জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন অনুষদের দুর্নীতিগ্রস্ত ২ শিক্ষকের চাকরি থেকে অব্যাহতি, অনুষদের আলাদা একাডেমিক ভবন, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিনব্যাপী অনশন করেছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে সারদিন ধরে স্থবির ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম৷
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বেলা ১টা থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ শুরু হয়৷ পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার ভবন ত্যাগ করে৷
পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুরাতন ফজিলাতুন্নেছা হলের গেইটের তালা ভেঙ্গে ’আইন অনুষদের জন্য জায়গা নির্ধারিত হলো, আইন অনুষদের ঠিকানা' লিখা সম্বলিত ব্যানার টাঙ্গিয়ে সে স্থানটি দখল করে৷
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর ৫ দফা দাবি উল্লেখ করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা৷ পরে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সাথে শিক্ষার্থী আলোচনায় বসলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৭ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। এদিকে ৭ দিন শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় অবরোধের ডাক দেয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো শিক্ষক অধ্যাপক জনাব তাপস কুমার দাস এবং সহযোগী অধ্যাপক জনাব সুপ্রভাত পাল কে অবিলম্বে চাকুরি থেকে অব্যাহতি; আইন অনুষদের নিজস্ব অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে এবং বিভাগকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের আওতায় নিয়ে আসতে হবে; স্বেচ্ছাচারি আচরণের মাধ্যমে তৈরিকৃত ২০২১ সাল হতে অনুষ্ঠিত বর্তমান ৪৯, ৫০ ও ৫১ তম আবর্তনের সকল পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়ন; বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে; আইন অনুষদের ক্লাসের জন্য পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল (আল বেরুনি এক্সটেনশন) আইন অনুষদের নামে বরাদ্দ দিতে হবে।
এসময় বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরশাদুল হক বলেন, আমরা প্রায় দীর্ঘ দুইমাস যাবৎ আমাদের কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছি, প্রশাসনের সাথে আমরা বেশ কয়েকবার মিটিং করেছি কিন্তু তারা শুধু সময় নিয়েই যাচ্ছে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারই পেক্ষিতে আমরা আজকে এখানে অবরোধ করেছি। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি আজকের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তদন্ত কমিটি ঘঠন করা হয়৷
বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাইবা জাফরিন নুভা বলেন, প্রায় ৫৩ দিন আমাদের ক্লাস বন্ধ। আমাদের দাবিগুলো প্রশাসনকে বারবার জানিয়ে আসলেও তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই আমাদের দাবি আদায়ের জন্য আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।
শিক্ষক অধ্যাপক জনাব তাপস কুমার দাস এবং সহযোগী অধ্যাপক জনাব সুপ্রভাত পালের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আনিত অভিযোগগুলো হলো- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের হেনস্থা, তাদেরকে দুষ্কৃতিকারী হিসেবে আখ্যা দেওয়া, শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, টুপি, বোরকা ও পর্দা করলে তাদের নানাভাবে হেনস্তা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাথে বিরুপ আচরণ, পরিকল্পিতভাবে কম নাম্বার দেওয়া ইত্যাদি৷
এদিকে জনসংযোগ কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আইন ও বিচার বিভাগে বিরাজমান সমস্যা ও সঙ্কট চিহ্নিত করে নিরসনের জন্য উপাচার্যের নিকট সুপারিশ পেশ করেছেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান প্রতিবেদনে আইন ও বিচার বিভাগের দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজমান সমস্যা ও সঙ্কট চিহ্নিত করে তা নিরসনের জন্য সুপারিশ তুলে ধরেছেন। মাত্র ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রস্তুতকৃত এ প্রতিবেদনে আইন ও বিচার বিভাগের ওপর সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনে অবস্থিত অপরাপর বিভাগের সহমর্মিতা ও সমবেদনার তথ্য তুলে ধরে এ বিভাগের শ্রেণি কক্ষ সঙ্কট দূর করতে তাদের সহযোগী মনোভাব তুলে ধরেছেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রকাশিত ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন নিমিত্তে ২টি তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছেন বলেও জানিয়েছে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)।