দীর্ঘ ১৫ বছরের 'অবৈধ বস্তি' সমস্যা সমাধানের পথে শেকৃবি
রাজধানীর বুকে ৮৭ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। গণভবনের পাশে এবং ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০ একরের অধিক জায়গা জুড়ে রয়েছে অবৈধ বস্তি যা দীর্ঘ ১৫ বছরে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন।
তবে দীর্ঘ এই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ সংস্কারের জন্য অবৈধ এই বস্তি স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সদ্য নিযুক্ত প্রশাসন।
গত ২০ আগস্ট অবৈধ বস্তি উচ্ছেদের প্রেক্ষিতে বস্তিতে থাকা লোকজনকে সাধারণ আল্টিমেটাম দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে গত শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বস্তি উচ্ছেদের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সদ্য নিযুক্ত উপাচার্য এবং প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও কার্যনীতি গ্রহণ করার বিষয়ে দাবি জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বস্তি উচ্ছেদের বিষয়ে সম্মত হয় এবং উচ্ছেদের বিষয়ে সর্বাত্মক কার্যক্রম শুরু করেন।
এবিষয়ে শেকৃবির প্রক্টোরিয়াল বডি ও অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল বাসার এবং ড. মো.তাজুল ইসলাম বলেন, বস্তি উচ্ছেদের বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে বস্তির পুরো জায়গা জুড়ে মাইকিং করে তাদের অবহিত করা হয়েছে। বেঁধে দেয়া সময় শেষ হলে আমরা বস্তি উচ্ছেদে সর্বাত্মক কার্যকারিতায় যাবো। এক্ষেত্রে অবৈধ কাউকে আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। বস্তি উচ্ছেদের বিষয়ে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
মূলত অবৈধ এই বস্তিতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের মানুষ বসবাস করে যা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। বহিরাগত এসব ভাড়াটিয়াদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি মাদক সেবন ও বিক্রির কাজে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন সময়ে এদের অনেকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ইভটিজিং করার অভিযোগও রয়েছে। তবে আওয়ামী সরকারের সময়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রভাব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে অবৈধ এই বস্তি ক্যাম্পাস থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে মো. আশিক আহমেদ বলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি বিদ্যাপীঠ। টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় গবেষণার জন্য এখানে প্রচুর জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে দীর্ঘদিন থেকে এখানে অবৈধ স্থাপনা করে লোকজন বসবাস করছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ নষ্ট করছে। তাছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির অবৈধ লাইন নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এসকল অবৈধ বস্তি উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি যার কার্যকারিতায় প্রশাসন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছে। আশাকরছি আমরা সম্পূর্ণ ভাবে এই সমস্যা থেকে অতিদ্রুত মুক্ত হতে পারবো।
এবিষয়ে অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল ফায়াজ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক পরিবেশের সুরক্ষার কথা বিবেচনায় বস্তি থাকার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও এখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের অনেক মানুষ ভাড়ায় থাকে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার সাথে এবিষয়টি সাংঘর্ষিক। যদিও গত ১৫ বছরের দীর্ঘ সময়ে আমরা বস্তি উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হইনি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা যে দাবি তুলেছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তবে এসকল জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে। তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং তাদের জন্য পরিচ্ছন্ন আবাসস্থল নিশ্চিত করেই সামগ্রিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার পরে আশাকরছি অতদ্রুতই আমাদের ক্যাম্পাস এই অবৈধ আবাসস্থল মুক্ত হবে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্তি সমস্যা নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দীর্ঘদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এই সমস্যার ভুক্তভোগী ছিলো। আমরা প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যে এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ক্যাম্পাস সংস্কার এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের দিকে আমাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার থাকবে। ইনশাআল্লাহ দ্রুত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গঠনমূলক পরিবর্তন দেখতে পারবে।