জাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী গানের মিছিল
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী গণহত্যা, গণগ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়ের; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের মুক্তির দাবিতে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের ওপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় প্রতিবাদী গানের মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে সংহতি জানিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১২জন শিক্ষক অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি প্রতিবাদী গানের মিছিল বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরনো ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে অবস্থান নিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়৷ পরবর্তীতে মিছিলটি একই পথে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়৷ মিছিল শেষে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া একই দাবিতে একই স্থানে ‘পারফরমেন্স আর্ট’ পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷
সমাবেশে বক্তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতারকৃত সকল শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। এছাড়া বক্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ওপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যে ত্রাস এবং ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র-জনতা সেই ভয়কে জয় করেছে। তারা এখন বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে জানে। এই যে সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে সমস্ত কর্তৃত্ববাদকে অকার্যকর করে দিয়ে আজকে নতুন করে আমাদের স্বাধীন হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে, ছাত্ররাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেটি শুরু করেছিল। এখন শুধু ছাত্ররা না যাদের সন্তান প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে তারা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। এ আন্দোলনে ষড়যন্ত্র খুঁজে কোন লাভ নেই। আমাদেরকে নতুন করে নতুন পথ সৃষ্টি করতে হচ্ছে৷
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, পুরো বাংলাদেশ আজ শিক্ষাঙ্গণ। সবাই সরকারের চাল বুঝে গিয়েছে, ‘দিনে নাটক, রাতে আটক’ খেলা খেলছে তারা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, আমরা তাদের মুক্তি চাই। আর না হলে যেখানে তাদের আটকে রাখা হয়েছে, আমরা সেখানে আসবো। এর জন্য যে সমস্যা হবে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, আপনি এখনও মিথ্যা বলছেন, মিথ্যা বলতে বলতে আপনি সারা বিশ্বকে জানিয়েছেন আপনি একটা মিথ্যুক। আপনি যে কান্না করেন তাকে বিশ্ব মিডিয়া ‘ক্রোকোডাইল টিয়ারস’ বলে আখ্যায়িত করেছে। আপনার লজ্জা থাকা উচিত ক্রমাগতভাবে বিশ্বমিডিয়া আপনাকে যা বলছে আপনি তা বুঝছেন না।
বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নাহিদ কায়সার বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা তাদের কিছু দাবি নিয়ে পথে নেমেছিলো। সংগত কিংবা অসংগত দাবি যাই হোক তাদের দাবিগুলো শোনার সময় দেওয়া উচিত ছিলো। তবে উল্টো তাদের ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। আমি একজন শিক্ষক ও একজন অভিভাবক হিসেবে এই আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা ন্যায় পাক, শিক্ষার্থীসহ সকল শহীদদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার হোক৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল (বুধবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষিকাকে পুলিশ লাঞ্ছিত করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বাসভবনে বোমা হামলা হয়েছে। এমনকি বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কিছু শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাই।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. শওকত হোসেন, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান প্রমুখ।