ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সেই দিনটি



বৈশাখী মুখার্জী
বৈশাখী মুখার্জী, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/ছবি: বার্তা২৪.কম

বৈশাখী মুখার্জী, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার মতে, মানুষের মৌলিক চাহিদা হওয়া উচিত সাতটি। সেই সাত নম্বর চাহিদা হলো, মন ভরে ইচ্ছামতো স্বপ্ন দেখার। জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে, সময় ও পরিস্থিতির চাপে স্বপ্নের রঙ কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। কারণ জীবন জটিলতায় পরিপূর্ণ। তবে আমিও একজন স্বপ্ন বিলাসী, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, তাই জটিলতাগুলোর মাঝেও স্বপ্ন বুনতে থামি নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন আমার জন্য রূপকথার মতো ছিল। বাস্তবে তা পূরণ হবে কখনো ভাবিনি। কোনো এক শুভক্ষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামক নন্দন কাননে বিচরণ শুরু করে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে এখন আমার বিদায়ও সন্নিকটে।

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার জীবনের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়। তাই সোনালি সময়ের শেষ দিনগুলি পার করার সময় আজ অতিশয় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি । আজও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠার দিনটি আমার কাছে স্বপ্নময়। তাই স্বর্গপতনের আগে নিজের গল্প লেখার এই অনন্য সুযোগ ধরার লোভ সামলাতে পারছি না। আবার কান টানলে মাথা আসার মতো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে বলতে হলে কলেজের শেষ দিনগুলো থেকে শুরু করতেই হবে। তাই অনিবার্যভাবে সেই প্রসঙ্গ এসেই যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম কলেজে থাকাকালীন সময়ে। এইচএসসিতে মানবিক বিষয়ে মাইগ্রেট করার পর আমারও স্বপ্নচূড়া ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এক রাশ শঙ্কা, ভয় ও আকাশ ছোঁয়ার আশা নিয়ে ভর্তিপরীক্ষা পূর্ববর্তী প্রস্তুতির সময়ের নোটখাতাগুলোতে লিখে রাখতাম ‘আমার পদচারণায় মুখরিত হোক ঢাবি ক্যাম্পাস।’

‘এত আত্মবিশ্বাস! তোর তো ঢাবি সিট নিশ্চিত’- এরকম মন্তব্য পেতাম সহপাঠীদের থেকে। অবশ্য কোচিং শিক্ষক আমাদেরকে উৎসাহিত করতে বলতেন- তোমার পদচারণায় মুখরিত হোক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। যেখানে স্বপ্নবিভোর আমি ক্যাম্পাসের স্থলে ঢাবি নামটি যোগ করেছিলাম। প্রস্তুতিকালীন সময়ে নিয়মিত দিকনির্দেশনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গল্প ও অনন্য সুন্দর ক্যাম্পাসের স্থিরচিত্র পেতাম শ্রদ্ধেয় ফারুক আহমেদ ভাইয়ের থেকে। তাই তার কাছেও আমি চিরকৃতজ্ঞ।

অতিশয় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম কিনা জানিনা, তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম আমি তুলিনি, ভর্তিও হইনি। মনে হয়েছিল, এতে আমার মনোবল ঝাঁকুনি খাবে, সঙ্গে আরো চারটে টাকাপয়সা খরচ হবে। ভর্তিপ্রস্তুতির সময়কালীন মোটা অঙ্কের খরচের কথা বোধকরি অনেকেরই জানা। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হলে গোটা একটা বছর ভবঘুরে হয়ে থাকব, এই ভয়টা একেবারে ছিল না তা অস্বীকার করা যাবে না।

এদিকে, আমার চারপাশের অনেকে; এমনকি আমার প্রিয় বন্ধুও এই ঝুঁকি নেয়নি। তাই সংশয় কিছু ছিল ভিতরে, তবে সেটাকে এতটা ঘনীভূত হতে দিইনি কখনো। স্মার্টফোনটা নিজের কাছেই রেখেছিলাম তবে তা যেন আমার স্বপ্নের পথে বাধা না হয় এজন্য তালাবন্ধ করে ট্রাঙ্কে রেখে দিতাম। হাজার হোক মোবাইল ফোন যে টাইম কিলিংয়ে ওস্তাদ এ সত্য সবার জানা।

আমি সর্বমোট তিনটি ভর্তিপরীক্ষা দিয়েছিলাম। ঢাবির ‘খ’, ‘ঘ’ ও জাবির ‘খ’। সৌভাগ্যক্রমে তিনটিতেই মেধাক্রম পাই। এর মধ্যে ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে ভর্তিপরীক্ষা ছিল আমার প্রথম কোনো ভর্তিপরীক্ষা। এ সিদ্বান্তের জন্য আজও আমি আফসোস করি। স্বভাবতই অর্থ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য জবির ফর্ম আমি তুলিনি।

ঢাবির আগে জবির পরীক্ষা ছিল। আমার যেসব বন্ধুরা জবিতে পরীক্ষা দিয়েছিল। প্রায় সবাই ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে ভালো পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষা আমার খুব বেশি ভালো হয়নি। অসুস্থতা ও সময় ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির জন্য কিছু মার্কস ছেড়ে আসি।আমার চান্স পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমাদের সময় অর্থাৎ ২০১৯-২০ সেশন থেকেই ঢাবি প্রথম লিখিত পরীক্ষাতে যায়। তাই ফলাফল প্রকাশে একমাস সময় লেগেছিল। ততদিনে জাবির ফলাফল আসে। আমি চান্স পাই।

আমার কোচিংয়ের শিক্ষক ও বন্ধুরা অভিনন্দন জানায়। খুশি ছিলাম, আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রার্থনাও করতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল প্রকাশের দিন মা’য়ের মন্দিরে গিয়ে বসেছিলাম। অবশেষে ঈশ্বরের কৃপা, বাবা-মায়ের আশীর্বাদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দোয়ায় একটা জায়গা পেয়েই যাই। মানুষ স্বপ্নকে ছুঁতে পারলে সম্ভবত তার শব্দের বেগটা হারিয়ে যায়। আমার অবস্থাও সেদিন এমনই হয়েছিল।

সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ও ওনাদের অবদানে আমার সেই সৌভাগ্য হলো নিজেকে স্বপ্নের জায়গায় দেখার। তখন থেকেই নতুন কিছু রঙিন স্বপ্ন, আবেগ, উদ্দীপনা আর রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিয়েই ২০২০ এর ১ জানুয়ারি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম পা রাখা।

ঝিনাইদহ থেকে চার জেলা পাড়ি দিয়ে আসি এই নতুন শহরে। নতুন মানুষদের ভিড়ে, জীবনের নতুন স্বপ্ন বুনতে। যখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করলাম, স্বপ্নের রং আবার তার খোলস পাল্টাল। আমার স্বপ্নের তরী নোঙর করেছে নতুন ভুবনে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই জ্ঞানের সমাহার। উন্মুক্ত ক্যাম্পাস, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই বন্ধু, আড্ডা, বড় ভাইয়া-আপুদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর বিস্তৃত পরিসরে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরা। এই অনুভূতিগুলো আসলে বিরল।

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে আমার ক্ষেত্রেও অনুভূতিগুলো একই রকমের। প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় লালবাস, বন্ধু, আড্ডা এবং নিজেকে মেলে ধরার মধ্যে আমি আমার জীবনের তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছিলাম সেদিন। সময়ের টানে আজ আমার বিদায়বেলায়ও উপস্থিত।

আমি ভালো করেই জানি এরপর যত সুবিধাজনক জায়গায়ই যাই না কেন বাংলাদেশের হৃদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত নিজের করে জীবনযাপন করতে পারব না। এক টাকার লাল চা আর তিন টাকা সিঙ্গারা খেতে খেতে বন্ধুত্বের গল্পগুলো জমে ওঠে শিক্ষার্থীদের। কারো মুখ ভার করে থাকার যেন এখানে অধিকার নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা ইঞ্চি হয়ে ওঠে ভীষণ প্রাণবন্ত, প্রতিটা মুহূর্তই জমে ওঠে জীবনের গল্পে; গল্পে গল্পে রচিত হয় যাপিত জীবনের এক অনন্য কথামালা।

এরই সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম নিয়ামক হচ্ছে আন্ডারগ্র্যাড-এর বছরগুলো। এই বছরগুলোতে ঠিক হয় একটা বাচ্চা কতোটা ‘এক্সপোজার’ পাবে, কতোটা স্কলার হয়ে নিজেকে গড়তে পারবে? ক্যারিয়ারে এগোনোর জন্য প্রাসঙ্গিক পুষ্টিগুলো তার মন ও মস্তিষ্ক পাবে কতোটা এই বছরগুলোতেই নির্ধারণ হয়! এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন কিছু বিশেষ শিক্ষকের সাহচর্য। আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি,তাদের আমি পেয়েছি।

ঠিক যেমনভাবে কথা বলার শিক্ষা, বর্ণশিক্ষা, নীতি ও আদর্শের শিক্ষা এসব আসে পরিবার থেকে। তেমনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা অর্জন করি বিবেকবোধ, বুদ্ধিমত্তা, অভিজ্ঞতা, পরিচিতি, আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার শক্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে এখন পর্যন্ত যা দিয়েছে তা যদি জীবনের পরবর্তী ধাপগুলোতে ব্যবহার করতে পারি তবেই আমি মনে করি এই ঋণ ও গুরুদক্ষিণা শোধের ইচ্ছাটা পূরণ হবে। প্রাকৃতিক নিয়মের মত স্নাতক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইলফলক সমাবর্তন সজ্জার দিকে আমার যে ওডিসি চলছে তাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও আমি চলতে দিতে বাধ্য।

এখন আমার খুব করে ইচ্ছে, বাবা-মাকে একসঙ্গে আমার সমাবর্তনে এনে নিজের অর্জনকে তাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। যেই গর্বের ও তৃপ্তির হাসি আমার ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন তাদের মুখে আমি দেখেছিলাম, সে হাসি বার বার ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ্য চাই সৃষ্টিকর্তার কাছে। আমার বাবা কখনো তার জীবনে ঢাকায় আসেননি, আমার ক্যাম্পাসও দেখেননি। এজন্য মধুরতম সেদিনটির প্রতীক্ষায় আজকের বুক ভরা দুঃখকে বেদনা-হাস্যে বরণ করছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল জাবি

বুধবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি জাবি শিক্ষার্থীদের



জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ঘোষিত কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ ৪ দফা দাবিতে 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর ব্যানারে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এরপর প্রায় ২০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে সড়কেই একটি সমাবেশে বুধবার (৩ জুলাই) টানা দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা৷ ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়৷

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে সংশপ্তক ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।

শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত ৪ দফা দাবিসমূহ হচ্ছে- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে, ১৮' এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগি সামিয়া বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকটা মানুষের সামাজিক ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাকরি প্রয়োজন। আর সেই চাকরির নিশ্চয়তা রাষ্ট্র আমাদের দেবে। তাই আজ থেকে আমি যেমন বেকারত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলব। আরেকদিকে এই বৈষম্য বিরোধী কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলব।


এসময় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান বলেন, সংবিধানে বলা আছে শুধুমাত্র অনগ্রসর, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী, কিংবা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যই কোটা থাকবে। সংবিধানে অন্য কোনো কোটার উল্লেখ নেই। বাঙালি যুদ্ধ করেছে বৈষম্য রোধের জন্য। কিন্তু আমরা স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পরও বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোট সবসময় ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে৷

আগামী ৪ জুলাই এর মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে সারাদেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সমাবেশে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও এসে দেখছি সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। এই বৈষম্যের জন্য কি আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করোছিলাম? আমাদের মুক্তিযুদ্ধোরা কি এই বৈষম্যের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন? আমরা আবারও যুদ্ধে নেমেছি এই বৈষম্য দূর করার জন্য। আগামী ৪ জুলাই যদি সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে সারাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।

সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরীদের জন্য কোটা বিবেচনা করা সরকারের সম্পূর্ণ যুক্তিহীন সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে উদ্ভিদবিজ্ঞান ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, কোটা রাখা হয় শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য, সেখানে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী কোটা যথাযথ, কিন্তু যারা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে কোটা বিবেচনা করা সম্পূর্ণ যুক্তিহীন সিদ্ধান্ত। 

আগামীকাল বুধবার দুপুর ৩ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়ে সমাপনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, আগামী ৪ জুলাই কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি আছে। তাই এই আন্দোলন বেগবান করতে বুধবার বিকেলে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পেনশন স্কিম নিয়ে আন্দোলন করছেন। তাদের আন্দোলনে আমাদের মৌন সমর্থন রয়েছে। কিন্তু তাই বলে যদি তারা লাইব্রেরি বন্ধ করে, হল বন্ধ করার পায়তারা করে তাহলে প্রশাসনকে ছাড় দেওয়া হবে না৷

;

কোটা পুনর্বহালের আন্দোলনে উত্তাল ঢাবি



ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা/ছবি: বাতা২৪.কম

শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা/ছবি: বাতা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণপদযাত্রা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রতিবেদন লেখাকালীন তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন।

মঙ্গলবার (০২ জুলাই) দুপুরে ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে এ পদযাত্রা শুরু হয়। প্রতিবেদনে লেখা অব্দি পদযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় শ্যাডো হয়ে হলপাড়া হয়ে সুর্যসেন হলের পাশ দিয়ে মুহসীন হল প্রদক্ষিণ করে এগিয়ে যায়।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইমরান হোসেন বলেন, কোটার মাধ্যমে বৈষম্য এবারই প্রথম নয়। ১৯৮৭ সালে বলা হয়েছিল, কোটা ধীরে ধীরে উঠে যাবে। কিন্তু ১৯৯৭ সালেও আমরা দেখেছি কোটায় মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জায়গায় নাতি নাতনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। কোটার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় জঘন্য বৈষম্য আমরা দেখেছি। এমনও হয়েছে বিসিএস পরীক্ষায় ২০০তম হয়েও কেউ ক্যাডার পায়নি, অন্যদিকে ৫ হাজারতম হয়ে কোটায় এডমিন ক্যাডার পেয়ে গেছে। কোটাধারী না থাকলে আসনগুলো শূন্য থেকেছে, তবুও সাধারণ শিক্ষার্থীরা পায়নি। এ ধরনের ভয়ানক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের পরিপত্রটি পুনর্বহাল করতে হবে, এটিই আমাদের এক দফা দাবি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বলেন, যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে এদেশ স্বাধীন করলো, সেই সাধীন দেশেই তাদের সন্তানদের কাছেই বৈষম্যের শিকার আমরা। এই বৈষম্য আমরা কোনোভাবেই মেনে নিবো না। ২০১৮ সালের পরিপত্রটি পুনর্বহাল করেই এই আন্দোলন থামবে।

প্রসঙ্গত, ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা না মেধা মেধা মেধা, সারা বাংলায় খবর দে’ কোটা প্রথার কবর দে’ সহ নানা স্লোগানে মুখরিত হুচ্ছে শাহবাগ মোড় এলাকা।

উল্লেখ্য, পদযাত্রাটি নীলক্ষেত, নিউমার্কেট হয়ে সায়েন্সল্যাব দিয়ে ঘুরে শাহবাগ মোড়ে আসার পর শিক্ষার্থীরা শাহবাগ রাস্তা আটকে বসে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

;

কোটা আন্দোলনে উত্তাল শেকৃবি, আগারগাঁও-ফার্মগেট সড়ক অবরোধ



শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদের ছুটি শেষে আবারও কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও আগারগাঁও-ফার্মগেট সড়ক অবরোধ করেছে রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।‌

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি উত্থাপন করে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, এটা কোন ব্যক্তির আন্দোলন নয়, প্রতিটি শিক্ষার্থীর আন্দোলন, সারা দেশের আন্দোলন। আজকে যদি দেশে যে মেধাগুলো আছে সেই মেধাগুলো কাজে না লাগে, মেধাগুলোর যে যোগ্য স্থানে যাওয়া উচিত সেখানে না যেতে পারে, অযোগ্য লোক যদি দেশের যোগ্য স্থানে চলে যায়, গোটা দেশ তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের মেধা যেন কাজে লাগে, দেশ যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায়, সেই লক্ষ্যেই আমাদের এ আন্দোলন। যতদিন না আমরা সফল হয়, ততদিন আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

পরে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রদক্ষিণ করে সেকেন্ড গেট সংলগ্ন আগারগাঁও-ফার্মগেট সড়কে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে ১০ মিনিট আগারগাঁও-ফার্মগেট সড়ক প্রতীকী অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এতে আগারগাঁও থেকে বিজয় স্মরণী পর্যন্ত দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা “উড়ছে পাখি দিচ্ছে ডাক, কোটা প্রথা নিপাত যাক”, “যুদ্ধ হবে আরেকবার, করবো কোটা সংস্কার”, “কোটা বৈষম্য দূর কর, নইলে বুকে গুলি কর”, “আমার দেশ আমার মা, বৈষম্য মানি না” সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

;

কোটা বহালের প্রতিবাদে জবিতে দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ



জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কোটা বহালের প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ/ছবি: বার্তা২৪.কম

কোটা বহালের প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার ও আদালত কর্তৃক ২০১৮ সালে জারিকৃত পরিপত্র বাতিলের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠাল তলার সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মূল ফটক হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে। পরবর্তীতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের রাস্তা অবরোধ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসাইন মুন্না বলেন, আমাদের দাবি, ২০১৮ সালের কোটার পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডে কোটা প্রয়োগের আমূল সংস্কার করতে হবে। এছাড়া একই কোটা বারবার প্রয়োগের বিষয়টি বাতিল করতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর যে দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কর্মহীন, সেখানে এই ধরণের কোটা প্রথা রীতিমতো বৈষম্য।

এ সময় আন্দোলনকারীরা ৪ দফা দাবি উল্লেখ করেন। দাবিগুলো হলো: ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

;