র্যাগিং, চাঁদাবাজি ও নানা অনিয়মের দায়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদ মোবাররাতসহ ২০ নেতাকর্মীকে শাস্তি দিয়েছে কলেজ প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রামেকের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন রামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সাল আলম।
রামেক অধ্যক্ষ বলেন, শাস্তি হিসেবে রামেকের ৬১ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাশিদ মোবাররাতকে ছয় মাসের জন্য ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত ও হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিগত সরকারের আমলে চাঁদাবাজি, র্যাগিং, অন্যদের নির্যাতন করাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে ছিল। দীর্ঘ এক মাস ধরে তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যতটুকু জানতে পারছি বিগত সরকারের রাজনৈতিক ইন্ধনেই এসব হয়েছে। মোট ৪২ থেকে ৪৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। কিন্তু তদন্ত করে বাকিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় নি। তাই শুধু ২০ জনকেই বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
আড়াই মাস পর বুধবার (২ অক্টোবর) খুলছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ডাইনিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ড. মো. কামারুজ্জামান ও ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক ড. মো. তানজিউল ইসলাম।
জানা যায়, গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদের নিহতের ঘটনায় রংপুর সহ সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠলে ওই দিন রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে ডাইনিং বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে জুলাইয়ের শুরু থেকেই বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া।
এইদিকে গত ২৯ অক্টোবর থেকেই মেয়েদের হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ডাইনিং চালু হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ডাইনিং চালুর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন অনুষদের দুর্নীতিগ্রস্ত ২ শিক্ষকের চাকরি থেকে অব্যাহতি, অনুষদের আলাদা একাডেমিক ভবন, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিনব্যাপী অনশন করেছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে সারদিন ধরে স্থবির ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম৷
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বেলা ১টা থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ শুরু হয়৷ পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার ভবন ত্যাগ করে৷
পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুরাতন ফজিলাতুন্নেছা হলের গেইটের তালা ভেঙ্গে ’আইন অনুষদের জন্য জায়গা নির্ধারিত হলো, আইন অনুষদের ঠিকানা' লিখা সম্বলিত ব্যানার টাঙ্গিয়ে সে স্থানটি দখল করে৷
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর ৫ দফা দাবি উল্লেখ করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা৷ পরে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সাথে শিক্ষার্থী আলোচনায় বসলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৭ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। এদিকে ৭ দিন শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় অবরোধের ডাক দেয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো শিক্ষক অধ্যাপক জনাব তাপস কুমার দাস এবং সহযোগী অধ্যাপক জনাব সুপ্রভাত পাল কে অবিলম্বে চাকুরি থেকে অব্যাহতি; আইন অনুষদের নিজস্ব অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে এবং বিভাগকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের আওতায় নিয়ে আসতে হবে; স্বেচ্ছাচারি আচরণের মাধ্যমে তৈরিকৃত ২০২১ সাল হতে অনুষ্ঠিত বর্তমান ৪৯, ৫০ ও ৫১ তম আবর্তনের সকল পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়ন; বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে; আইন অনুষদের ক্লাসের জন্য পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল (আল বেরুনি এক্সটেনশন) আইন অনুষদের নামে বরাদ্দ দিতে হবে।
এসময় বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরশাদুল হক বলেন, আমরা প্রায় দীর্ঘ দুইমাস যাবৎ আমাদের কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছি, প্রশাসনের সাথে আমরা বেশ কয়েকবার মিটিং করেছি কিন্তু তারা শুধু সময় নিয়েই যাচ্ছে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারই পেক্ষিতে আমরা আজকে এখানে অবরোধ করেছি। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি আজকের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তদন্ত কমিটি ঘঠন করা হয়৷
বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাইবা জাফরিন নুভা বলেন, প্রায় ৫৩ দিন আমাদের ক্লাস বন্ধ। আমাদের দাবিগুলো প্রশাসনকে বারবার জানিয়ে আসলেও তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই আমাদের দাবি আদায়ের জন্য আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।
শিক্ষক অধ্যাপক জনাব তাপস কুমার দাস এবং সহযোগী অধ্যাপক জনাব সুপ্রভাত পালের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আনিত অভিযোগগুলো হলো- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের হেনস্থা, তাদেরকে দুষ্কৃতিকারী হিসেবে আখ্যা দেওয়া, শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, টুপি, বোরকা ও পর্দা করলে তাদের নানাভাবে হেনস্তা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাথে বিরুপ আচরণ, পরিকল্পিতভাবে কম নাম্বার দেওয়া ইত্যাদি৷
এদিকে জনসংযোগ কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আইন ও বিচার বিভাগে বিরাজমান সমস্যা ও সঙ্কট চিহ্নিত করে নিরসনের জন্য উপাচার্যের নিকট সুপারিশ পেশ করেছেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান প্রতিবেদনে আইন ও বিচার বিভাগের দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজমান সমস্যা ও সঙ্কট চিহ্নিত করে তা নিরসনের জন্য সুপারিশ তুলে ধরেছেন। মাত্র ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রস্তুতকৃত এ প্রতিবেদনে আইন ও বিচার বিভাগের ওপর সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনে অবস্থিত অপরাপর বিভাগের সহমর্মিতা ও সমবেদনার তথ্য তুলে ধরে এ বিভাগের শ্রেণি কক্ষ সঙ্কট দূর করতে তাদের সহযোগী মনোভাব তুলে ধরেছেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রকাশিত ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন নিমিত্তে ২টি তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছেন বলেও জানিয়েছে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)।
ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করা গুলিতে ১ পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়৷ এরই প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে৷ এ সময় সড়কের উভয় লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিষেবার যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করে দুপুর ২টায় এ কর্মসূচি শেষ করে শিক্ষার্থীরা৷
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধকালে শিক্ষার্থীদের- শ্রমিক হত্যা কেন, ড. ইউনুস জবাব চাই; রাস্তায় শ্রমিক মরে, ইউনূস কি করে; পোষাক শ্রমিক রাস্তায় মরে, ইউনূস কি করে; ছাত্র-শ্রমিক জনতা, গড়ে তোলো একতা; জ্বালো রে জ্বালো, হত্যাকারীর গদিতে আগুন জ্বালো ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে কোনো সাধারণ শ্রমিকের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার পতনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা করা হয়েছে, শ্রমিকরাও সেটির অংশীদার। শ্রমিকরাও এই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে আন্দোলনে শক্তি যুগিয়েছিল৷
অবরোধ কর্মসূচিতে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরন এহসান বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ যখন হামলা করে তখন এই শ্রমিকেরা ছাত্রদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। আজ যখন তারা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে, সেনাবাহিনী তাদের অন্যায়ভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
এসময় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের যতখানি অংশগ্রহণ ছিল শ্রমিকদের ঠিক ততোখানি। কখনো কখনো শ্রমিকরা অগ্রভাগে ছিলেন এবং জীবন দিয়েছেন৷ কাজেই সেই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন সরকারের হাতে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকরা খুন হচ্ছে সেটি আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষোভের। আমরা কড়া হুঁশিয়ারি দিতে চাই, সরকার যদি ভাবে শ্রমিকদের দমিয়ে রাখবে তাহলে দরকার হলে ছাত্ররা শ্রমিকদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে পাশে থাকবে৷
প্রসঙ্গত৷ গতকাল আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে কাউসার নামের এক শ্রমিক নিহত এবং অন্তত ৫ জন আহত হন৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলী ।
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার পরিদর্শনে এসে তিনি একথা বলেন। এসময় তিনি লাইব্রেরির বিভিন্ন কর্ণার ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
বেরোবি উপাচার্য জানান, শিক্ষার্থীদের বসার স্পেস বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনকে দুইতলা থেকে চারতলায় সম্প্রসারিত করা হবে। তিনি আগামী দিনে এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নতুন বই-জার্নালসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কথাও বলেন।
এসময় সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের গ্রন্থাগারিক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান, উপ-গ্রন্থাগারিক মামদুদুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।