারিখ থেকে সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিবো। আমি দাবি না পর্যন্ত আমরা একাডেমিক-প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবো।'
শিক্ষার্থীদের সেশনজট এবং অনলাইনে ক্লাসের কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে কিনা এমন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'না সব বন্ধ থাকবে। তবে শিক্ষার্থীরা যেনো সেশনজটে না পরে তাই আমরা পরবর্তীতে অনলাইন, অতিরিক্ত ক্লাস সব মিলিয়ে এই বন্ধের ক্ষতিকে পুষিয়ে দিবো।